কুশিয়ারা নদীর ভাঙ্গনে রাজনগর কালারবাজারে দু’শতাধিক দোকান-পাট নদী গর্ভে বিলীন

42

মৌলভীবাজার থেকে সংবাদদাতা :
মৌলভীবাজারের সদর উপজেলা ও রাজনগর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে কুশিয়ারা নদী। প্রাচীনকাল থেকে এই নদী পথে লঞ্চ ও ট্রলার ও জাহাজযোগে ব্যবসা করে আসছেন স্থানীয় এলাকার ব্যবসায়ীরা।
ইতোমধ্যে কুশিয়ারা নদী পারের শত বছরের পুরানো নলুয়ার মুখ (কালারবাজার) এর দুই শতাধিক দোকান-পাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর নদী ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় বাজারের ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
রাজনগর, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা থেকে আগত ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা এই ভাঙ্গন রোধ করতে পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন।
এর আগে নদীযোগে ঢাকা ও ভৈরব থেকে ওই বাজারে সকল প্রকার মালামাল সরবরাহ করা হতো। কিন্তু যেই দোকান-পাট বিলীন হচ্ছে তখন থেকে বাজারের ব্যবসায় বাঁধ লেগেছে। ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা বাজার ত্যাগ করে কিছুটা গুঁটিয়ে নিয়েছেন তাদের ব্যবসা বাণিজ্য। তবে, যে গুণে বাজারটি তার ঐতিহ্য ধরে রেখেছে তা হলো-পাইকারী বাঁশ বিক্রি, বেতের তৈরি গ্রাম বাংলার হরেক রকম নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সামগ্রীসহ কৃষি ক্ষেতের লাঙ্গল-জোয়ালসহ আরো হরেক রকম সামগ্রীর পৃথক হাট। সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার দুইদিন বসে হাট। ১০০ বছর আগে বাজার সংলগ্ন ছিক্কাগাঁও গ্রামের প্রয়াত কালা মিয়ার দেয়া এই কালারবাজারের নদী পারে বসতো ধান-চালের পাইকারি হাট। সেই সময়ে উজান ও ভাটি অঞ্চলের শত শত কৃষকেরা নৌকা যোগে এসে ধান-চাল বিক্রি করতেন।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, মৌলভীবাজার থেকে আসা ক্রেতারা এসে জড়ো হতেন সেখানে। সেই চেনা-জানা ধানের হাট নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে ধান চালের হাট।
ক্রমান¦য়ে প্রায় দুই যুগ ধরে এই বাজার থেকে প্রায় দুই শতাধিক কাঁচা-পাকা দোকান ও বাড়িঘর নদী গর্ভে চলে গেছে। মাটি ধসে নদীতে পড়ায় অনেক দোকান ঘর প্রায় শুণ্যে ঝুলে আছে।
এছাড়াও রাজনগর উপজেলার বকসিপুর, আমনপুর, যোগিকোনা, কেশরপাড়া, সুনামপুর, উমরপুর ও ফতেপুর ইউনিয়নের বেড়কুড়ি, শাহাপুর, জাহিদপুরসহ আরো ৫/৬টি গ্রামে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বাজারের পূর্ব পাশ্বে ভাঙ্গনরোধে বালু পাথরসহ কয়েকশত বস্তা দিয়ে নদী পার কার্পেটিং করলে পরের বছর আবার ভাঙ্গনের কবলে পড়ে সকল বস্তা নদীতে হারিয়ে যায়।
পাউবো কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বস্তা ফেলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা যাচাই-বাছাই করেছেন। তবে বাজার টিকিয়ে রাখতে হলে এখানে বৃহৎ বাজেট দিয়ে ব্লকের কাজ করাতে হবে।
নলুয়ারমুখ কালারবাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ আব্দুল আলীম বলেন, ‘নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ে বাজারের এখন করুন অবস্থা। ভাঙ্গন পার্শ্বে ১০/১৫ টি বিল্ডিং ঝুলিয়ে আছে। কালারবজারে নদী ভাঙ্গন পরিদর্শনে আসেন। তিনি তখন আক্ষেপ করে বলেন, প্রচুর লোক সমাগম হওয়া এই বাজার ভাঙ্গনমুক্ত করা প্রয়োজন। তিনি পাউবোসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে ভাঙ্গনরোধ করবেন বলে পরিদর্শনে সকলকে আশ্বস্থ করেন।’
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন,‘কুশিয়ারা নদীর কালারবাজার ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করতে হলে ব্লকের কাজ করতে হবে। আর এই কাজ ব্যয়বহুল। প্রথমতো আমাদের কাছে কোন বরাদ্দ নেই। আমরা ব্লকের কাজের জন্যএকটি প্রস্তাবনা হেড অফিসে পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলে হয়তো খুব শিগগিরই এই কাজটি করতে পারবো।’