গোলাপগঞ্জে রাইজার ট্র্যাজেডি ॥ দুই’দিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে না ফেরার দেশে অগ্নিদগ্ধ আরো একজন

42

সেলিম হাসান কাওছার গোলাপগঞ্জ থেকে :
গোলাপগঞ্জে বজ্রপাতে গ্যাস রাইজার থেকে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় গুরুতর আহত বাবুল আহমদ (৪০) অবশেষে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। টানা দুই’দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। ঢাকার হাসপাতাল থেকে লাশ হয়ে ফেরা বাবুল আহমদের স্ত্রী তাহমিনা বেগম ও দুই’বছরের শিশু তাহসিন ওইদিন ঘটনাস্থলেই মারা যান। নিহতের স্বজনদের দাবী টাকার অভাবে অগ্নিদগ্ধ বাবুলের ঠিকমত চিকিৎসা না হওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে।
উল্লেখ্য গত শনিবার গভীর রাতে গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবন্দে বজ্রপাতে গ্যাস রাইজারে আগুন লেগে একই পরিবারের দুই’জনসহ পাঁচজন নিহত হন। এ সময় আরো দুইজন আহত হন। আহত দুই’জনের মধ্যে বাবুল আহমদ (৪০) এর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে ওসমানী মেডিকেল কলেজ থেকে রবিবার বিকেলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা মছকন্দর আলী (২৩) সুস্থ হয়ে ভাগ্যক্রমে ওইদিন বিকেলেই বাড়ী ফিরেন। নিহতদের স্বজনরা জানিয়েছেন সেবু বেগম (২২) ও তাহমিনা (৩০) অন্তসত্তা ছিলেন। গত শনিবার রাত আড়াইটার সময় উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউপির ক্লাববাজার টিলা বাড়ী এলাকায় লয়লু মিয়ার কলোনীতে হালকা বৃষ্টি চলাকালিন সময়ে বজ্রপাতে গ্যাস রাইজারে আগুন লাগে। সাথে সাথে আগুনের লেলিহান শিখা কলোনির দুটি কক্ষে ছড়িয়ে পড়ে। এসময় নিহত আহতরা ঘুমে ছিলেন। নিহত ও আহত দু’একজনের চিৎকার শুনে স্থানীয়রা এগিয়ে এলেও আগুনের লেলিহান শিখা ছিল নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পরে গোলাপগঞ্জ থানা পুলিশের মাধ্যমে ফায়ার সার্ভিসের লোকদের খবর দেয়া হলে রাত সাড়ে ৩টায় ঘটনাস্থলে সিলেটের আলমপুর থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছায় এবং প্রায় ৩০মিনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় দুই’বছরের শিশুসহ পাঁচজনের লাশ উদ্ধার ও আহত ২জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে। পুলিশ নিহত পাঁচজনের লাশ থানায় নিয়ে আসে ও আহতদের সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। নিহতরা হলেন, লক্ষণাবন্দ ইউপির বুটিরার পাড়া গ্রামের মসকন্দর আলীর স্ত্রী সেবু বেগম (২২)-নিহত সেবু বেগমের পিতার বাড়ী শরিফগঞ্জ ইউপির পনাইরচক গ্রামে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউপির নোয়াই দক্ষিণভাগ চক গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী তাহমিনা বেগম (৩০), নিহত তাহমিনার দুই’বছরের শিশু সন্তান (তাহসিন)-নিহতের পিতার বাড়ী সিলেটের মোগলাবাজার থানার খালেরমুখ উত্তর চত্রিভাগ গ্রামে। গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষণাবন্দ ইউপির নোয়াই দক্ষিণভাগ গ্রামের শাহাব উদ্দিনের পুত্র ইয়া উদ্দিন (১৬),একই গ্রামের মৃত ইসরাইল আলীর পুত্র সেবুল আহমদ (১৭), আহতরা হলেন,নিহত তাহমিনার স্বামী বাবুল মিয়া (৪০) ও পনাইরচকের মছকন্দর আলী (২৩)। দুপুর ১টায় নিহতদের পরিবারের অনুরোধে ময়না তদন্ত ছাড়াই প্রত্যেকের স্বজনদের কাছে লাশ হস্তান্তর হয়। বিকাল ৫টায় একই সাথে ইয়া উদ্দিন (১৬),সেবুল (১৭),তাহমিনা (৩০) ও তাহমিনার দুই’বছরের শিশু সন্তান তাহসিনের লাশ লক্ষণাবন্দ ইউপির নোয়াই দক্ষিণভাগ চক গ্রামে জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয় ও বাদ আছর লক্ষণাবন্দ বুটিরার পাড়া এলাকায় সেবু বেগম (২২) এর লাশ জানাযা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়। এদিকে দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন সিলেটের নবাগত জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান। এ সময় তিনি প্রত্যেক নিহতদের পরিবারকে সরকারী তহবিল থেকে ১০হাজার টাকা অনুদান দেয়ার নির্দেশ দেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শরীফুল ইসলামকে।