ভারতের নির্বাচন ॥ দ্বিতীয় দফায় বাড়ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সংখ্যা

27

কাজিরবাজার ডেস্ক :
ভারতের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফায় ভোটগ্রহণ ছিল বেশ বৈচিত্র্যপূর্ণ। ইভিএম ভাংচুর, সংঘর্ষ, সহিংসতাসহ নানামুখী অভিযোগ, উত্তেজনার আবহে ঘটনাবহুল প্রথম দফার ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ২০ রাজ্যের ৯১ আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। রাজ্যগুলো হচ্ছে অন্ধ্র প্রদেশ, অরুণাচল প্রদেশ, অসম, বিহার, ছত্তিশগড়, জম্মু ও কাশ্মীর, মহারাষ্ট্র, মনিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, উড়িষ্যা, সিকিম, তেলেঙ্গানা, ত্রিপুরা, উত্তর প্রদেশ, উত্তরাখ-, পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লক্ষদ্বীপ। এদিকে ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার ভোটে বাড়ছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা। ভোটের প্রথম দিনে উৎসাহ নিয়েই ভোট দিতে দেখা গেছে ভোটারদের। বাইসাইকেলে চড়ে, ট্রেকিং করে, ট্রাক্টর চালিয়ে বিভিন্নভাবে ভোটকেন্দ্রে এসেছে মানুষ। শিশু কোলে ভোট দিতে আসেন গৃহবধূরা। এদিন সকাল থেকেই ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে লাইন ধরে দাঁড়াতে শুরু করে ভোট দেয়ার জন্য। ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বিকেল তিনটার মধ্যেই বেশিরভাগ রাজ্যে ভোট দেন অর্ধেকের বেশি ভোটার। পশ্চিমবঙ্গে ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি, ৭০ শতাংশ। তবে কিছু কিছু জায়গায় ভোটাররা ভোটার তালিকায় নাম না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তেলেঙ্গানায় অনেক ভোটার তালিকায় নাম না থাকার অভিযোগ করেছে। উত্তর প্রদেশের বাঘপাতেও বহু মুসলিম এবং দলিত ভোটারের কাছ থেকে তালিকায় নাম না থাকার অভিযোগ এসেছে। পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ার দুই কেন্দ্রেই সকালের দিকে বেশ কিছু বুথে ইভিএম খারাপ এবং বিক্ষিপ্ত কিছু অশান্তি ছাড়া ভোটগ্রহণ মোটামুটি শান্তিপূর্ণ হয়েছে। আবার কয়েকটি জায়গায় সহিংসতায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়েছে। অন্ধ্র প্রদেশে ভোটকেন্দ্রগুলোতে সহিংসতায় অন্তত দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এছাড়া, উত্তর প্রদেশ, ছত্তিশগড়েও নির্বাচনী সহিংসতা ঘটেছে। দিনহাটা, সীতাই, শীতলকুচি এলাকায় ভোটগ্রহণ ঘিরে সারাদিনই উত্তেজনা ছিল। কোথাও কোথাও তৃণমূল ও বিজেপি কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতিও হয়। বিজেপির অভিযোগ, দিনহাটা, সীতাই, শীতলকুচির অধিকাংশ বুথেই কেন্দ্রীয় বাহিনী ছিল না। নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন রাজ্য পুলিশের কর্মীরা। ভোটের পরও পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহারে উত্তেজনা কাটেনি। বিজেপি প্রার্থী নিশীথ প্রামাণিকের অবস্থান বিক্ষোভ ঘিরে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। বিজেপি প্রার্থী এবং তার সমর্থকরা অনড় ছিলেন। অন্যদিকে, পুলিশ-প্রশাসন তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। নিশীথের অভিযোগ, যেসব বুথে রাজ্য পুলিশ মোতায়েন ছিল, সেখানে অবাধে ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূল। তাই দেড় শতাধিক বুথে পুনর্র্নিবাচন করতে হবে। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলও পাল্টা দাবি করে বলেছে, বেশ কয়েকটি বুথে বিজেপি ছাপ্পা ভোট দিয়েছে। যদিও পরে রিটার্নিং অফিসারের আশ্বাসে অবস্থান তুলে নেন বিজেপি প্রার্থী। তবে কোচবিহারের বিজেপি প্রার্থীর পর রাতে বামেরাও পুনর্র্নিবাচনের দাবি তুলেছেন বলে জানা গেছে। