বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী ॥ বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জিয়া ভাঁওতাবাজি করেছেন

53
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখছেন আওয়ামীলীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

কাজিরবাজার ডেস্ক :
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আর যেন বাংলার মাটিতে খুনী-সন্ত্রাসী, যুদ্ধাপরাধী-স্বাধীনতাবিরোধী, একুশ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাতকারীরা ক্ষমতায় আসতে না পারে। তারা আর যেন দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার যেন সমুন্নত থাকে। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা মানেই বঙ্গবন্ধু। তাই ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্যাপকভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী ২০-২১ ‘মুজিব বর্ষ’ পালনে এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৯তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি দেশবাসীর প্রতি এ আহ্বান জানান। তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। আমরা বাংলাদেশকে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলব। ইনশা আল্লাহ আমরাই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণ করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, সাবেক মন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন নেসা ইন্দিরা, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র আজমত উল্লাহ খান, ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমীন।
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন তুলতে পারেনি। ওই নির্বাচনে শতকরা ৮৪ ভাগ ভোট পড়েছিল। বিএনপি ওই নির্বাচনে মাত্র ২৮ আসন পেয়েছিল। আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ আসনে মেজোরিটি পেয়ে সরকার গঠন করে। ’১৪ সালের নির্বাচন বিএনপি-জামায়াত জোট ঠেকাতে চেয়েছিল, কিন্তু জনগণের তাদের প্রতিহত করেছিল। আর ’১৮ সালের নির্বাচনের সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ দেশে ধারাবাহিক যে অসামান্য উন্নতি করেছে, অর্থনীতি স্বাবলম্বী হয়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, তৃণমূল পর্যন্ত জনগণ উন্নয়নের সুফল ভোগ করছে, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস দমনে সরকার দৃঢ়ভাবে কাজ করেছে বলেই দেশের জনগণ বিপুল ভোটের ব্যবধানে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করেছে।
সরকারপ্রধান প্রশ্ন রেখে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে বিএনপি এবারও নির্বাচনে গেছে। আর নির্বাচনের আগে জিতলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন, তা তারা (বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট) দেখাতে পারেনি। কারণ হত্যা-দুর্নীতির কারণে তাদের নেতারা জেলে কিংবা বিদেশে পলাতক। নির্বাচনে ৮০ ভাগ ভোট পড়েছে। বিপুল ভোটে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। এবারের নির্বাচনে জামায়াত একটি আসনও পায়নি। নির্বাচনে তিনশ’ আসনের বিপরীতে যারা (বিএনপি-জামায়াত-ঐক্যফ্রন্ট) ৮শ’ প্রার্থী মনোনয়ন দেয়, তারা নির্বাচনে ভোট পাবে কী করে?
অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করতে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশে প্রথম নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছিল অভিযোগ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন নির্বাচন নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেন। অথচ স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুই নির্বাচন নিয়ে এমন এক পদ্ধতি চালু করেছিলেন, যাতে প্রার্থীরা খুব কম খরচে নির্বাচন করতে পারেন, তৃণমূলের জনপ্রিয় নেতারাই যেন নির্বাচিত হতে পারেন সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। ওই পদ্ধতিতে ছিল সরকারী খরচে একটিমাত্র পোস্টার হবে, সেখানে সব প্রার্থীর ছবি ও মার্কা থাকবে। নির্বাচন অর্থ ও লাঠির কাছে জিম্মি না হয় সেই জন্যই এ পদ্ধতি চালু করেছিলেন। এ পদ্ধতিতে দুটি নির্বাচনও হয়েছিল। যদি জাতির পিতা নির্বাচনের এই পদ্ধতি কার্যকর করে যেতে পারতেন তবে মাঠের জনপ্রিয় নেতারাই নির্বাচিত হতে পারতেন।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী সামরিক স্বৈরাচারের আমলে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, ’৭৫ পরবর্তী সংবিধান লংঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে নির্বাচনী ব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয় জেনারেল জিয়া। হ্যাঁ-না ভোট, রাষ্ট্রপতি ভোটের নামে অবৈধভাবে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে গঠিত দলকে দুই তৃতীয়াংশ আসনে বিজয়ী দেখানো হয়। কারণ সংবিধান সংশোধন করে জেনারেল জিয়া অবৈধ ক্ষমতা বৈধ করতে ওই এক তৃতীয়াংশ আসনেরই প্রয়োজন ছিল। বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে ভাঁওতাবাজি করে মূলত জিয়াউর রহমান কারফিউ গণতন্ত্র দিয়েছিল। জেনারেল জিয়ার ক্ষমতা দখল, জিয়ার পদাঙ্ক অনুসরণ করে পরবর্তী জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলেও এসব করা হয়। আর সামরিক স্বৈরাচারের আমলেই ঋণখেলাপী সংস্কৃতি, ঘুষ, দুর্নীতি ও ছাত্রদের হাতে অস্ত্র-মাদক তুলে দিয়ে বিপথে ধাবিত করা হয়। এই ধারা ’৯৬ সাল পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
নির্যাতিন ও নিপীড়িত বাঙালীর মনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা সৃষ্টি করেছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালী জাতি নির্যাতন ও নিপীড়ন সইতে সইতে তারা ভুলেই গিয়েছিল তাদের অধিকারের কথা। বঙ্গবন্ধু তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেছেন। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি আন্দোলনের জন্য জেলে গেছেন। তিনি নির্যাতিত বাঙালির মনে স্বাধীনতার আকাক্সক্ষা সৃষ্টি করেছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি।
সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের কথা তুলে ধরতে গিয়ে তার কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, খোকা নামের সেই ছোট্ট শিশুটির (বঙ্গবন্ধু) নাম আজ সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। তার একটিই কারণ, তিনি (বঙ্গবন্ধু) একটি জাতিকে বন্দীদশা থেকে মুক্ত করেছেন। গোটা জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে একটি দেশকে স্বাধীন করেছেন। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর একটিই লক্ষ্য ছিল গরিব, দুঃখী, মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো। আর এ লক্ষ্য অর্জনেই বঙ্গবন্ধু আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, নিরস্ত্র বাঙালী জাতিকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার জন্য বাঙালি জাতিকে সাহসী করে তুলেছিলেন।
আগামী বছর জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী ব্যাপকভাবে পালনের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ২০২০-২১ একটি বছর মুজিব বর্ষ হিসেবে পালন করব। বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকী রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশের ইউনিয়ন পর্যন্ত ব্যাপকভাবে পালন করা হবে। জন্মশতবার্ষিকী পালনে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ‘মুজিব বর্ষ’ পালনে এখন থেকেই সবাইকে প্রস্তুতি নিতে হবে। মুজিবের বাংলাদেশকে আমরা তার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবই ইনশা আল্লাহ।