ভোক্তার স্বার্থ রক্ষায় আইন প্রয়োগ চাই

41

অর্থনীতির বেশ কিছু সূচকে অগ্রগতি লক্ষণীয়। মাথাপিছু আয় এক হাজার ৬০০ ডলার ছাড়িয়েছে। জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৭ শতাংশের বেশি। অবকাঠামোর উন্নয়ন ঘটছে। তার পরও এখনো প্রায় দুই কোটি মানুষ অতিদরিদ্র। দেশের বেশির ভাগ মানুষ অতিদরিদ্র বা নিম্ন ও নিম্নমধ্য আয়ের অন্তর্ভুক্ত। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেলে তাদের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব পড়ে। গত বছর চাল-তেল প্রভৃতি নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় সমস্যায় পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। মূল্যবৃদ্ধির কারণে ১৬ কোটির মধ্যে ১২ কোটি মানুষকেই, অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ৭৫ শতাংশকেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের চড়া মূল্য তাদের বাড়তি আয় খেয়ে ফেলেছে। অনেকের সঞ্চয় কমেছে। উন্নয়নে সুষমতা ও নিত্যপণ্যের বাজারে নজরদারির অভাবের কারণে এমনটি ঘটছে। সর্বাধিক বিরূপ প্রভাব পড়েছে অতিদরিদ্র দুই কোটি মানুষের ওপর। উন্নয়নের সুফল তারা পাচ্ছে না।
গত ২০১৭ সালের পণ্য ও সেবা মূল্য বিষয়ক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। তাতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের তুলনায় ২০১৭ সালে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে ৮.৪৪ শতাংশ। এই ব্যয় শিক্ষা, চিকিৎসা ও প্রকৃত যাতায়াত ব্যয়ের বাইরে। পণ্য ও সেবা মূল্য বেড়েছে ৭.১৭ শতাংশ। ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে যত বেড়েছিল, ২০১৬ সালের তুলনায় গত বছর পণ্যমূল্য ও জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে তার চেয়েও বেশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আগের বছরের চেয়ে গত বছর ৫ থেকে ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। পণ্যের এই তালিকায় চাল, তেল, লবণ, পেঁয়াজ, শাকসবজি, মাছ-মাংস সবই রয়েছে। চালের দাম ২০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সবজির দর বেড়েছে ২৪ শতাংশের বেশি। পেঁয়াজের দর বেড়েছে ৫৭.৫৭ শতাংশ পর্যন্ত। লবণ, ভোজ্য তেলের দর বেড়েছে ১০ শতাংশের বেশি। কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে ৪৪ শতাংশ। আলু, মসুর ডাল, ফার্মের মুরগির ডিম ও রসুনের দাম কিছু কমেছে। সব ধরনের মাছের দাম প্রায় ৫ শতাংশ বেড়েছে, কই মাছের দাম ৪ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া বাসাভাড়া ও গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ায় মোট মাসিক খরচ বেড়েছে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের জীবনমানে বিরূপ প্রভাব পড়ে। হতাশা ও অসন্তোষ বাড়ে। তাই এসব পণ্যের দাম সহনীয় ও স্থিতিশীল এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় রাখা জরুরি। ভোক্তার স্বার্থরক্ষার জন্য কিছু আইন হয়েছে। তবে সেসব কার্যকর করার বিধিমালা ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নেই। ফলে বাজারে প্রতিযোগিতার পরিবেশ নেই, মুনাফা অনিয়ন্ত্রিত থেকে যাচ্ছে। শুধু মাথাপিছু আয় বাড়ালেই হবে না, জীবনযাত্রার ব্যয় কমানো বা সহনীয় রাখার চেষ্টাও সরকারকে করতে হবে। সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার স্বার্থে উন্নয়নে সুষমতা নিশ্চিত করতে হবে।