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে ১৭০ টি বুথে পুনর্নিবাচনের দাবি জানানো হয়েছে। দুটি বুথে পুনর্র্নিবাচনের দাবি জানিয়েছে তৃণমূলও। নির্বাচন কমিশন কোন দলকেই তাদের দাবির ব্যাপারে আশ্বস্ত করেনি। অভিযোগ খতিয়ে দেখেই সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। অন্ধ্র প্রদেশ এবং নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যগুলোতে একদিনেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। তবে উত্তর প্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে কয়েকটি ধাপে ভোটগ্রহণ চলবে। ভারতজুড়ে দ্বিতীয় দফার ভোটগ্রহণ হবে ১৮ এপ্রিল। এর পর ২৩ এপ্রিল তৃতীয় দফা, ২৯ এপ্রিল চতুর্থ দফা, ৬ মে পঞ্চম, ১২ মে ষষ্ঠ দফা ভোট অনুষ্ঠিত হবে। ১৯ মে-তে শেষ হবে সাত দফার ভোটগ্রহণ। ২৩ মে ভোট গণনার পর ফল ঘোষণা করবে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। সরকার গঠনের জন্য ২৭২টি আসনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হবে যে কোন দলকে।
দ্বিতীয় দফায় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ছে : প্রথম দফার থেকে দ্বিতীয় দফায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা একটি বাড়ছে। আর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আঁটসাট করতে তার সঙ্গেই পাল্টা দিয়ে বাড়ছে কেন্দ্রীয় বাহিনীর সংখ্যা। দ্বিতীয় দফার ভোটে ব্যবহার করা হবে এক শ’ কোম্পানির বেশি আধাসেনা। এমনটাই জানা গেছে কমিশন সূত্রে। দ্বিতীয় দফার ভোটে বাইরে থেকে আনা হচ্ছে আরও ৪০ কোম্পানি বাহিনী। ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দফায় ভোট। ওই দিন পাহাড়ে দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে ভোট। সে সঙ্গে সমতলে জলপাইগুড়ি ও রায়গঞ্জে ভোট। উল্লেখ্য, দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রটি নিয়ে যুযুধান তৃণমূল-বিজেপি। সে সঙ্গে ২০১৭-য় মোর্চা বিক্ষোভে উত্তপ্ত দার্জিলিংয়ের ছবি এখনও টাটকা। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে মোর্চার বিক্ষোভে আগুন জ্বলেছিল পাহাড়ে। মোর্চার নেতৃত্বে হাতবদল ঘটেছে। কিন্তু, লোকসভা ভোটের ঢাকে কাঠি পড়তেই ফের গোর্খা ভাবাবেগকে উসকে দেয়ার চেষ্টা শুরু করে গুরুংপন্থী মোর্চা সদস্যরা। বৃহস্পতিবার কালিম্পংয়ের সভা থেকে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের পালে হাওয়া দেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহও।
রাশিয়ার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পাচ্ছেন মোদি : আরও একটি শিরোপা এলো প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঝুলিতে। এবার তার জন্য সম্মান এলো রাশিয়া থেকে। রাশিয়ার সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান পেতে চলেছেন তিনি। শুক্রবার রাশিয়ার পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করা হয়েছে। তাদের তরফে জানানো হয়েছে, সে দেশের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান অর্ডার অব সেন্ট এ্যান্ড্রু দেয়া হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। কেন এই সম্মান প্রধানমন্ত্রীকে দিচ্ছে রাশিয়া, তাও জানানো হয়েছে। সে দেশের দাবি, দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতিতে গত পাঁচ বছরে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। তাই তাকে এই সম্মান দেয়া হলো।