নির্বাচনে ইভিএম

42

স্থানীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন তথা ইভিএম পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে; ফল সন্তোষজনক। এ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচনেও ইভিএম ব্যবহারের কথা কয়েকবার তুলেছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দল এ ব্যাপারে আগ্রহ দেখালেও অন্যান্য দলের, বিশেষ করে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। রাজনৈতিক ঐকমত্য তৈরি না হলে ইভিএম নয়, এ কথাই বলেছিল কমিশন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। এখন আবার তোড়জোড় শুরু করেছে কমিশন, যাতে ইভিএমের বিষয়টি নির্বাচনী আইনে (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ আরপিও) অন্তর্ভুক্ত করা যায়। আরপিও সংশোধনের উদ্দেশ্যেই বসেছিল নির্বাচন কমিশন।
ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচন হতে পারে। সে বিষয়ক প্রস্তুতির মধ্যেই ইভিএম ব্যবহারের জন্য একটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য নির্বাচনী আইনে সংশোধনী আনার উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের এ উদ্যোগকে সন্দেহের চোখে দেখছে বিএনপি। তারা শুরু থেকেই ইভিএম-বিরোধী। ভোট চুরির জন্য ইভিএম ব্যবহার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, দলটির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য এ দাবি করেছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার তাঁরা মানবেন না। আরপিও সংশোধনের চেষ্টা তাঁদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। বিপরীত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামী লীগ। তারা বরাবর ইভিএমের পক্ষে। দলটির সাধারণ সম্পাদক এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।
আগামী নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তো রয়েছেই, খোদ কমিশনেই মতভেদ রয়েছে। ইভিএম ব্যবহার নিয়ে আইন সংশোধনের উদ্যোগে আপত্তি জানিয়েছেন একজন নির্বাচন কমিশনার। আরপিও সংশোধন প্রস্তাববিষয়ক সভা শুরুর আধাঘণ্টার মাথায় নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সভা ছেড়ে চলে যান। পরে কর্মচারীর মাধ্যমে তাঁর আপত্তিপত্র (নোট অব ডিসেন্ট) কমিশনে পাঠান। তাঁর অভিমত, স্থানীয় নির্বাচনে ধীরে ধীরে ইভিএম ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এটা ব্যবহারের জন্য আরপিও সংশোধন সমর্থনযোগ্য নয়। রাজনৈতিক বিরোধিতা এবং দক্ষ জনবলের অভাবের কথা তিনি আপত্তিপত্রে উল্লেখ করেছেন।
এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১০ সালে ইভিএম চালু করেছিল স্থানীয় নির্বাচনে। তখন বলা হয়েছিল, ধীরে ধীরে এর ব্যবহার বাড়ানো হবে। এতে অর্থ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। ফলও দ্রুত পাওয়া যাবে। ২০১৩ সালের পর এর ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান কমিশন নতুন করে উদ্যোগ নেয়। তবে জাতীয় পর্যায়ে ইভিএমের ব্যবহার এখনো হয়নি। প্রযুক্তির যুগে প্রযুক্তিকে দূরে ঠেলে রাখা বিচক্ষণতার পরিচয় নয়। তবে এর সঙ্গে রাজনীতি জড়িত থাকলে আপত্তি-অনাপত্তির বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে বৈকি। এ প্রযুক্তি নয়ছয় করার কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এমন ধারণা আমাদের মতো অনেক দেশেই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে পক্ষ-বিপক্ষের অভিমত ও পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।