আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক ॥ প্রবাসীরা হচ্ছেন আমাদের সম্পদ

97

সিলেটের জেলা প্রশাসক মোঃ রাহাত আনোয়ার বলেছেন, প্রবাসীরা হচ্ছেন আমাদের সম্পদ। তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়েই আমাদের দেশের রাজস্ব ভান্ডার পরিপূর্ণ হয়। প্রবাসীদের কল্যাণে বর্তমান সরকার সচেষ্ট রয়েছে। তিনি কুয়েত প্রত্যাগতদের ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দেন।
তিনি গতকাল ১৮ ডিসেম্বর সোমবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসন, জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সিলেট আয়োজিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০১৭ উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‌্যালী পরবর্তী “নিরাপদ অভিবাসন যেখানে টেকসই উন্নয়ন সেখানে” শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভার বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের সহকারী পরিচালক মীর কামরুল হাসান, যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মোঃ ছানোয়ার, যুক্তরাজ্য প্রবাসী মোঃ নজরুল ইসলাম, কুয়েত প্রত্যাগত সমিতি সিলেটের সভাপতি নূরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ভানুদ্বয় ভট্টাচার্য, ব্র্যাক সিলেটের জেলা প্রতিনিধি বিভাষ চন্দ্র তরপদার, রিইন্টিগ্রেশন সার্ভিস সিলেটের ম্যানেজার শুভাশীষ দেবনাথ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সিলেটের শ্রেষ্ঠ রিমিটেন্স প্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের কল্লোল আহমদ ও কুয়েত প্রবাসী সায়রা আক্তার হেনাকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।
সহকারী কমিশনার মোঃ হেলাল চৌধুরীর পরিচালনায় শুরুতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ওভারসীজ সেন্টার সিলেটের নির্বাহী কর্মকর্তা শামসুল আলম। প্রবন্ধে বলা হয়- আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ২০১৭ এর প্রতিপাদ্য বিষয় “নিরাপদ অভিবাসন যেখানে টেকসই উন্নয়ন সেখানে” নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী শ্লোগান। পৃথিবীর সর্বত্র এখন অভিবাসীদের মারাত্মক দুর্দিন। বিশে^র প্রায় ২৫০ মিলিয়ন অভিবাসীর মধ্যে বাংলাদেশী অভিবাসীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ। তন্মধ্যে প্রায় ২৫ লক্ষ ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান ইত্যাদি দেশে স্থায়ী অভিবাসী। আর বাকী সব মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়াসহ দূর প্রাচ্যের নানা দেশে মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার হিসাবে অস্থায়ী অভিবাসী মর্যাদায় কর্মরত আছেন। তারা দেশে ও বিদেশে নানা রকম হয়রানি ও হুমকির মধ্যে জীবন যাপন করছেন। প্রবাসীদের নিরাপত্তার অনিশ্চয়তার কারণেই তাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রা দ্বারা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভফান্ড স্ফিত হচ্ছে বটে, কিন্তু কাঙ্খিত উন্নয়ন হচ্ছেনা। প্রবাসেও নিরাপত্তাহীনতার কারণে তাদের একই দুরবস্থা।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক অভিবাসী সম্মেলনে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “অভিবাসী শুধু একজন শ্রমিক নন, তাদের প্রত্যেকের বলার মত একটি অসাধারণ মহৎ গল্প আছে। অভিবাসীরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি, শ্রম, মেধা ও সম্পদ ব্যবহারের মাধ্যমে স্বাগতিক দেশের উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখেন। অভিবাসন সব মানুষের এবং সব রাষ্ট্রের সমৃদ্ধি ও কল্যাণ সম্পর্কিত বিষয়। বৈচিত্র্যময় বৈশি^ক উন্নয়ন রুপকল্প যা এজেন্ডা ২০৩০ নামে পরিচিত সেখানে অভিবাসী বিষয়কে টেকসই উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
প্রবাসীদের সমস্যা সমাধান ও নিরাপদ অভিবাসনের জন্য প্রবন্ধে কিছু প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রবাসীদের জমিজমা সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ও হয়রানীর অবসানকল্পে প্রবাসীদের দেখবাল করা ও বিনিয়োগ সহযোগিতার জন্য ওয়ানটপ সার্ভিস চালু। দেশে-বিদেশে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানকল্পে প্রতিটি দূতাবাসে প্রবাসী অভিযোগ সেল গঠন করা, প্রবাসীদের দেশ-বিদেশে অবহেলার হাত থেকে রক্ষার জন্য তাদের ভি.আই.পি ও সি.আই.পি মর্যাদা প্রদান করা। ব্রিটিশ ভিসা কার্যক্রম নয়াদিল্লী থেকে পুনঃরায় ঢাকায় ফিরিয়ে আনার জন্য কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করে প্রবাসীদের দাবী বিবেচনা করা। ১৯৯০ সালে ইরাক-কুয়েত যুদ্ধে শিকার হয়ে প্রায় ৬২ হাজার কুয়েত প্রত্যাগত বাংলাদেশী রিক্তহস্তে দেশে ফিরে আসেন, যারা কুয়েতে থাকাকালীন দেশে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা রিমিটেন্স প্রেরণ করেছিলেন। তাদের অধিকাংশই পরবর্তীতে কুয়েতে ফিরে যেতে পারেননি। তাদের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা কামনা করা হয়।
এর আগে সকাল ১০টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে জেলা প্রশাসক মোঃ রাহাত আনোয়ারের নেতৃত্বে এক বর্ণাঢ্য র‌্যালী বের হয়। র‌্যালীটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বিজ্ঞপ্তি