শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফ্রিডম পার্টির ১১ কর্মীর ২০ বছরের কারাদন্ড

59

কাজিরবাজার ডেস্ক :
২৮ বছর আগে রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িতে আওয়ামী লীগেরে সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার দুই মামলায় মামলায় ফ্রিডম পার্টির ১১ নেতাকর্মীর সাজা ঘোষণা করেছে ঢাকার একটি আদালত। একটি মামলায় দুটি অভিযোগে ২০ বছর কারাদণ্ড এবং অপর মামলায় এই ১১ জনকেই যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়।
রবিবার দুপুর এবং বিকালে দুটি আলাদা রায়ে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক জাহিদুল কবির এই সাজা ঘোষণা করেন। একটি মামলায় সাজাপ্রাপ্তদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। দোষ প্রমাণ না হওয়ায় মামলার এক আসামিকে খালাস দিয়েছেন বিচারক।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন: গোলাম সারোয়ার ওরফে মামুন, জজ মিয়া, ফ্রিডম সোহেল, সৈয়দ নাজমুল মাকসুদ মুরাদ, গাজী ইমাম হোসেন, খন্দকার আমিরুল ইসলাম কাজল, মিজানুর রহমান, শাজাহান বালু, লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুর রশীদ, জাফর আহমেদ ও হুমায়ুন কবির ওরফে হুমায়ুন। খালাস পেয়েছেন হুমায়ুন কবির ওরফে কবীর।
আসামিদের মধ্যে গোলাম সারোয়ার ওরফে মামুন, জজ মিয়া, ফ্রিডম সোহেল ও সৈয়দ নাজমুল মাকসুদ মুরাদ কারাগারে রয়েছেন। আবদুর রশীদ, জাফর আহমেদ ও হুমায়ুন কবির ওরফে হুমায়ুন পলাতক এবং অপর আসামিরা জামিনে। তবে জামিনে থাকা শাজাহান বালু আদালতে না আসায় বিচারক তার অনুপস্থিতিতেই রায় ঘোষণা করেন।
এই দুই মামলার রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যা চেষ্টার চারটি মামলার রায় ঘোষণা করা হলো। এর আগে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি বোমা বসিয়ে শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টার দুই মামলায় গত ২০ আগস্ট ২৩ জনের সাজা ঘোষণা করে ঢাকার একটি আদালত। এদের মধ্যে ১০ জনকে দেয়া হয় প্রাণদণ্ড।
১৯৮১ সালে দেশে ফেরার পর শেখ হাসিনাকে অন্তত ২০ বার হত্যা চেষ্টার তথ্য রয়েছে। এর মধ্যে মামলার তথ্য পাওয়া যায় ১৪টি ঘটনায়। এর মধ্যে কিছু মামলা বিএনপি সরকারের আমলে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়ে শেষ করে দেয়া হয়। একাধিক মামলা আদালতের নির্দেশে পুনরায় তদন্ত হচ্ছে।
একটি মামলায় দণ্ডবিধির ১২০ বি ধারায় ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড; এছাড়া ৩০৭ ও ৩৪ ধারায় অপর এক অভিযোগে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছে আদালত।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী ১৯৮৯ সালের ১০ আগস্ট মধ্যরাতে ফ্রিডম পার্টির একটি দল শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবনে গুলি ও গ্রেনেড ছোড়ে। শেখ হাসিনা তখন ওই বাসাতেই থাকতেন এবং ঘটনার সময় তিনি সেখানে অবস্থান করছিলেন।
ওই ঘটনায় বাড়ির নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ কনস্টেবল জহিরুল ইসলাম একটি মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, ফ্রিডম পার্টির সদস্য কাজল ও কবিরের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল ৩২ নম্বরের বাড়িতে অতর্কিত গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলা করে। পরে তারা ‘কর্নেল ফারুক-রশিদ জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিতে দিতে পালিয়ে যায়।
বঙ্গবন্ধুর খুনি খন্দকার আব্দুর রশিদ, কর্নেল সাঈদ ফারুক রহমান ও মেজর বজলুল হুদা ১৯৮০-এর দশকে প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রিডম পার্টি। উগ্র মতাদর্শের এই দল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া এবং এরশাদ আমলে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পায়। সবশেষ ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে কুমিল্লার একটি আসন থেকে বঙ্গবন্ধুর খুনি ফ্রিডম পার্টির নেতা কর্নেল ফারুককে জিতিয়ে সংসদে আনা হয়। তবে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই দলটির নেতা-কর্মীদের আর কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি।
ফ্রিডম পার্টি বঙ্গবন্ধু হত্যার পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে স্লোগান দিত। ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর তাকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টার তথ্য ছিল দলটির বিরুদ্ধে।
এর মধ্যে ১৯৭৯ সালের ঘটনায় করা মামলার মামলাটি তদন্ত করে ১৯৯৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০০৯ সালের ৫ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারকাজ শুরু হয়।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মহানগর পিপি আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আমরা রায়ে সন্তুষ্ট। উচ্চ আদালতেও এ রায় বহাল থাকবে বলে আমরা আশা করছি।’
রায়ের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী আবদুল্লাহ মাহমুদ হাসান বলেন, ‘আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। সেখান থেকে তারা খালাস পাবেন বলে আশা করছি আমরা।’
এদিকে খালাস পাওয়া হুমায়ুন কবির ওরফে কবিরের আইনজীবী এ এস এম গোলাম ফাত্তাহ বলেন, ‘আমার আসামি আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পেয়েছেন। তাকে খালাস দেয়া হয়েছে।’
আদালতের পর্যবেক্ষণ
বিচারক জাহিদুল কবির রায় ঘোষণার পাশাপাশি বেশ কিছু পর্যবেক্ষণও লিখেছেন। তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা আর তার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। একই আসামিদের, একই ষড়যন্ত্রকারীদের পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনাকেও হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল।’
বিচারক বলেন, ‘হামলার ঘটনায় প্রথমে সাধারণ ডায়েরি করা হলেও পরে তা মামলায় রূপান্তর করা হয়। ওই এজাহার ছিল দুর্বল।’
‘মামলায় তিন আসামি আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এছাড়া মামলার সাক্ষ্য প্রমাণে এসেছে, তারা বিভিন্ন সময়ে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেছে এবং সেই ষড়যন্ত্র থেকেই তারা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করে।’