সংসদীয় গণতন্ত্রে নতুন যাত্রায় জাতীয় পার্টি

42

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের বিপুল বিজয়ে একটি সংকটের আশঙ্কাও তৈরি হয়। সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে মহাজোট বিজয়ী হওয়ায় একটি কার্যকর বিরোধী দল সংসদে থাকছে না, এমন কথাও উচ্চারিত হতে দেখা গেছে। কারণ জাতীয় পার্টি মহাজোটেরই শরিক হিসেবে মন্ত্রিসভায় গেলে সংসদে কার্যকর কোনো বিরোধী দল থাকে না। সে ক্ষেত্রে বিরোধী দলের আসনে বসলে আবারও সেই বিরোধী দল হিসেবে তাদের আখ্যায়িত করা হতো। ওদিকে জাতীয় সংসদের সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পরও জাতীয় পার্টি প্রথম দিনে সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। গত শুক্রবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জানিয়ে দেন, নতুন সরকারের মন্ত্রিসভায় যোগ দিচ্ছেন না তাঁর দলের কোনো সংসদ সদস্য। জাতীয় সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকা নিতে চায় তাঁর দল। সে ক্ষেত্রে তিনি হবেন জাতীয় পার্টির পার্লামেন্টারি দলের সভাপতি ও প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা। দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের বিরোধী দলের উপনেতার ভূমিকায় থাকবেন। অন্যদিকে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে বিরোধী দলের প্রধান হুইপ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের স্পিকারের কাছে এসব সিদ্ধান্ত জানিয়ে একটি চিঠিও দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পার্টি তথা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাতে হবে।
সংসদীয় গণতন্ত্রে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। বিরোধী দল শক্তিশালী হলে সরকার সচেতন থাকে। সরকারি দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও বিরোধী দলের গঠনমূলক সমালোচনা সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত হতে বাধ্য করে। জাতীয় পার্টি এবারের নির্বাচনে ২২টি আসন পেলেও বিরোধী দল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা যদি রাখতে পারে, তা আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে। শুধু সংখ্যার দিক থেকে বিচার করলে চলবে না, দেখতে হবে সংসদে দলের ভূমিকা। সরকারের গঠনমূলক সমালোচনার মাধ্যমে সরকারকে সঠিক পথে থাকতে বাধ্য করতে পারে জাতীয় পার্টি। সে ক্ষেত্রে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকারি দলও তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক থাকবে। সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা ও ভালো কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি বিরোধী দল ইতিবাচক সমালোচনার মাধ্যমেও জনমত গড়ে তুলতে পারে। জাতীয় পার্টি এখন নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টির সুযোগ পেতে যাচ্ছে। সংসদে বিরোধী দল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারলে একাদশ জাতীয় সংসদ বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে নতুন এক দিগন্তের সূচনা করবে। সংখ্যায় অল্প হলেই যে অবহেলা করা যায় না, কোনো দল গুরুত্বহীন হয়ে যায় না, তা প্রমাণ করার সুযোগ এসেছে জাতীয় পার্টির সামনে। আমরা আশা করব, জাতীয় পার্টি দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রে নতুন মাত্রা যোগ করবে।