কাজিরবাজার ডেস্ক :
দেশব্যাপী স্বাধীনতা আন্দোলন আরও জোরদার হতে থাকে। ৫ম দিনের মতো হরতাল পালনকালে পাকিস্তানী সেনাদের গুলিতে চট্টগ্রামে ৩, টঙ্গীতে ৪ শ্রমিক, খুলনায় ২, রাজশাহীতে ১, যশোরে ১ জন নিহত হন। আহত হন আরও ১৮ জন। মুক্তির ঢেউ এদিন আছড়ে পড়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেও। মার্শাল ল’ অথরিটি থেকে ঘোষণা করা হয়, ঢাকায় সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে হরতালের পর ব্যাংক খোলা থাকে। মসজিদে মসজিদে জুমার নামাজের পর শহীদানের আত্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকাসহ সারাদেশে প্রতিবাদ ও শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। লাহোরে দেশের পূর্বাঞ্চলে সাম্প্রতিক আন্দোলনে নিহত শহীদদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং সঙ্কটময় মুহূর্তে দেশের সংহতির জন্য বিভিন্ন মসজিদে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জেড এ ভুট্টো রাওয়ালপিন্ডির প্রেসিডেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে ৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আলোচনা করেন। অবসরপ্রাপ্ত এয়ার মার্শাল আসগর খান বিকেলে করাচী থেকে ঢাকায় পৌঁছান। তিনি রাতে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ধানমন্ডির বাসভবনে সাক্ষাত করেন। রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদেশী বেতারে প্রচারিত ‘শেখ মুজিব জনাব ভুট্টোর সঙ্গে ক্ষমতা ভাগবাটোয়ারা করতে রাজি আছেন’ সংক্রান্ত সংবাদকে ‘অসদুদ্দেশ্যমূলক’ ও ‘কল্পনার ফানুস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধিকার আন্দোলনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিকেলে কবি, সাহিত্যিক ও শিক্ষকবৃন্দ মিছিল নিয়ে রাজপথে নেমে আসেন। ছাত্রলীগ ও ডাকসুর উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম থেকে মিছিল বের হয়। এগারো দফা আন্দোলনের অন্যতম নেতা তোফায়েল আহমদ ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দান থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করার জন্য ঢাকা বেতার কেন্দ্রের প্রতি আহ্বান জানান। রাতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ এক বিবৃতিতে বলেন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, রংপুর, সিলেটসহ দেশের অন্যান্য স্থানে মিলিটারির বুলেটে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষ, শ্রমিক, কৃষক ও ছাত্রদের হত্যা করা হচ্ছে। নির্বিচারে নিরস্ত্র মানুষকে এভাবে হত্যা করা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ ছাড়া আর কিছুই নয়। রাওয়ালপি-িতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে পিপলস পার্টির প্রধান জেড এ ভুট্টোর আলোচনা বৈঠক শেষে পার্টির মুখপাত্র আবদুল হাফিজ পীরজাদা মন্তব্য করেন, জাতীয় পরিষদ অধিবেশন স্থগিত রাখার প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া যেভাবেই বিচার করা হোক না কেন, তা অত্যন্ত অবাঞ্ছিত এবং আদৌ যুক্তিযুক্ত নয়। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য এদিন ঢাকায় একটি কন্ট্রোল রুম চালু হয়। বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে ক্রমেই বাড়তে থাকা বাঙালি-বিহারী সংঘর্ষ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান, এম এ মান্নান, মৌলভী সৈয়দ আহমেদ, এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, ইদ্রিস আলম, এম আর সিদ্দিকী, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। সভায় এম আর সিদ্দিকীকে প্রধান করে একটি শান্তি কমিটি করা হয়। কিন্তু বিহারী-বাঙালি দাঙ্গায় পাকিস্তানী প্রশাসনের একতরফা বিহারীদের প্রতি সহানুভূতির কারণে এম এ হান্নান এ কমিটির বিরোধিতা করেন। রাতে পতেঙ্গার দিকে পাকিস্তানী আর্মির গাড়ি থেকে নিরীহ বাঙালীর ওপর গুলি ছোড়া হয়েছিল।
