রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন জরুরী

19

কক্সবাজারে এখন ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে, যা কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দাদের সংখ্যার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এর ফলে কক্সবাজারের প্রাকৃতিক পরিবেশে রীতিমতো বিপর্যয় নেমে এসেছে। আইন-শৃঙ্খলা, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা এবং সামাজিক পরিবেশেও তা বড় ধরনের হুমকির কারণ হয়ে উঠেছে। তদুপরি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এই রোহিঙ্গারা বাঁশের চাটাই বা পলিথিনের ঘরে যেভাবে বসবাস করছে, তাও সম্পূর্ণ অমানবিক। আসন্ন বর্ষায় বন্যা, জলোচ্ছ্বাস বা পাহাড়ধসের কারণে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয় ঘটারও আশঙ্কা রয়েছে। সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার কিছু রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছিল। তাতেও বাধা দিচ্ছে কিছু সাহায্য সংস্থা ও বিদেশি অর্থপুষ্ট কিছু এনজিও। তারা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে পরামর্শ দিচ্ছে কক্সবাজার থেকে কোথাও না সরার জন্য। গত নভেম্বরে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা ছিল। অভিযোগ আছে, তাদেরই পরামর্শে একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়নি। তাহলে এই রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান কোথায়? অনেকেই মনে করছেন, এই সংকটের কারণে বাংলাদেশকে চড়া মূল্য দিতে হতে পারে।
বিভিন্ন সময় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, পাশ্চাত্যের কিছু দেশ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য নিরাপদ অঞ্চল তৈরি করতে বলছে। এটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। এ ধরনের নিরাপদ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জাতিসংঘ বা অন্য কোনো দেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের প্রশ্নটিও জড়িত। মিয়ানমার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। প্রতিবেশী বড় দেশগুলোও তা চায় না। এমনকি আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোও একে সমর্থন করছে না। এ বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যা কখনো সম্ভব নয়। এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে থাকায় চীন এ ক্ষেত্রে ভেটো দিয়ে যাবে। ফলে মিয়ানমারে কখনো নিরাপদ অঞ্চল হবে না। সে ক্ষেত্রে রোহিঙ্গারা কি কখনো ফিরে যাবে না? জাতিসংঘ বা পাশ্চাত্যের দেশগুলো বারবারই বলছে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সেই পরিবেশ তৈরির জন্য তারা কি কিছু করছে? মিয়ানমারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টির কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কি? উল্টো তারা বাংলাদেশের ওপরই চাপ সৃষ্টি করছে, রোহিঙ্গাদের শরণার্থীর মর্যাদা দিতে হবে, তাদের কর্মসংস্থান বা আয়-উপার্জনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে, রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে—আরো কত কি? সর্বোপরি তাদের কক্সবাজারেই রাখতে হবে। কেন? এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কি?
বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার কথা বাংলাদেশকেই ভাবতে হবে। কক্সবাজারে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে রোহিঙ্গাদের কোনো গোষ্ঠী যদি অন্যায় কোনো দাবি তোলে কিংবা নিজস্ব আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার কথা বলে, তাহলে সেই পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হবে কিভাবে? তখন বলপ্রয়োগ করা হলে তা কি বাংলাদেশের সুনাম বাড়াবে? চীন, রাশিয়া ও ভারত বারবারই দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের কথা বলেছে। আমরাও মনে করি, সেটাই হবে সবচেয়ে যৌক্তিক বিষয়। এই সংকটের কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে। সম্পর্কের আরো অবনতি হোক এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।