স্বামীর বাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে কানাইঘাট থানায় এক নববধূর অভিযোগ দায়ের

100

কানাইঘাট থেকে সংবাদদাতা :
কানাইঘাট উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ী ইউপির আগফৌদ নারাইনপুর গ্রামের এক নিরীহ পরিবারের মেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হওয়ার পর ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠার পর একই উপজেলার গোয়ালজুর ভাটরকোনা গ্রামের মৃত নাজিম উদ্দিনের ছেলে কাতার প্রবাসী আদনান আহমদ (২৭) কে ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক বিয়ে করার পর স্বামীর বাড়ির লোকজন কর্তৃক প্রতারণার ঘটনায় কানাইঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর এই নববধূ নিরীহ মেয়েটির বিরুদ্ধে মানহানিকর কু-রুচিপূর্ণ নানা ধরনের মিথ্যাচারের ঘটনায় স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযোগে জানা যায়, ফেসবুকের মাধ্যমে এক বছর পূর্বে আগফৌদ নারাইনপুর গ্রামের আব্দুর রহমানের মেয়ে লুবাবা বেগমের সাথে কাতার প্রবাসী আদনান আহমদ এর পরিচয়ের মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আদনান তার পরিবার ও স্বজনদের লুবাবা বেগমের মোবাইল নাম্বার দিয়ে তার সাথে যোগাযোগ রাখার জন্য সবাইকে বলে। সেই সুবাদে আদনানের পরিবারের অনেক সদস্যদের সাথে লুবাবার কথা হতো। সম্প্রতি সময়ে প্রবাসে থাকা অবস্থায় আদনান লুবাবাকে বলে তাকে সে বিয়ে না করলে আত্মহত্যা করবে। একপর্যায়ে পরিবারের অনেকের সম্মতিক্রমে লুবাবা বেগমকে বিয়ে করার জন্য গত ১২ আগষ্ট প্রবাসে থাকা অবস্থায় আদনান তার ভাই লোকমান আহমদ ও তার এক বন্ধুকে দিয়ে স্থানীয় গাছবাড়ী বাজার থেকে সকাল ১১টার দিকে লুবাবা বেগমকে সিলেট শহরতলীর মেজরটিলাস্থ রজনীগন্ধা টাওয়ারে ভাড়া বাসায় রাখে। লুবাবা বেগমের কোন সন্ধান না পেয়ে তার পরিবারের লোকজন ও আত্মীয় স্বজনরা খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারেন লুবাবা বেগম রজনীগন্ধা টাওয়ারে একটি ফ্ল্যাটে রয়েছে। পরদিন ১৩ আগষ্ট সেখানে তার স্বজনরা গেলে প্রবাসী আদনান লুবাবা বেগমের পরিবারের সবার সাথে ফোনে কথা বলে জানায় সে লুবাবা বেগমকে বিয়ে করবে এবং যে বাসায় লুবাবা বেগম রয়েছে সেখানে থাকবে। লুবাবার পরিবারের সম্মতিক্রমে শাহপরাণ ও কানাইঘাট এলাকার অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে ১৩ আগষ্ট রাতে ৮ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্য করে কাজির মাধ্যমে আদনান ভিডিও কলের মাধ্যমে লুবাবাকে বিবাহ করে এবং নিকাহনামা রেজিষ্ট্রি করা হয় ও লুবাবাকে তার স্বজনরা নিজ বাড়িতে নিয়ে আসেন। বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর প্রবাসী আদনান আহমদ সপ্তাহদিন লুবাবার সাথে মোবাইল ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখে। লুবাবা বেগমের পরিবারের অভিযোগ আদনানের চাচাতো ভাই শাহপরাণ এলাকায় বসবাসরত আলম লুবাবা বেগমকে তালাক প্রদান করার জন্য আদনানকে চাপ প্রয়োগ করলে আদনানও প্রবাস থেকে লুবাবার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। এমনকি সে লুবাবাকে জানায় তাকে ডিভোর্স প্রদান করবে। তখন লুবাবা ও তার পরিবার বিষয়টি আদনানের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করলে তারাও লুবাবাকে আদনানের স্ত্রী হিসেবে কোন দিন স্বীকৃতি দিবে না মর্মে নানা ধরনের হুমকি ভয়ভীতি দেখায় এবং মিথ্যা মামলা দিয়া হয়রানী করবে মর্মেও প্রকাশ করে। এ ঘটনায় নিরীহ লুবাবার পরিবারের লোকজন এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করেন। তারা এ ব্যাপারে লুবাবা বেগমকে আইনের আশ্রয় নেয়ার জন্য বললে গত ৩ নভেম্বর লুবাবা বেগম বাদী হয়ে তার স্বামী আদনান আহমদ, দেবর লোকমান আহমদ, কামরান আহমদ, শ^াশুড়ী ছায়রা বেগম, ননদ মিনা বেগম, চাচাতো দেবর আলম, বোন জামাই আব্দুল্লাকে আসামী করে উল্লেখিত অভিযোগ এনে কানাইঘাট থানায় বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে থানার এস.আই রাজীব মন্ডল আদনান আহমদের গ্রামের গোয়ালজুর ভাটরকোনা গ্রামে তদন্তে যান, কিন্তু আদনানের পরিবারের সবাই শাহপরাণ এলাকায় বসবাস করার কারনে বাড়িতে কাউকে পাননি। এলাকার অনেকের সাথে এস.আই রাজীব মন্ডল কথা বলেন এবং আদনানের পরিবারের লোকজনদের সাথেও মোবাইল ফোনে কথা বলেন। লুবাবা বেগম থানায় অভিযোগ দায়েরের পর থেকে তাদের পরিবারের লোকজনদের অভিযোগ আদনানের পরিবারের লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও কিছু অনলাইন পোর্টালে লুবাবা বেগমের বিয়ের সময়ের ছবি যুক্ত করে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে মানহানিকর অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
নববধূ লুবাবা বেগম কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ভালোবেসে আদনানকে বিয়ে করেছি। এখন সে তার পরিবারের লোকজনের কারণে আমাকে তালাক দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। এমনকি তার পরিবারের লোকজন আমার বিরুদ্ধে নানা ধরনের মিথ্যা কাল্পনিক মানহানিকর কুৎসা রটাচ্ছে। আবার আদনান আমার সাথে যোগাযোগ রেখে কখনো ভালো ব্যবহার করছে, আবার কখনো খারাপ ব্যবহারও করছে।
লুবাবার পরিবারের লোকজন বলেন, লুবাবা একজন সহজ সরল মেয়ে, আদনান ভালোবাসার মাধ্যমে তাকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, লুবাবা বেগমের চরিত্র হরন করার জন্য যেসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে এতে তারা হতবাক হয়েছেন। একজন মেয়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের কুরুচিপূর্ণ জগন্য মিথ্যাচারের নিন্দা তারা জানান এবং বিষয়টি তদন্ত পূর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন।