যাদুকাটায় দু’ধর্মাবলম্বী লোকজনদের মেলবন্ধন, পুণ্যের আশায় লাখো পুণ্যার্থী

140

বাবরুল হাসান বাবলু তাহিরপুর থেকে :
তাহিরপুরে পুণ্য¯œান ও শাহ আরেফিনের ওরস মোবারক কে কেন্দ্র করে লাখো পুণ্যার্থী ও ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটেছে যাদুকাটা নদীর তীরে। ১৫ মার্চ বৃহস্পতিবার ভোর ৫ টা ১৪ মিনিট হতে বিকাল ৫ টা ১৪ মিনিট এর মধ্যে পুণ্য¯œান এর যুগ রয়েছে বলে জানান শ্রী শ্রী অদ্বৈত জন্মধাম পরিচালনা কমিটির সভাপতি বাবলু চৌধুরী।
অপরদিকে যাদুকাটা নদীর উৎস্যমুখ ভারতের মেঘালয় সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় শাহ আরেফিনের মোকামে বৃহস্পতিবার থেকেই ওরস মোবারক শুরু হবে বলে জানান শাহ আরেফিন মাজার রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আলম সাব্বির। তিনি আরও জানান, এ ওরস মোবারক যা চলবে আরো ২ দিন।
এ দু’উৎসবকে কেন্দ্র করে গত দুদিন পূর্ব থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে পুণ্যার্থী ও ভক্তবৃন্দরা এসে ভিড় জমিয়েছেন যাদুকাটা নদীর তীর সংশ্লিষ্ট আশ পাশের গ্রাম, স্থানীয় হাটবাজার ও শাহ আরেফিন মোকাম আস্তানায়। কেউ এসেছেন অস্থি নিয়ে, কেউ পুণ্যের আশায়, আবার কেউ আসেন মানত নিয়ে মনোবাসনার ইচ্ছে পূরণ করায়।
সনাতন ধর্মাবলম্বী একাধিক লোকজন ও পুরোহিতদের কাছ থেকে জানা যায়, কথিত রয়েছে অদ্বৈত প্রভুর বয়স যখন ৭ বছর তখন তার মা লাভা দেবী স্বপ্ন দেখেন যে তিনি গঙ্গা ¯œান করছেন এবং তার ক্রোড়স্থ শিশুটি শুভচক্রে গদা পদ্মধারী মহাবিষ্ণু। মাতা লাভাদেবী অনেক চিন্তা ভাবনা করে তার পুত্র অদ্বৈত আচার্যকে সকল স্বপ্ন খুলে বললেন। মায়ের সব কথা শুনে অদ্বৈত আচার্য চিন্তা করলেন এই বৃদ্ধ অবস্থায় মাকে এত দূর নিয়ে গঙ্গা ¯œান করানো সম্ভব নয়। এ অবস্থায় অদ্বৈত আচার্য প্রতিজ্ঞা করলেন ‘সপ্ত তীর্থ আমি হেথায় করিমু ¯œান’। তিনি বৃদ্ধা মায়ের অভিলাষ পুরনে যুগ সাধনা বলে মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে পৃথিবীর সপ্ত তীর্থকে আহব্বান করে রেণুকা (যাদুকাটা) নদীর জলের ধারায় সপ্ত তীর্থের জলকে একত্রিত করে প্রবাহিত করেছিলেন। এখনো প্রতি বছর মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সপ্ত তীর্থের জল একত্রিত হয়ে যাদুকাটা নদীর জলের ধারায় প্রবাহিত হয় বলে বিশ^াস করেন সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক চৈতন্য দেবের সহচরদের অন্যতম অদ্বৈতাচার্য মহাপ্রভুর সাধনার ফলেই যাদুকাটা নদীতে সাত তীর্থের সমাগম হয়েছিল। আর এ থেকেই যুগ যুগ ধরে পূণ্যলাভের আশায় সনাতন ধর্মাবলম্বী লোকজন যাদুকাটায় পুণ্য¯œান করে থাকেন।
অপরদিকে ঠিক একই সময়ে লাউড়েরগড়ে অনুষ্ঠিত হয় হযরত শাহজালালের (রহ.) সঙ্গী হযরত শাহ আরেফিনের (র.) বার্ষিক ওরস মোবারক। কথিত আছে ৩৬০ আউলিয়াদের মধ্যে হযরত শাহ আরেফিন (র.) হলেন একজন। শাহ আরেফিন (র.) অনেকের কাছে জিন্দাপীর হিসেবে পরিচতি। সুদুর অতীতকাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রতি বছর পণাতীর্থ মেলার সাথে সামঞ্জস্য রেখে অগুনতি বাউল ফকির, সাধক, হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সবাই আসেন হযরত শাহ আরেফিন (র.) এর স্মৃতি বিজড়িত স্থান দেখার জন্য। প্রতি বছর ওরস মোবারককে কেন্দ্র করে লক্ষাধিক ভক্ত আশেকানের সমাগম ঘটে এবং প্রানবন্ত হয়ে ওঠে ওরস মোবারক। প্রকৃত পক্ষে হযরত শাহ আরেফিনের (র.) মোকাম সীমান্তের ওপারে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে অবস্থিত। সাধারণ দর্শনার্থীরা আসেন শাহ আরেফিনের স্মৃতি বিজড়িত বাংলাদেশ আস্তানায় এবং সেখান থেকেই একবার চোখ দিয়ে পরখ করে নেন অদূরে ভারতের মেঘালয় পাহাড়ে অবস্থিত শাহ আরেফিনের আস্তানার স্মৃতি চিহ্ন দিকে। কেউ আসেন মানত নিয়ে আবার কেউ দোয়া নেন কেউবা মোকাম জিয়ারত করে চলে যান। এবাবেই বছরের পর বছর এ দু’উৎসবকে কেন্দ্র করে দু’ধর্মাবলম্বীদের মেলবন্ধন বসে যাদুকাটায়।