স্টাফ রিপোর্টার :
কোম্পানীগঞ্জে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোর ও ডাকাতচক্র। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে চুরি-ডাকাতির ঘটনা। এসব ডাকাতির ঘটনায় মামলা হলেও সুরাহা হয়নি একটিরও। আটক ডাকাতদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে ভুক্তভোগীদের ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত রবিবার দিনগত রাতে উপজেলার নয়াবাজারের পশ্চিমে ডাকাতদের কবলে পড়েন ভোলাগঞ্জের তিন পাথর শ্রমিক। ডাকাতরা শ্রমিকদের সাথে থাকা মোবাইল সেটসহ সারাদিনের রোজগারের টাকা ছিনিয়ে নেয়। ডাকাতির শিকার তিনজন হলেন ধীরেন্দ্র বিশ্বাস (৩৫), অনিরুদ্ধ দাস (৩৬) ও বিশ্বজিত দাস (২৮)। এদের প্রত্যেকের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলায়। এর আগের দিন রাতে ভোলাগঞ্জের রোপওয়ে এলাকার কয়েকজন আনসার সদস্য স্থানীয় দয়ারবাজার থেকে ফেরার পথে ডাকাতদের কবলে পড়েন। এসময় ডাকাতদল তাদের সাথে থাকা মোবাইল সেটসহ নগদ টাকা নিয়ে যায়। তবে এ ঘটনায় আনসার সদস্যরা থানায় কোন অভিযোগ করেননি।
কোম্পানীগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা আবিদুর রহমান জানান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা এবং কোম্পানীগঞ্জে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত থাকায় চুরি-ডাকাতির ঘটনা বাড়ছে। ডাকাতি বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। এসব অপরাধ দমনে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষের কড়া নির্দেশ থাকলেও মাঠ পুলিশ তেমন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারছে না। কোম্পানীগঞ্জে বছরে কতটি চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই সংঘটিত হয়, তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই। সরকারিভাবে যা রেকর্ডভুক্ত হয়, তা সংঘটিত অপরাধের তুলনায় খুব কম। তবে ২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত নানা সূত্র মতে, এ উপজেলায় কমবেশী অর্ধশত ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে। ডাকাতদের আঘাতে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে শতাধিক লোক। নগদ টাকাসহ লুট হয়েছে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার মালামাল।
গত এক বছরে ঘটে যাওয়া ডাকাতির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ঘটনা হলো- গত ২২ ডিসেম্বর গৌরিনগরের মৃত নজির উদ্দিনের পুত্র হোসাইন বিন নজির (হোসাইন) খাগাইল বাজারের দোকান থেকে বাড়ি ফেরার পথে ডাকাতদের কবলে পড়েন। ডাকাতরা তার সাথে থাকা নগদ ৬৫ হাজার টাকা, ডিজিটাল ক্যামেরা ও দুটি মোবাইল সেট, একটি ভিসা কার্ড, ১’শ ৫০টি মোবাইল রিচার্জ কার্ড, একটি ল্যাপটপ, জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রায় ১ লক্ষ ৭১ হাজার ৪’শ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। এ ব্যাপারে নজির হোসাইন সিলেট পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৭টায় স্কয়ার কনজ্যুমারের পণ্য ডেলিভারী করে আসার সময় পাড়–য়া ব্রীজে কোম্পানীর কর্মকর্তাকে একদল মুখোশধারী ডাকাত আক্রমণ করে। এ সময় তার সাথে থাকা ১ লাখ ১৬ হাজার টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা ৬টায় শাহজালাল এন্টারপ্রাইজ ফিজা পরিবেশক দয়ারবাজার মাল ডেলিভারী করে আসার পথে কলাবাড়ী ব্রীজে একদল ডাকাত আটক করে তার কাছ থেকে ৩৬ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। একই রাত ৮টায় ধলাই ব্রীজে একদল ডাকাত আক্রমণ করে ইউনিলিভার কোম্পানীর লোকদের কাছ থেকে ৩৭ হাজার টাকা নিয়ে যায়। ২৫ সেপ্টেম্বর পাড়ুয়া নোয়াগাঁও রাস্তায় একদল ডাকাত আক্রমন করে স্কয়ার টয়লেট্রিজ এর লোকদের কাছ থেকে ৪৭ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। ১ অক্টোবর রাতে টুকেরগাঁও আবু নছরের বাড়ীতে একদল ডাকাত হানা দিয়ে নিয়ে যায় নগদ ৫২ হাজার টাকা। ঈদের দিন রাতে টুকের বাজারে ব্যবসায়ী আব্দুল হালিম মোল¬ার ঘরে আক্রমণ করে ডাকাত দল নিয়ে যায় নগদ ২৫ হাজার টাকা ও আরও ৫০ হাজার টাকার মালামাল। ৩ আগষ্ট নৌকাযোগে দয়ারবাজারের আজির উদ্দিনের বাড়ীতে হানা দিয়ে ডাকাত দল নগদ ১৭ লক্ষ টাকা এবং ১২ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। একই রাতে একই গ্রামের জামাল উদ্দিনের বাড়ীতেও হামলা চালায় ডাকাত দল। এ সময় তারা নগদ ১১ লক্ষ টাকা লুট করে নেয়। একই সময়ে ডাকাত দল পার্শ্ববর্তী আরেকটি টেলিকমের দোকানে আক্রমণ করে নগদ ২ লক্ষ টাকা ও ২০ থেকে ২৫টি মোবাইল সেট নিয়ে যায়। গত বছরের ১৩ আগষ্ট সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের বর্ণি এলাকায় সিএনজি অটোরিক্সা থামিয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ে যায় সশস্ত্র ডাকাত দল। এ সময় গাড়িতে ছিলেন স্থানীয় গৌখালের পার গ্রামের আকদ্দছ আলী, মদিনা স্টোন ক্রাশারের মালিকের ছেলে হাফিজ আব্দুল্লাহ, আল্লাহর দান স্টোন ক্রাশারের ম্যানেজার আলী হোসেন। ২০ মার্চ সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ সড়কের কাটাখাল নামক স্থানে রাত ১০টায় রাস্তায় বাঁশ ফেলে ডাকাত দল ট্রাক ও সিএনজি অটোরিক্সায় ডাকাতি চালায়। এ সময় দুই পাশে ২০/২৫টি ট্রাক ও সিএনজি ড্রাইভার ও যাত্রীদেরকে নামিয়ে বেদম প্রহার করে ডাকাত দল। মোবাইল ও নগদ টাকাসহ প্রায় ৫ লক্ষ টাকার জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়। একই বছরের ২৫ জানুয়ারী কোম্পানীগঞ্জে গণপিটুনিতে সুরুজ আলী (৩৫) নামের এক ডাকাত নিহত হয়। সে উপজেলার পুরান মেগারগাঁওয়ের মৃত চান মিয়ার ছেলে।
সংঘটিত এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ডাকাতির ঘটনায় মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালায় পুলিশ। এসব অভিযানে কিছু ডাকাত গ্রেফতার হলেও ডাকাতদের বড় একটি চক্র দিব্যি ঘুরে বেড়ায়। এদের সাথে কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার ‘সখ্যতা’র অভিযোগ তুলেন এলাকাবাসী। তারা বলেন, ডাকাতির ঘটনাকে অধিকাংশ সময় পুলিশ ডাকাতি বলতে অস্বীকার করছে। তারা ডাকাতির ঘটনাকে চুরি বলে মামলা নিচ্ছে। আবার মামলার এজাহারে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পুলিশ কমিয়ে লিখছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি দেলওয়ার হোসেন জানান, ডাকাতদের গ্রেফতারে আমরা প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করছি। আমাদের রীতিমত অভিযানের ফলে এখন ডাকাতি কম হয়। ডাকাতদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।