দিনভর পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

27
পরিবহন ধর্মঘট চলাকালে দুর্ভোগ নিয়েই সাধারণ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কর্মস্থল ও প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। ছবি- রেজা রুবেল

স্টাফ রিপোর্টার :
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঘোরী মো. ওয়াসিম আব্বাসকে বাস থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার সাথে জড়িত বাস চালক জুয়েল আহমদ ও সহকারী মাসুক আলীর বিরুদ্ধের দায়ের করা মামলার ধারা পরিবর্তনসহ ৭ দফা দাবিতে সিলেটে কর্মবিরতি পালন করছে সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশন। গতকাল সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট পালন করেন তারা।
ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো রুটে বাস ছেড়ে যায়নি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা। ধর্মঘটের কারণে সকাল থেকে নগরীতে চলাচলের ক্ষেত্রে একমাত্র বাহন হিসেবে রিক্সার আধিক্য দেখা গেছে। তাছাড়া মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটগাড়িও চলাচল করতে দেখা যায়। তবে দিনে কোনো সিএনজি অটোরিক্সা চলাচল করতে না পারলেও সন্ধ্যার পর থেকে নগরীতে চলাচল করতে দেখা গেছে।
এর আগে গত শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে শেরপুরে দুর্ঘটনায় সিকৃবির ছাত্র নিহতের ঘটনায় মৌলভীবাজার থানায় দায়ের করা হত্যা মামলার ধারা পরিবর্তনসহ ৭টি দাবি তুলে ধরেন তারা।
শ্রমিকদের দাবিগুলো হলো- ২৩ মার্চ মৌলভীবাজার থানায় দুর্ঘটনা মামলা নং-২২ (৩)১৯ থেকে দন্ডবিধি ৩০২ এর স্থলে ৩০৪ ধারা লাগাতে হবে, সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ১০৫ ধারায় জরিমানার পরিমাণ ৫ লাখ টাকার পরিবর্তে ৫০ হাজার টাকা করতে হবে, এই আইনে ৮৪, ৯৮ ও ১০৫ ধারাকে জামিনযোগ্য করতে হবে, এই আইনের ৮৪ ও ৯৮ পৃথক ধারা দুটিতে জরিমানা ৩ লাখের স্থলে ৩০ হাজার করে করা, জটিল দুর্ঘটনা তদন্ত সাপেক্ষে ধারা নির্ধারণ এবং তদন্ত কমিটিতে শ্রমিক প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করা। এক জেলার গাড়ি অন্য জেলায় রিকুইজিশন করা যাবে না, সড়ক মহাসড়কে চেকিং এর নামে যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে পুলিশি হয়রানি, কথায় কথায় পুলিশ কর্তৃক রং পার্কিং-এর নামে হয়রানি, রেকারিং-এর নামে পুলিশের চাঁদাবাজি ও সেতুতে টোল আদায় বন্ধ করতে হবে।
শ্রমিক নেতারা জানিয়েছেন, তাদের এই দাবি মানা না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের আহ্বান করা হবে।
এ ব্যাপারে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সিলেট বিভাগীয় শাখার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সেলিম আহমদ ফলিক জানিয়েছেন, দাবি আদায়ে গতকাল সোমবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সর্বস্তরের পরিবহন শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। সড়কে কোনো পিকেটিং হয়নি। তিনি বলেন, কর্মবিরতি চলাকালে সংবাদপত্রবাহী গাড়ি, এ্যাম্বুলেন্স ও প্রাইভেট গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক ছিল।
এদিকে, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ধর্মঘটের ফলে সিলেটের যাত্রীদের ভরসা ছিল একমাত্র ট্রেন। তাই সকাল থেকেই সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে দেখা গেছে সাধারণ যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়। সকাল থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্ত:নগর কালনী, জয়ন্তিকা, পাহাড়িকা তিনটি ট্রেনই ছেড়েছে কয়েকগুণ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে। বিকেল ৩টায় ছেড়ে যাওয়া পারাবত এক্সপ্রেসের জন্যও অপেক্ষায় স্টেশনে বসে থাকতে দেখা গেছে হাজারো যাত্রী।
এ ব্যাপারে সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের অতিরিক্ত ম্যানেজার শহীদুর রহমান বলেন- ধর্মঘট চলায় সোমবার সকাল থেকে ট্রেনের যাত্রীসংখ্যা কয়েকগুন বৃদ্ধি পায়। সকালে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো কয়েকগুণ অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে গেছে। এছাড়াও স্টেশনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় ছিল লক্ষ্যণীয়। তিনি আরো বলেন- নিয়মমত বগি নিয়েই ধর্মঘটের দিনে সেবা দিয়েছে ট্রেন। কোন অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত করা হয়নি।