মৌলভীবাজারের রাজনগরে অগ্নিকান্ডে মর্মান্তিকভাবে নিহত মা-মেয়ের দাফন সম্পন্ন

48

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
কলাপসিবল গেটের সামনে দাঁড়িয়ে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন শাহিনা আর গ্রীলের গেটের ফাঁক দিয়ে হাত বের করে লোকজনের হাতে ধরছিলেন। গেটের তালা ভেঙ্গে বের করার আগেই আগুনে পুড়ে মারা গেলেন কলেজ ছাত্রী শাহিনা আক্তার (২২)। পুড়ে যাওয়া মা রোকেয়া বেগম (৫৫) মৃত্যু কোলে। আর দগ্ধ ভাই মুন্না আজিজ (২০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে পুড়ে যাওয়ার যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন। এসব তথ্য জানিয়েছেন শাহিনার খালাতো ভাই বদরুল আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, গেল ২৬এপ্রিল বৃহস্পতিবার ইতালী প্রবাসী এক ছেলের সঙ্গে বিয়ের বিষয়ে পাকা হওয়ার কথা ছিল। তার আগেই বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে ফ্রিজের কমপ্রেসার বিস্ফোরণে দগ্ধ হয়ে মারা যান খালাও খালাতো বোন।
এর আগের দিন বুুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার সময় হৃদয়বিধারক এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভুজবল গ্রামে।
জানা যায়, রাজনগর উপজেলার ভুজবল গ্রামের প্রবাসী ওয়াছির মিয়া গত একবছর আগে দেশে ফিরে হার্ড অ্যার্টাকে মারা যান। তার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়েকে আগেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। এক ছেলে মুন্না আজিজ ও মেয়ে শাহিনা আক্তার ছিলেন বিয়ের বাকি।
শাহিনা আক্তার মৌলভীবাজার মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। ভাই মৌলভীবাজার সরকারী কলেজে বিবিএ প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত। শাহিনা আক্তারকে তার ভাই মুন্না বুধবার বিকেলে নানার বাড়ি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের আলাপুর গ্রাম থেকে বাড়িতে নিয়ে আসেন রোকেয়া। রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে সকলেই ঘুমিয়ে পড়েন। এরপরেই ঘটে মর্মান্তিক এ অগ্নিকান্ডে মৃত্যুর ঘটনা।
প্রত্যক্ষদর্শী রোকেয়া বেগমের প্রতিবেশি দেবর শামছুল হক (৫০) বলেন, গভীর রাতে বিস্ফোরনের শব্দ শুনে ঘর থেকে বের হন। বের হয়েই দেখতে পান রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার কলাপসিবল গেটের সামনে বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার করছিলেন। তিনি সামনে যেতেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তার বাঁচানোর আকুতি জানান। এসময় তিনিও চিৎকার করতে থাকেন। বেরিয়ে আসেন আশেপাশের লোকজন। কলাপসিবল গেটের তালা দেয়া থাকায় দরজা খোলা যাচ্ছিল না। ঘরে আগুন জ¦লছিল দাউ দাউ করে। পাশের বাড়ির একজন শাবল নিয়ে আসেন। এর আগেই রোকেয়া বেগম ও শাহিনা আক্তারের গায়ে আগুন ধরে যায়। গেটের তালা ভাংতে ভাংতেই আগুনে পুড়ে যান মা মেয়ে। তালা ভেঙ্গে যখন বের করা হয় তখন তারা সম্পূর্ণভাবে পুড়ে গেছেন। ধরা যাচ্ছিল না।
শামছুল হক আরও বলেন, তার পরনে হাফ পেন্ট থাকায় লুঙ্গি খুলে তাদেরকে ধরে ঘর থেকে বের করেন। এসময় মারা যান শাহিনা আক্তার।
এদিকে ভাই মুন্না আজিজ ঘরের পূর্ব পাশের বাথরুমে ঢুকে পানি ঢালতে থাকেন। এরপরও তার পিঠ ও পা পুড়ে গেছে। তাকেও বের করে নিয়ে আসেন। এরই মাঝে খবর পেয়ে রাজনগর থানার পুলিশ ও মৌলভীবাজার ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে স্থানীয়দের সহায়তায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। পরে এম্বুলেন্স আসার পর মুন্না আজিজ ও মা রোকেয়া বেগমকে সিলেট ওসমানী মেডকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ঢাকা নেয়ার পথে শ্রীমঙ্গল এলাকায় রোকেয়া বেগম মারা যান। পরে তাকে মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যার হাসপাতালের মর্গে নিয়ে আসা হয় এবং মুন্না আজিজকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। ভোরে শাহিনা আক্তারের লাশ রাজনগর থানা পুলিশ মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে মা মেয়ের ময়নাতদন্ত শেষে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে।
রাজনগর থানার ওসি শ্যামল বণিক বলেন, ফ্রিজের পাশে বৈদ্যুতিক শট সার্কিট থেকে কমপ্রেসার বিস্ফোরণ ঘটে। এসময় পুরো ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে । সে আগুনে দগ্ধ হয়ে শাহিনা আক্তার ঘটনাস্থলে ও মা রোকেয়া বেগম ঢাকা নেয়ার পথে মারা যান। উভয়ের লাশের ময়না তদন্ত শেষ হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় অপমৃত্যু মামলা হয়েছে।
শুক্রবার মা ও মেয়ের দাফন সম্পন্ন হয়।
এ ঘটনায় মৌলভীবাজার রাজনগর সদর ইউনিয়নের ভুজবল এলাকায় শোকে মূহ্যমান। যারা সান্তনা দিতে আসছেন তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। মৃত্যুশোক কাতর। শুক্রবার (২৭ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে ভুজবল গ্রামে মা ওমেয়ের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। পরে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।