রাষ্ট্রায়ত্ত ৮ ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল

27

সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
রাষ্ট্রায়ত্ত আট ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার পদে সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষা বাতিল করেছে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। সেই সঙ্গে নিয়োগ পরীক্ষায় অব্যবস্থাপনা কারণ খোঁজার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে ব্যাংক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির এক সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়।বৈঠকটি ডাকেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
এছাড়াও পরীক্ষায় অনিয়মের বিষয়ে তদন্ত করতে একটি তদন্ত কমিটি গঠনেরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসসি। কমিটিকে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর নতুন করে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সর্বসম্মতিক্রমে বিএসসি কমিটি এই পরীক্ষা বাতিল করেছেন। এই ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রধানের দায়িত্বে থাকবেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ জামাল। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন জেনারেল ম্যানেজার এই কমিটির সদস্য সচিব থাকবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই সপ্তাহের মধ্যে এই কমিটিকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ব্যবস্থাপনা কমিটির আওতায় এই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে, তাদের থেকে একটি ব্যাখা চাওয়া হবে। সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কবে ও কখন পরীক্ষা হবে।’
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটি ও ওই পরীক্ষার বিষয়ে তদন্ত হবে।’ অর্থের ক্ষতির ব্যাপারে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য নেই।’
বৈঠকে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্য এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নির্বাহীরা অংশ নেন। এছাড়া সেখানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন।গত শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত আট ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। আট ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগকে। এক ঘণ্টায় ১০০ নম্বরের এই এমসিকিউ পরীক্ষার মাধ্যমে পৌনে ১১ লাখ প্রার্থীর মধ্যে থেকে আটটি ব্যাংকের মোট সাত হাজার ৩৭২টি শূন্য পদে কর্মকর্তা নিয়োগ হওয়ার কথা রয়েছে।
কিন্তু এমসিকিউ পরীক্ষার দিন রাজধানীর মিরপুরে শাহ আলী মহিলা কলেজে পাঁচ হাজার ৬০০ পরীক্ষার্থীর বসার পর্যাপ্ত জায়গা ছিল না। ফলে শত শত পরীক্ষার্থীকে বসার জায়গা দিতে পারেনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। এ কারণে ক্ষুব্ধ পরীক্ষার্থীরা কলেজটির জানালা-দরজা ভাঙচুর করে। বাধ্য হয়ে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে ২০ জানুয়ারি শুধু ওই কেন্দ্রের পরীক্ষা নেয়ার ঘোষণা দেয়।
এই পাঁচ হাজার ৬০০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে এক হাজার ৬০০ জনের পরীক্ষা মিরপুরে শাহ আলী মহিলা কলেজে এবং ৪০০০ জনের পরীক্ষা মিরপুর বাংলা কলেজে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। এরপর ১২ জানুয়ারির পুরো পরীক্ষা বাতিলসহ নয় দফা দাবিতে আন্দোলনে নামে পরীক্ষার্থীরা।
গত সোমবার আন্দোলনরত অবস্থায় দৈনিক বাংলা মোড় থেকে দুজন চাকরি প্রার্থীকে পুলিশ আটক করে। এরপর দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনকারীরা ঘোষণা দেন, আটককৃতদের ১২ ঘণ্টার মধ্যে ছেড়ে দেয়াসহ ১২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত পরীক্ষা বাতিল না করলে তারা কঠোর আন্দোলনে যাবে।
পরীক্ষায় সৃষ্ট জটিলতা নিয়ে আলোচনা করতে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি এবং ১৪টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির। বৈঠকে আগের পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।