কাজিরবাজার ডেস্ক :
গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে নিজের গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আগামী রবিবার আদালতে যাচ্ছেন। যদিও তার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন শর্ত দিয়েছেন আগের মতোই ‘পর্যাপ্ত নিরাপত্তার’। যেহেতু আগের মতো শব্দটা ব্যবহার করেছেন তাই ধরেই নেয়া যেতে পারে সরকার সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার হেরফের করবে না। ফলে বিএনপি চেয়ারপারসন গত প্রায় তিন মাস ধরে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান থেকে বের হচ্ছেন।
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণার পর থেকেই বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়ে। গতকাল সারাদেশে হরতাল থাকলেও রাজধানী ছিল হরতাল মুক্ত। বৃহস্পতিবার দেয়া বিএনপির বিবৃতিতে দেশবাসীকে অবরোধ হরতাল পালনের জন্য অভিনন্দন জানালেও নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। এদিকে নিরাপত্তার শর্ত সাপেক্ষে আদালতে যাবার আভাষের কারণে ধরে নেয়া যায় আগামী ৫ জানুয়ারি কোনো হরতাল-অবরোধ থাকবে না। আর গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে একবার বের হলে বিএনপি চেয়ারপারসন আবার এই কার্যালয়ে ঢুকতে পারবেন কিনা তা অনিশ্চিত । এ কথা এখন বলা যায় যে কার্যালয়ে নয় আদালত থেকে জামিন নিয়ে নিজ বাসভবনে ফিরবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আর এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটবে গুলশান কার্যালয়ে তার প্রায় তিন মাসের স্বেচ্ছাবন্দি বা অবস্থানেরÑ এ রকম সংবাদ কয়েকদিন আগেই প্রকাশিত হয়েছিল। গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গুলশান কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে গুলশান মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজটিতে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোটকেন্দ্র হওয়ায় খালেদা জিয়া তার কার্যালয় ছেড়ে বাসভবনে ফিরে যাবেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বললেন, খালেদা জিয়া আগামী রবিবার আদালতে যেতে পারেন। এর আগে আদালতে আত্মসমর্পণের শর্ত হিসেবে খালেদাকে আবার তার কার্যালয়ে ঢুকতে দেয়ার নিশ্চয়তা চাইলেও গতকাল সে ব্যাপারে কিছু বলনেনি খন্দকার মাহবুব হোসেন। অর্থাৎ আদালত থেকে কার্যালয়ে না ফিরে বাসায় ফিরলেও আপত্তি নেই!
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে খন্দকার মাহবুব বলেন, ‘উনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। উনি আদালতে যেতে ইচ্ছুক। অতীতেও বলেছি উনি নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালতে যেতে পারছেন না। বিগত দিনে যখন আদালতে গিয়েছিলেন পথে তার গাড়িবহরের ওপর আক্রমণ হয়েছিল। এই কারণেই খালেদা জিয়া শঙ্কিত, আমরাও আইনজীবী হিসেবে শঙ্কিত যে উনি আদালতে যাওয়ার পথে হামলা হতে পারে। সে কারণে সরকারের দায়িত্ব হবে তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া।’
আগামী ৫ এপ্রিল রবিবার জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট ও জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য রয়েছে। ঢাকার তৃতীয় বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের বিশেষ আদালতে এ দুটি মামলার বিচার চলছে।
আর আগে গত ৪ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গ্রেফতারি পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন নাকচ করে দিয়ে শুনানির এই দিন ঠিক করে দেন বিচারক।
খন্দকার মাহবুব বলেন, নিরাপত্তার বিষয়ে যদি তিনি (খালেদা জিয়া) আশ্বস্ত হন, তাহলে অবশ্যই তিনি সম্মান দেখিয়ে আদালতে উপস্থিত হবেন।
কী ধরনের নিশ্চয়তা চাইছেন জানতে চাইলে খালেদার আইনজীবী বলেন, ‘উনার জানমালের নিরাপত্তা। সংবিধানে আছে জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার কর্তৃপক্ষ হলো সরকার… সেই ধরনের নিরাপত্তা।’
‘একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আদালতে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের নিরাপত্তা খালেদার পাওয়া উচিত, সে ধরনের নিরাপত্তা তাকে দিতে হবে বলেও দাবি করেন তার উপদেষ্টা।
বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মামলা দুটি অন্য আদালতে স্থানান্তরের নির্দেশনা চেয়ে খালেদা জিয়া হাইকোর্টেও একটি আবেদন করেছেন, যার শুনানি এপ্রিলেই হওয়ার কথা।
ওই আবেদনের বিষয়টি উল্লেখ করে খন্দকার মাহবুব বলেন, ওই আবেদনের সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালতÑ যার প্রতি আমরা অনাস্থা দিয়েছি, তার পক্ষে মামলাটির শুনানি করা নীতিগতভাবে উচিত হবে না।
লাগাতার অবরোধ ডেকে ৩ জানুয়ারির পর থেকেই গুলশানের নিজের কার্যালয়ে অবস্থানরত খালেদা টানা কয়েকটি ধার্য দিনে আদালতে অনুপস্থিত থাকায় গত ২৫ ফেব্র“য়ারি বিচারিক আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
আত্মসমর্পণের ক্ষেত্রে কয়েকটি শর্ত তুলে ধরে খন্দকার মাহবুব সে সময় সাংবাদিকদের বলেছিলেন, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং গুলশানের কার্যালয়ে পুনরায় ঢোকার নিশ্চয়তা পেলেই আদালতে যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।