বৈকালিক সেবা বাড়াতে হবে

38

দেশে প্রয়োজনের তুলনায় স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ অত্যন্ত সীমিত। সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ আরো কম। অথচ দেশের বেশির ভাগ মানুষ দরিদ্র। বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ নেওয়া তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। এ অবস্থায় বিদ্যমান সরকারি হাসপাতালগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার দাবি অনেক দিনের। তার মধ্যে একটি হচ্ছে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা। কিন্তু বাস্তব নানা কারণে তা হয়ে উঠছে না। সরকারি হাসপাতালে এই সুযোগটি করা না গেলেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে বেশ কিছুদিন ধরেই চালু রয়েছে এই বিশেষায়িত সেবা কার্যক্রম। হাসপাতালের ২৫টি বিভাগে মাত্র ২০০ টাকার বিনিময়ে রোগীরা বৈকালিক স্পেশালাইজড আউটডোর সেবা নিতে পারছে। প্রতিদিন অন্তত এক হাজার রোগী এই সেবা পাচ্ছে। এতে রোগীরাও খুশি। সরকারি কিছু হাসপাতালে, বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কয়েকটি হাসপাতালে সীমিত পরিসরে এই সেবা চালু করা হয়েছিল। কিন্তু পর্যাপ্ত চিকিৎসকের অভাবে সেগুলো খুব একটা সফল হয়নি। রোগীর আধিক্য ও চিকিৎসক সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি সরকারের নীতিনির্ধারকরা কিছুটা ভিন্ন আঙ্গিকে ভেবে দেখতে পারেন।
বহু কোটি টাকার বিনিময়ে একেকটি সরকারি হাসপাতাল গড়ে ওঠে এবং আরো কয়েক কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম কেনা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ হাসপাতালেই দুপুরের পর সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। বহু রোগী সেবা না পেয়েই ফিরে যায়। এটি কোনোভাবেই হাসপাতালগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নয়। এর নানা কারণ রয়েছে। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক নিয়োগ দিলেও দেখা যায় অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক কর্মস্থলে থাকেন না। আবার যে পরিমাণ চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার কথা, নিয়োগ হয় তার চেয়ে অনেক কম। ফলে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। হাসপাতালগুলোতে যেসব সরঞ্জাম বা যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা হয়, বাস্তবে দেখা যায় মেয়াদের আগেই সেগুলো অচল হয়ে পড়ে থাকে। অভিযোগ আছে, আশপাশের প্রাইভেট ক্লিনিকের ব্যবসা ঠিক রাখার স্বার্থে ইচ্ছাকৃতভাবেও যন্ত্রপাতি অচল করে রাখা হয়। ফলে স্থানীয় রোগীরা বৈকালিক সেবা তো দূরে থাক, স্বাভাবিক দৈনন্দিন সেবাও পায় না। সরকারি হাসপাতালের এই ব্যবস্থাপনাগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। সেই সঙ্গে চিকিৎসাসংশ্লিষ্টদের মানসিকতার পরিবর্তনও অত্যন্ত জরুরি। যেসব উপজেলা হাসপাতালে বৈকালিক সেবা এখনো কোনো রকমে ধরে রাখা হয়েছে, সেগুলো সম্ভব হয়েছে শুধু সেখানকার সেবাদানকারীদের উন্নত মানসিকতা ও আন্তরিকতার কারণে। এই আন্তরিকতা সারা দেশেই থাকা প্রয়োজন।
চিকিৎসাসেবা এখন বাণিজ্যের বিষয় হয়ে গেছে। সরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকও এই বাণিজ্যিক ধারায় নিজেকে সঁপে দিয়েছেন। এমনকি তা করতে গিয়ে কেউ কেউ হাসপাতালের দায়িত্বে অবহেলা করছেন। এটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। আমরা চাই, সবার সহযোগিতায় সরকারি হাসপাতালের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত হোক।