কাজিরবাজার ডেস্ক :
তুমি আসবে তাই শিমুল গাছটি রাঙা ফুলে ছেয়ে গেছে। বিকালের সোনালি আভায় দিগন্ত জুড়ে সোনালি রঙ ধারণ করেছে। শিমুল-পলাশ-কৃষ্ণচূড়ার বনে লেগেছে আগুন। তবে এবারের বসন্তে শুধু কৃষ্ণচূড়ার বনেই আগুন লাগেনি, লেগেছে গোটা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে। শঙ্কা, অনিশ্চয়তা, সহিংসতায় পুড়ছে দেশ। ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতিতেও লেগেছে অশুভ রাজনৈতিক আগুন। শত বাধা-বিপদের মধ্যেও অন্যরকম এক ভালোবাসা আর ভালোলাগার অনুভূতি নিয়ে হাজির হয়েছে রঙিন বসন্ত।
প্রকৃতির সৌন্দর্যের সঙ্গে মিলেমিশে আজ একাকার হওয়ার উৎসব। বসন্তের হাওয়া আর পুষ্পের রঙ রাঙিয়ে দেবে কোটি বাঙালির মন। বসন্তের অপার্থিব মুগ্ধতার ঘোরে হৃদয় নাচবে আপন সুরে, আপন খেয়ালে। এজন্যই বসন্তবাতাসে পুলকিত ভাটিবাংলার লোককবি শাহ আবদুল করিম গেয়েছেনথ ‘বসন্ত-বাতাসে সই গো/বসন্ত বাতাসে/বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে…’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, ‘রঙ লাগালে বনে বনে।/ঢেউ জাগালে সমীরণে/আজ ভুবনের দুয়ার খোলা দোল দিয়েছে বনের দোল্তা।’ এ কেবল কবিগুরুর ভাষাতেই নয়, বাস্তবেও ফাগুন হাওয়ার দোলা লেগেছে বাংলার নিসর্গে। ফাল্গুন-চৈত্রের সম্মিলনে গাছে গাছে নতুন পাতার সঙ্গে বাগানে বাগানে ফুটেছে নানা রঙের ফুল। তাই ষড়ঋতুর এই দেশে বসন্তকে ঋতুরাজ উপাধি দেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন হিম-কুয়াশায় ঢাকা শীতের পর রুক্ষ মৃতপ্রায় নিসর্গে উষ্ণতার স্পর্শ দিয়ে জীবনের স্পন্দন ফিরিয়ে আনে বসন্ত। তাই বসন্ত মানেই সুন্দরের উদ্ভাসন, আর জীবনের জয়গান। ভালোবাসা আর নবযৌবনেরও প্রতীক এ ঋতু। তাই যাপিত জীবনের সব দুঃখ-কষ্টের মাঝেও বাঙালি বরণ করে নিচ্ছে বসন্তকে।
ডিজিটাল এ যুগে বসন্তের বার্তা ছড়িয়েছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগের বিভিন্ন সাইটে। এসব সাইটে বসন্ত নিয়ে নানা মন্তব্য আর মনের গহিন আবেগ প্রকাশ করেছে বসন্তপ্রেমীরা। অনেকেই তাদের প্রোফাইলে যোগ করেছেন বসন্তের ফুল। ফেসবুকে ফুল মিললেও ইটপাথরের যান্ত্রিক এ নগরে দীর্ঘ হরতাল-অবরোধের মধ্যে বসন্তের ফুল খুঁজে পাওয়া একটু কঠিনই বটে। তবে তাতে কিছু যায় আসে না। কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক, আজ বসন্ত।’ ব্যস্ত এ নগরে হয়তো কাজের চাপে কেউ কেউ ভুলে যেতে পারেন বসন্তের কথা; তবে তরুণ-তরুণীদের মনে গুঞ্জরিত হচ্ছে ভালো লাগার গান, ভালোবাসার গান। বাসন্তি রঙের শাড়ি পরে, খোঁপায় গাঁদা-গোলাপসহ বসন্তের ফুলে সেজে তরুণীরা বিভিন্ন স্থানে মেতে উঠবেন। বসন্তের প্রথম দিনে অনেকে কর্মস্থলেও আসেন বাসন্তি সাজে। ফাগুনের শুরুতেই হয়তো কেউ কেউ প্রকৃতির শোভা দেখতে বেরিয়ে পড়েন আনন্দ ভ্রমণে। কানে বেজে উঠতে পারে ঋতুরাজের নকিব কোকিলের সুমধুর কুহু স্বর। এ ফাগুন কেবল প্রকৃতির কথাই মনে করিয়ে দেয় না; আমাদের ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের শহীদদের কথাও স্মরণ করিয়ে দেয়। বায়ান্নর ৮ ফাল্গুন তথা একুশের শিমুল-পলাশরাঙা দিনে তারুণ্যের সাহসী প্রত্যয় আর বাঁধভাঙা আবেগ সেদিন মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছিল। বসন্তকে বরণ করতে সিলেট জুড়ে থাকছে নানা কর্মসূচি।
পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসব উদযাপনের জন্য দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করছে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় সকাল ৭টা থেকে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া বাহাদুরশাহ পার্কে বিকাল সাড়ে ৪টায়, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবরে ৪টায় ও উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে উন্মুক্ত মঞ্চে সাড়ে ৪টা থেকে বসন্তের অনুষ্ঠান শুরু হবে।