ফাঁসি কার্যকরের জন্য সব প্রস্তুত ॥ সাক্ষাৎ করেছেন পরিবার ॥ আইনগত বিষয় যাচাই-বাছাই করেই রায় কার্যকর-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী

26

কাজিরবাজার ডেস্ক :
মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ saka-mujahid_91429মুজাহিদ ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর রায় বাস্তবায়নের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ। তবে বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, ‘আইনগত বিষয় যাচাই-বাছাই করেই রায় কার্যকর করা হবে। সে অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে না।’
এর আগে সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই জনের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করে। রিভিউ খারিজের এক দিনের মধ্যে আজ শেষ বিকালে প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতির সাক্ষরিত এই রায় প্রকাশ হয়। পরে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার কার্যালয় পুলিশ প্রহরায় বিশেষ বার্তা বাহকের মাধ্যমে রিভিউর রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়ে দেয়। রাতেই ট্রাইব্যুনাল রায়ের কপি ঢাকার জেলা প্রশাসক ও কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠায়। কারা সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাত নয়টার দিকে এই রায়ের কপি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছেছে। এরপর দুজনকে রায় পড়ে শোনানো হয়।
কারা সূত্র জানায়, দুই জনকে রায়ের কপি পড়ে শোনানো হবে এবং প্রাণভিক্ষার আবেদন বিষয়ে জানতে চাওয়া হবে। যদি তিনি আবেদন করেন,  সেক্ষেত্রে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে এর আগে মানবতা বিরোধী অপরাধে ফাঁসির দন্ড কার্যকর করা আব্দুল কাদের মোল্লা ও কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ প্রাণভিক্ষার আবেদন না করেন, সেক্ষেত্রে রায়ের কপি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর নির্বাহী আদেশের ফাইল প্রস্তুত করে তা পাঠানো হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আদেশের ফাইলে স্বাক্ষর করার পরই রায় কার্যকর করা হবে।
বৃহষ্পতিবার বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের সঙ্গে কারাগারের ভেতরে সাক্ষাত করেছেন স্বজনরা।  অপর দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও আশপাশ এলাকার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। কারা ফটকে পুলিশ, কারারক্ষীর পাশাপাশি র্যাবও দায়িত্ব পালন করছে। কারাগারের আশেপাশের সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। কারাগারের আশপাশের উচুঁ ভবনের ছাদেও বসানো হয়েছে পুলিশ প্রহরা।
কারা অধিদফতরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, যে কোন আসামির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার জন্য কারাগার প্রস্তুত থাকে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ক্ষেত্রেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আদালতের রায়ের কপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে না। রায়ের কপি হাতে পাওয়ার পর সে অনুয়ায়ি বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা হবে। আর কপি আসার পর সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মুজাহিদ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে,  সেক্ষেত্রে রায়ের কপি অনুয়ায়ি ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ফাঁসির মঞ্চ : ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের দক্ষিন সীমানা প্রচীর ও ভবনের মাঝখানে একটি খালি জায়গায় স্থায়ী ফাঁসির মঞ্চ। যা দৈর্ঘ্যে ৪০ ফুট ও প্রস্তে ৩০ ফুট। মঞ্চের পাটতন কাঠের এবং কাঠের নিচে কুয়া সদৃশ্য গর্ত। যুগের পর যুগ এই এই স্থানটিকেই ফাঁসির স্থান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। জেল খানায় এই স্থানটি ফাঁসির মঞ্চ নামে পরিচিত। ফাঁসি কার্যকর করার আগে মঞ্চটিকে ঘিরে প্যান্ডেল টানানো হয়। যাতে বাইরে থেকে কেউ প্যান্ডেলের ভেতরের ঘটনাবলি দেখতে না পারে। এরপর সংশ্লিষ্টদের উপস্থিতিতে নির্ধারিত সময় মৃত্যুদন্ড তথা ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
এদিকে রিভিউ আবেদনের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পড়ে শোনানো হয়েছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা দেশের দুই শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও  সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীকে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) রাত সোয়া ৯টার পর তাদের এ রায় পড়ে শোনান কারা কর্মকর্তারা। দায়িত্বশীল একটি সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
রাত আটটা ৪৫ মিনিটে রায় দু’টির কপি পৌঁছে কারাফটকে। রায়ের কপি গ্রহণ করেন সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির। আনুসঙ্গিক প্রক্রিয়া শেষ করে তা পাঠানো হয় ভেতরে। রাত সোয়া ৯টা থেকে কারা কর্মকর্তারা রায় দু’টি আলাদা আলাদাভাবে পড়ে শোনান কনডেম সেলে থাকা মুজাহিদ ও সাকা চৌধুরীকে।
সূত্রটি জানায়, রায় পড়ে শোনানোর পর দু’জনের কাছেই রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইবেন কিনা জানতে চাওয়া হয়। জবাবে উভয় দণ্ডপ্রাপ্তই আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলতে চান। কিন্তু তাদের জানানো হয়, এ পর্যায়ে কেউই আইনজীবীর সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না। তখন দু’জনই নিজ নিজ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে চান।
এর আগে, রাত ৮টা ৩৬ মিনিটে রায় দু’টির কপি নিয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের উদ্দেশে রওনা হন ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আফতাবুজ্জামান, জ্যেষ্ঠ আইন গবেষণা কর্মকর্তা কাইয়ুম ফয়সাল, ডেসপাস রাইডার সিরাজুল ইসলাম, লাইব্রেরিয়ান তাপস চন্দ ও অফিস সহকারী আবু মুসা।
সন্ধ্যা সাতটা ২৪ মিনিটে রায় দু’টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে যায় বিচারিক আদালত ট্রাইব্যুনালে। সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তীর নেতৃত্বে তিনজন পৌঁছে দেন।
তারও আগে, রায় প্রদানকারী প্রধান বিচারপতিসহ চার বিচারপতি স্বাক্ষর দেওয়া শেষ করলে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় থেকে সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে সাকা চৌধুরী ও ছয়টা ৩৫ মিনিটে মুজাহিদের রিভিউ আবেদনের রায় প্রকাশিত হয়। সাকার রিভিউ আবেদনের পূর্ণাঙ্গ রায় ১৩ পৃষ্ঠার ও মুজাহিদের পূর্ণাঙ্গ রায় ২৯ পৃষ্ঠার।
সন্ধ্যা ৬টার দিকে রায়ে স্বাক্ষর দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ চার বিচারপতি। অন্য বিচারপতিরা হচ্ছেন, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।