হত্যা মামলায় ২ সহোদরের যাবজ্জীবন

34

স্টাফ রিপোর্টার :
কানাইঘাটে কৃষক মাওলানা রফিক উদ্দিন হত্যা মামলায় ২ সহোদরের যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও একজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দন্ডপ্রাপ্ত আসামীদেরকে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সিলেটের অতিরিক্ত জেলা জজ প্রথম আদালতের বিচারক এ.এম. জুলফিকার হায়াত এ রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছে- কানাইঘাট থানার নয়াগ্রামের মৃত আকলু মিয়ার পুত্র জমির আলী উরফে জমির উদ্দিন (৪৫) ও তার ভাই হাবিবুর রহমান উরফে হাবিবুর রহমান (৫২) এবং খালাসপ্রাপ্ত একই থানার ছোট মির্জারগড় গ্রামের মৃত চাঁন মিয়ার পুত্র মুহিবুর রহমান (৪৫)। রায় ঘোষণার সময় সকল আসামী আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত ছিলো। পরে সাজাপ্রাপ্ত ২ সহোদরকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, কৃষক মাওলানা রফিক উদ্দিনের ভাই হাবিবুর রহমানের সাথে জায়গা-জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তার বিরোধ চলে আসছিল। এনিয়ে আসামীরা রফিক উদ্দিনকে হত্যা করার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করতে থাকে। এদিকে জায়গা-জমির এ বিরোধ ভাইদের সাথে মিটিয়ে ফেলার জন্য রফিক উদ্দিন স্থানীয়ভাবে বিচারপ্রার্থী হয়েও তিনি কোন বিচার পাননি। এর জের ধরে আসামীরা দলবদ্ধ হয়ে হাবিবুর রহমানের বসত ঘরে রফিক উদ্দিনকে হত্যার জন্য শলাপরামর্শ করে এবং ২০১৫ সালের ৯ জুন বেলা ১১ টার দিকে একই বাড়ি হওয়ায় আসামী মজির মিয়া তার ঘরে গিয়ে উক্ত বিরোধ নিষ্পত্তির আশ্বাস দিয়ে হাবিবুর রহমানের ঘরে মাও: রফিক উদ্দিনকে ডেকে নিয়ে যায়। এ সময় আসামীরা তাকে বেদড়ক মারধর করতে থাকে এবং কাঠের বর্গা দিয়ে তার মাথায় আঘাত করলে রক্তাক্ত অবস্থায় রফিক উদ্দিন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে হাক-চিৎকার শুরু করেন। এক পর্যায়ে তার শোর চিৎকারে বাড়ির অন্যান্য ও স্থানীয় লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর পরদিন অর্থাৎ ১০ জুন বিকেল পৌনে ৬ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কৃষক মাওলানা রফিক উদ্দিন (৫০) মারা যান। এ ঘটনায় নিহত মাও: রফিক উদ্দিনের স্ত্রী রাহেনা বেগম বাদি হয়ে জমির আলী, হাবিবুর রহমান, মুহিবুর রহমান ও মজির মিয়াকে আসামী করে কানাইঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ১২ (১২-০৬-২০১৫)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ৮ জানুয়ারী সিলেট সিআইডি’র পুলিশ পরিদর্শক মো: শামীম-উর-রশীদ পীর উক্ত ৪ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন এবং একই বছরের ১১ জুলাই আদালত ওই ৪ আসামীর বিরুদ্ধে চার্জগঠন (অভিযোগগঠন) করে বিচার কার্য্য শুরু করেন। এর মধ্যে মামলা চলাকালীন সময়ে আসামী কানাইঘাট থানার নিজ ফতেহগঞ্জ গ্রামের মৃত আমজদ আলী উরফে বরই হাজীর পুত্র মজির মিয়া (৬৫) মারা যান। দীর্ঘ শুনানী ও ১৫ সাক্ষীর মধ্যে ১১ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আসামী জমির আলী উরফে জমির উদ্দিন ও হাবিবুর রহমান উরফে হাবিবুর রহমানকে ৩০২/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড প্রদান করেন এবং অপর আসামী মুহিবুর রহমানের দোষ আদালতে প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে এপিপি এডভোকেট নিজাম উদ্দিন ও আসামীপক্ষে এডভোকেট আব্দুল খালিক মামলাটি পরিচালনা করেন।