ছাতকে বটের খাল দখল নিয়ে আবারো সংঘর্ষের আশঙ্কা

51

ছাতক থেকে সংবাদদাতা :
ছাতকে বটের খাল দখল নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সালিশ বৈঠকে হাতাহাতির ঘটনাকে কেন্দ্র করে দু’গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘর্ষের পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যস্থতায় তাৎক্ষণিক উভয় পক্ষ সালিশ মেনে নিলেও একপক্ষ অপর পক্ষকে ঘায়েল করতে সুনামগঞ্জ আদালতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। যদিও অভিযোগটি এখনো মামলা হিসেবে গন্য হয়নি। সালিশি মুরব্বিদের অমান্য করে এক পক্ষ আদালতে অভিযোগ দায়ের করায় অপর পক্ষ অসন্তুষ্টি ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছে। এতে দু’গ্রামবাসীর মধ্যে আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
জানা যায়, রাউলী রূপালী মৎস্য সমবায় সমিতির সম্পাদক কলিন্দ্র বিশ^াস কর্তৃক বটের নদী প্রকাশিত বটের খালের কিছু অংশ লিজ গ্রহণ করে দীর্ঘদিন ধরে মাছ আহরণ করে আসছেন। এর মধ্যে ভুলবশত: সোনামপুর মৌজার ৮৪ নং দাগের কিছু অংশ লিজে অন্তর্ভুক্তি না হলেও চৌআদ্দাতে তিনি অংশিদার। কলিন্দ্র বিশ^াসের লিজকৃত কিছু অংশের ভোগাধিকারে রয়েছেন খাসগাঁও গ্রামের করম আলী মেম্বার। এ হিসেবে রাউলী রূপালী মৎস্য সমবায় সমিতি দীর্ঘদিন ধরে লিজের ন্যায় ওই অংশটুকুও দখলে রেখেছেন। কিন্তু সিংচাপইড় ইউনিয়নের সাতগাঁও গ্রামবাসী বটের নদী প্রকাশিত বটের খালের ওই অংশটুকু তাদের দখলে নেয়ার চেষ্টা চালায়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কলিন্দ্র বিশ^াসের লোকজন ও সাতগাঁও গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। এক পর্যায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য ৬ নভেম্বর স্থানীয় কুমারকান্দি দাখিল মাদরাসা মাঠে এক সালিশ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বটের নদী প্রকাশিত বটের খালের বিরোধকৃত অংশটুকু দখল পূর্বক মাছ আহরন করবে বলে সাতগাঁও গ্রামের ছাদ মিয়া তার মতামত ব্যক্ত করলে সালিশি ব্যক্তিত্ব কালিপুর গ্রামের রাখাল বাবু তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এ নিয়ে সাতগাঁওয়ের ছাদ মিয়া ও খাসগাঁওয়ের করম আলী পক্ষদ্বয়ের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনার কিছুক্ষণ পর খাসগাঁও বাজারের পূর্বের মাঠে দু’গ্রামবাসীর লোকজন তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষের কারণে সালিশ বৈঠকটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। প্রায় ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মহিলাসহ অর্ধশত মানুষ আহত হয়। সংঘর্ষে দেশিও অস্ত্র-শস্ত্রসহ বন্দুক দিয়ে একাধিক রাউন্ড গুলিও করা হয়েছে বলে করম আলী মেম্বার অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, খাসগাঁও গ্রামের মৃত মাফিক আলীর পুত্র আশ্রব আলী (৪৫) ও মৃত শরিয়তুল্লাহর পুত্র আতাউর রহমান (৩৫) গুলিবিদ্ধ হয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। সংঘর্ষে অবৈধ অস্ত্র বন্দুক দিয়ে গুলি করে তাদের দু’জনকে গুলিবিদ্ধ করা হলেও পুলিশ এসব অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে তৎপর নেই। কুমারকান্দি গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী মখছুছুর রহমান বলেন, বাড়ি থেকে তিনি ৩/৪টি বন্দুকের গুলির আওয়াজ শুনেছেন। তাৎক্ষণিক খাসগাঁও বাজারে ফোন করেও সত্যতা পেয়েছেন যে, সাতগাঁও গ্রামবাসীর পক্ষে বন্দুক দিয়ে একাধিক গুলি চালানো হয়েছে। সংঘর্ষে গুলা-গুলির শব্দ শুনেছেন বলে গিয়াস উদ্দিন, নিম্বর আলীসহ আরো অনেকেই জানিয়েছেন। তবে কোন পক্ষ গুলি করেছে এটি তাদের জানা নেই। সাতগাঁও গ্রামের পক্ষ থেকে বন্দুক দিয়ে গুলি করা হয়েছিল বলে সত্যতা স্বীকার করেন প্রত্যক্ষদর্শী কালিপুর গ্রামের কুতুব উদ্দিন। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে অস্ত্র ব্যবহারকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি জোর দাবি জানান করম আলীসহ খাসগাঁও গ্রামবাসী। এদিকে সাতগাঁও গ্রামের ছাদ মিয়া বন্দুক বলেন, সংঘর্ষে তারা অবৈধ অস্ত্র বন্দুক ব্যবহার করেন নি। বন্দুক দিয়ে গুলি করাতো দূরের কথা সাতগাঁও গ্রামবাসী এসব বন্দুক কখনো চোখে দেখেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শান্তিপূর্ণ সালিশ বৈঠকে করম আলী গংরা তাদের লোকজনের সঙ্গে গায়েপড়ে সংঘর্ষ বাঁধিয়েছিল। ওই সংঘর্ষে তাদের প্রায় ১৩জন ব্যক্তি মারাত্মক ভাবে আহত হয়। এর মধ্যে একজন ব্যক্তির বুবে ভল্লবের আঘাত লেগেছে। সে বাঁচবে কিনা মরবে তার নিশ্চয়তা নেই। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের রামদার আঘাতে আরো কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। খাসগাঁও গ্রামের করম আলী ও তার সন্ত্রাস বাহিনীর ভয়ে সাতগাঁও গ্রামের লোকজন খাসগাঁও বাজারে যাওয়া আসা বন্ধ করে দিয়েছে।