কাজিরবাজার ডেস্ক :
অবশেষে খেয়াল হলো নির্বাচন কমিশনের (ইসি)। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিসহ অতিগুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রচারণার সুযোগ এখন আর রাখতে চায় না নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি।
স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচনের বিলে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর দলীয়ভাবে মেয়র পদে নির্বাচনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয় শনিবার (২১ নভেম্বর)।
সে অনুযায়ী, নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালার খসড়া চূড়ান্ত করেছে ইসি।
রবিবার (২২ নভেম্বর) খসড়াটি অনুমোদনের জন্য দ্বিতীয় দফায় তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এতে মন্ত্রী-এমপিসহ অতিগুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগীদের প্রচারণার সুযোগ রাখা হয়নি। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আসলে তা চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন করবে সংস্থাটি।
এর আগে গত ৫ নভেম্বর পাঠানো খসড়া আচরণ বিধিমালায় মন্ত্রী-এমপিসহ অতিগুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের প্রচারণার সুযোগ রেখেছিলো ইসি।
তখন (৮ নভেম্বর) নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আপনারা এ বিষয়টি যদি আগে আমাদের বলতেন, তবে আর অন্তর্ভূক্ত হতো না। এটা ভুলে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা কেউ খেয়াল করিনি। এটা ঠিক হয়নি।’
তার এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী-এমপিদের প্রচারণার সুযোগ বেখেয়ালে, এমন খবর প্রকাশিত হলে অন্যান্য মিডিয়াতেও তা ফলাও করে প্রচারিত হয়। এরইমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ও ইসির সেই খসড়া বিধিমালাটি ফেরত পাঠায়। একইসঙ্গে মন্ত্রণালয় মন্ত্রী-এমপিদের সুযোগ দেওয়ার বিধানটি বাদ দিতে বলে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচন আচরণ বিধিমালায় এখন মন্ত্রী-এমপিসহ অতিগুরুত্বপূর্ণ সুবিধাভোগীরা প্রচারণা চালাতে পারবেন না বলে বিধান রাখা হয়েছে।
সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে-প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, চিফ হুইপ, বিরোধীদলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে বুঝিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এদিকে নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালার খসড়াও পাঠিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়ে। এতে প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম তফসিল ঘোষণার পাঁচ দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়ার বিধান রাখা হচ্ছে। অর্থাৎ মেয়র পদে দলীয়ভাবে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে তফসিল ঘোষণার পর একটি জেলায় দলগুলোর কোন ব্যক্তি প্রার্থী মনোনয়ন দেবেন সেই ব্যক্তির নাম ইসিকে জানাতে হবে।
অন্যদিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সুযোগও রাখা হয়নি। আবার মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থীর ক্ষেত্রে ১০০ ভোটারের সমর্থন রাখার বিধানটি আনা হচ্ছে। এই ১০০ ভোটারের মধ্যে পাঁচজনের তথ্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে দৈবচয়নের ভিত্তিতে যাচাই করবেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
গত ২ নভেম্বর স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) নির্বাচনের সংশোধিত আইনের অধ্যাদেশ জারি করেন রাষ্ট্রপতি। এরপর তা ৩ নভেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ হয়। এরপর তড়িঘড়ি করে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা খসড়া চূড়ান্ত করে গত ৫ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় নির্বাচন কমিশন। আইন মন্ত্রণালয় আবার তা ফেরত পাঠায়। এরইমধ্যে শুধু মেয়র পদে পৌর নির্বাচন দলীয়ভাবে সম্পন্ন করার আইন সংসদে পাশ হয়।
এই প্রথম দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে ভোটের আয়োজন চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী ডিসেম্বরেই ২৪৫টি পৌরসভায় নির্বাচন করতে চায় ইসি। এক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয় থেকে বিধিমালা অনুমোদন হয়ে আসলে এ সপ্তাহের শেষ নাগাদ এ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের নির্বাচনে বিধান যুক্ত করে সংসদে স্থানীয় সরকার সম্পর্কিত পৃথক তিনটি বিল পাস হয়েছে।
বিলগুলো হলো, স্থানীয় সরকার (সিটি কপোরেশন) সংশোধন আইন ২০১৫, স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) সংশোধন আইন ২০১৫, স্থানীয় সরকার (উপজেলা পরিষদ) সংশোধন আইন ২০১৫।
গতকাল রবিবার রাতে সংসদে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন বিলগুলো পাসের সুপারিশ করলে সেগুলো সংসদীয় কমিটির সুপারিশ আকারে পাস হয়। তার আগে বিলগুলোর ওপর জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে প্রেরণ এবং কিছু সংশোধনী প্রস্তাব কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
সংশোধিত আইনে সিটি করপোরেশনের মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য কোনো ব্যক্তিকে কোন রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত বা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে মর্মে বিধান করা হয়েছে। তবে ঐ রাজনৈতিক দলকেও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল হতে হবে।
তার আগে সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ এ রাজনৈতিক দল কর্তৃক প্রার্থী মনোনয়ের বিধানের প্রস্তাব সম্বলিত সংশোধনী বিল গত ১১ নভেম্বর সংসদে উত্থাপিত হয়। গত বুধবার সংসদীয় কমিটি শুধু মেয়র ও চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়নের বিধান রেখে বিলগুলো চূড়ান্ত করে সংসদে রিপোর্ট দেয়।
বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্বলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে জনগণ ও জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ হতে সরাসরি অংশগ্রহণে স্থানীয় সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করার দাবি উত্থাপিত হয়ে আসছে। জনগণের গণতান্ত্রিক এই প্রত্যাশার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে রাজনৈতিক দলসমুহের সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে দলীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পাবেন। এতে প্রার্থীদের দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে এবং যথাযথভাবে রাজনৈতিক অঙ্গকার পালনের সুযোগ সৃষ্টি হবে।