অর্থ মন্ত্রণালয়ে সিলেটের উন্নয়ন বিষয়ক সভা ॥ চলমান উন্নয়ন প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করার নির্দেশ অর্থমন্ত্রীর

45

কাজিরবাজার ডেস্ক :
সিলেটের চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ যথাসময়ে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত 20622615_1568560673195672_1302222562_oএমপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে অর্থমন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় তিনি সংশ্লিষ্ট সকল দফতরের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ নির্দেশ দেন।
এছাড়া নগরীর মেন্দিবাগে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের পাশে জেলা পরিষদের নির্মাণাধীন মার্কেটটি ভেঙ্গে দিতে চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে কঠোর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, এখানে মার্কেট নির্মাণের কারণে ক্রীড়া কমপ্লেক্সের সৌন্দর্য বিনষ্ট হবে। তাই মার্কেট নির্মাণের কোন প্রয়োজন নেই।
অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বিকেল ৪টায় সচিবালয়ে তাঁর সভাকক্ষে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ এবং জেলার যোগাযোগ, স্বাস্থ্য ও বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বিষয়ক এই সভা শুরু হয়। বিকেল পৌনে ৬টায় সভা শেষ হয়।
সভার আলোচ্য বিষয়ের মধ্যে ছিলো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার, ওসমানী হাসপাতালের যন্ত্রপাতি, ২০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল নির্মাণ, আাড়াই শয্যার সদর হাসপাতাল, ছাত্রাবাস নির্মাণ, চৌকিদেখি থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত চারলেন রাস্তা, এয়ারপোর্ট-বাদাঘাট-টুকেরবাজার চারলেন সড়ক, কাজিরবাজার সেতুর সংযোগ সড়ক, বিদ্যুৎ ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, অগ্রগতি ও সমস্যা এবং এমসি কলেজ খেলার মাঠ।
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে জানিয়ে সংশ্লিষ্টরা অর্থমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে এবং ডিসেম্বরেই নতুন কারাগারে বন্দি স্থান্তারের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, সিলেট এমন একটা শহর যেখানে শ্বাসপ্রশ্বাস ফেলার কোন জায়গা নেই। যত্রতত্র অপরিকল্পিতভাবে মার্কেট ও বাড়িঘর নির্মাণের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই, পুরাতন কারাগারের ভেতরে প্রতœসম্পদ ও দু’টি পুকুর সুরক্ষিত রেখে একটি গ্রীণ পার্ক নির্মাণের ডিজাইন প্রস্তুত করা হচ্ছে। নতুন কারাগার স্থানান্তরের পর এই প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। দ্রুত সময়ে সময়ে এটির কাজ শেষ হবে, যেখানে নগরবাসী শ্বাস সুযোগ পাবেন।
যানজট নিরসনকল্পে সিলেট নগরীর পার্কিং সুবিধার জন্য রংমহল টাওয়ারের পাশে সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে একটি পার্কিং জোন তৈরি করার কথা জানান অর্থমন্ত্রী। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে সিলেট তেমুখি-বাদাঘাট সড়ক দ্রুত মেরামতের নির্দেশ দেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, সিলেটের স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের একটি মহাপরিকল্পনা সরকারের হাতে রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সেগুলো বাস্তবায়নও হচ্ছে। একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১০০ শয্যার শিশু হাসপাতাল ২০০ শয্যায় উন্নয়নের প্রক্রিয়া চলছে। প্রয়োজনীয় ভবন নির্মাণসহ যাবতীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সদর হাসপাতাল নির্মাণে জটিলতা ছিলো তা নিরসন করে দিয়েছি। যেসব উন্নয়ন প্রকল্প চলমান আছে সেগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন হলয় নতুন নতুন প্রকল্প হাতে নেয়া সম্ভব হবে বলে জানান অর্থমন্ত্রী।
বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণ বিশাল গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক একটি কাজ। যেটার জন্য সিলেটবাসী আজীবন আপনার কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। সিলেটের চলমান উন্নয়ন প্রকল্প সমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে কামরান আরও বলেন, আপনার মাধ্যমে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার সিলেটবাসীকে অনেক কিছু দিয়েছেন। তিনি সিলেটের উন্নয়নে অত্যন্ত আন্তরিক। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার পাশাপাশি সিলেটের উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেয়া  প্রয়োজন।
সভায় সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্মিত কারাগারের কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি যাতায়াতের রাস্তাগুলো প্রশস্তকরণের দাবি জানান। আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দিন বলেন, নতুন কারাগারে প্রায় আড়াই শ’ পরিবার থাকবে। কারাগারের আশপাশে স্কুল প্রতিষ্ঠান নেই। তাই স্কুল নির্মাণ প্রয়োজন। এছাড়া কারাগারে খেলার মাঠ নির্মাণের দাবি জানান তিনি। জেল কোড অনুযায়ী বাউন্ডারির ভেতরে ৩০ জায়গা থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, আরো জমি অধিগ্রহণ প্রয়োজন।
ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল আবু সিনা ছাত্রাবাসের জায়গা সিলেট সদর হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানান। নতুন জায়গায় ছাত্রাবাস নির্মাণের কথা জানান তিনি। বালুচরে সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালের জায়গা ২০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব করেন ডা. দুলাল।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ মেডিকেল কলেজকে আধুনিক ও সময়োপযোগি করতে জরুরি ভিত্তিতে ভবন সম্প্রসারণ, নতুন বাস এবং সিটি ও এমআরআই মেশিন প্রদানের দাবি জানান।
এছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের করুণ অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ভোগান্তি নিরসনে সিলেটে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং চিকিৎসাসহ সকল সমস্যা নিরসন ও টেকসই উন্নয়নে অর্থমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানান উপস্থিত নেতৃবৃন্দ।
জাতীয় অধ্যাপক ডা. শাহলা খাতুন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এর চেয়ারম্যান ও জাতিসংঘস্থ বাংলাদেশ মিশনের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. একে আব্দুল মোমেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিসিবি’র পরিচালক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একে মাহবুবুল হক, অধ্যক্ষ ডা. মোর্শেদ আহমদ চৌধুরী, স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার এম এ মাহী, নির্বাহী প্রকৌশলী একেএম বদরুল ইসলাম, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, সিলেটের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম, সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এনামুল হাবীব, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী মো. আব্দুল আহাদ, সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম আজাদ, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর সিলেট ব্যুরো প্রধান মকসুদ আহমদ মকসুদ, বিদ্যুৎ ও বিতরণ বিভাগ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, গণপূর্ত, সওজসহ বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিগণ এতে উপস্থিত ছিলেন। বিজ্ঞপ্তি