সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার বরাম হাওর ও কালনী নদী তীরবর্তী উজানধল গ্রামে আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘শাহ আব্দুল করিম লোকউৎসব-২০১৫’। দুদিনব্যাপী উৎসব চলবে শনিবার ভোররাত পর্যন্ত। এ উপলক্ষে প্রত্যন্ত জনপদ উজানধল গ্রামের পথে হাজারো বাউল ভক্তের ঢল নেমেছে।
বাউল সম্রাট আব্দুল করিমের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলাধীন ধলআশ্রম গ্রামে। ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারি দিনমজুর ইব্রাহিম আলীর স্ত্রী নাইওরজান বিবির গর্ভে তিনি জন্ম নেন। তার আদি বাসস্থান ধলআশ্রমে হলেও তারা ১৯৫৭ সাল থেকে ধল আশ্রমের পার্শ্ববর্তী পাড়া উজানধল গ্রামে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
ভাটি বাংলার হাওরাঞ্চলের এককালীন রাখাল বালক শাহ্ আব্দুল করিম এখন আর নেই। কিন্তু তিনি বেঁচে আছেন তার সৃষ্টির মধ্যে। একজন সাধক, বাউল হিসেবে বাংলার জনপদে যার বিচরণ চলি¬শের দশক থেকে। গায়ের মেঠো পথে হেঁটে হেঁটে তিনি গান রচনা করেছেন। সে গানে সুর দিয়ে শ্রোতাদের বিমোহিত করেছেন। উত্তর প্রজন্মের কণ্ঠে করিমের মারফতি, মুর্শিদি, দেহতত্ব, বিরহ-বিচ্ছেদ এবং গণসংগীত সফল তালে ধ্বনিত হচ্ছে সিলেট, ময়মনসিংহ, কুমিল¬া ও আসাম ত্রিপুরা অঞ্চলে।
শাহ আব্দুল করিমের গানের মর্মবাণী মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে ২০০৬ সালে প্রথমবারের মতো প্রচলন হয় লোকউৎসবের। এরই ধারাবহিকতায় প্রতিবছর আয়োজন করা হয় লোকউৎসবের। ভাটিবাংলার চারণ কবি করিম দরিদ্র নিপীড়িত মানুষের জয় গান গেয়ে গেছেন সারা জীবন। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী বাউল করিম গণমানুষের গান রচনা করেছেন। বাউল গান কোনো অভিজাত শ্রেণীর গান নয়; কিন্তু এ গান মানুষের মনে আত্মজিজ্ঞাসার ঝড় তুলে নিজেকে নিয়ে যায় পরআত্মার সন্ধানে। লোকউৎসবকে ঘিরে উজানধল গ্রামের সুবিশাল মাঠ জনসমুদ্রে পরিণত হয়। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা বাউল শিল্পী ও প্রখ্যাত লোক সংগীতের গায়কদের মিলনমেলায় পরিণত হয় উৎসবস্থল। বাউলভক্তদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো এলাকা। এ উৎসবে অংশ নিতে দেশ-বিদেশ থেকে তার ভক্ত-অনুরাগী, শিল্পীরা ছুটে আসেন উজানধলে।
বাউল শাহ আব্দুল করিম নেত্রকোণার উকিল মুন্সীসহ ভাটির বাউলরা নবীর জীবনী, রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলার গান গেয়ে আনন্দের ঢেউ তুলতেন পুরো ভাটি বাংলায়। তার রচিত গানের মধ্যে রয়েছে, গণসঙ্গীত, বাউল, মুর্শিদি, জারিসারি, ভাটিয়ালি প্রভৃতি। গাইতে গাইতে গান রচনার প্রতিও মনোনিবেশ করেন তিনি। করিম গান রচনা করেছেন প্রায় দেড় হাজার। প্রকাশিত গানের বই হচ্ছে আপ্তাব সংগীত, গণসংগীত, কালনীর ঢেউ, ধলমেলা, ভাটির চিঠি ও কালনীর কূলে। আব্দুল করিম একজন বাউল হিসেবে শুধু দেহতত্ত্ব, মুর্শিদি ও মারফতি গানই রচনা করেননি, চারণ কবি হিসেবে মানুষের সুখ-দুঃখ, অভাব-অভিযোগ, অত্যাচার ও শোষণ-নির্যাতন নিয়েও গান রচনা করেছেন।