কুলাউড়া থেকে সংবাদদাতা :
কুলাউড়া উপজেলায় এখন এক আলোচিত নাম দয়াল অলমিক। সামান্য এক চা শ্রমিক হলেও ঢাকা বিমানবন্দর ষ্টেশনে অস্ত্রসহ ধরা পড়ার পরে তিনি উঠে এসেছেন মানুষের আলোচনায়। তিনি অস্ত্রবহনকারী না অস্ত্র চোরাচালানী সেটাই আলোচনার মূল বিষয়।
উপজেলার কালিটি চা বাগানে মাদ্রাজী লাইনের এক কুড়ে ঘরে বসবাস দয়াল অলমিকের। মা আদলছমী অলমিক আর এক প্রতিবন্ধী বোন পূর্ণিমা অলমিককে নিয়েই ছোট সংসার। সরেজমিন মাদ্রাজী লাইনে গেলে আদলছমী অলমিকের সাথে। তিনি জানান, মাত্র ৬ মাস বয়সের রেখে মারা যান দয়াল অলমিকের বাবা কৃষ্ণ অলমিক। বাগানে তিনি তালিকাভুক্ত ও নিয়মিত একজন শ্রমিক। অনেক কষ্টে ছেলেমেয়েকে মানুষ করেছেন। ছেলে এইচএসসি পাস করার পর একটা কাজ খোঁজার জন্য চাপ দেন। ঢাকা যাওয়ার আগে সে মাকে কাজের খোঁজে যাচ্ছে বলে গেছে। কিন্তু আশপাশের লোকজন বলেছে তাকে পুলিশে ধরেছে। এই খবরে মায়ের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, দয়াল অলমিক লেখাপড়ায় অত্যন্ত ভাল ছিলো। সে যে এই কাজে জড়াবে তা যেন কেউ বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তবে কাছে মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে অপরিচিত লোকজন আসতো। কিন্তু কেন আসতো? কোথায় থাকতো তা তাদের জানা নেই। তবে তাদের চলাফেরা ছিলো সন্দেহজনক। দয়াল অলমিক স্থানীয় গণমুক্তি গানের দল নামক একটি সংগঠনের সাথে জড়িত। সে ওই দলের সাধারণ সম্পাদক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সেই দলের ব্যানারে এখানে লেনিন, মাও সেতুং, চেগুয়েভেরার জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়। তাছাড়া লাল ইশতেহার নামেও একটি সংগঠনের সাথে সে জড়িত। এই দুটি সংগঠনের কর্মকান্ড নিয়ে মানুষের মধ্যে এখন দেখা দিয়েছে নানা জল্পনা কল্পনা। এলাকার মানুষ মনে করেন, এই দুটি সংগঠনের নেপথ্যে রয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির মত জঙ্গি কানেকশন।
গত ২২ নভেম্বর কুলাউড়া থেকে পারাবত ট্রেন যোগে দয়াল অলমিক ঢাকায় যায়। ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনে নামার পর তেজগাঁও রেলওয়ে থানা পুলিশ তাকে একটি পিস্তল ও একটি কাটা রাইফেলসহ আটক করে। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হওয়ার পর কালিটি চা বাগানসহ গোটা কুলাউড়া উপজেলায় তোলপাড় শুরু হয়। গত একমাস থেকে আটকের পর গোটা এলাকায় দুটি সংগঠনের লোকজনের চলাফেরাও বদলে গেছে। মোবাইল নাম্বার হারানোর অজুহাতে নাম্বারগুলো পাল্টে ফেলছেন সংগঠন দুটির সদস্যরা।
স্থানীয় লোকজনের মতে, দয়াল অলমিকের মোবাইল নাম্বারগুলো তল্লাশি করলে বেরিয়ে আসবে তার সাথে কাদের যোগাযোগ। তাদের আলাপচারিতার রেকর্ড বের করলে অস্ত্র চোরচালানীচক্রের সন্ধান পেতে পারে পুলিশ। উপজেলার পাহাড়ী জনপদে সাহিত্য ও সংস্কৃতির আড়ালে গড়ে উঠা এই জঙ্গি কানেকশনের সাথে জড়িত সংগঠনগুলোর ব্যাপারে কুলাউড়ার স্থানীয় প্রশাসনেও নেই কোন সঠিক তথ্য।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, কুলাউড়া উপজেলার মুরইছড়া সীমান্ত এবং জুড়ী উপজেলার ফুলতলা সীমান্ত দিয়ে আসা অস্ত্র চোরাচালানীরা কালিটি চা বাগান এলাকা দিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অস্ত্র পাচার করে থাকে। আর অর্থের লোভে তা বহন করার দায়িত্ব পালন করে এসব নিরীহ লোকজন। এই রুট দিয়ে শুধু অস্ত্র নয় অবাদে আসে ভারতীয় মাদক দ্রব্য। সম্প্রতি এই বাগানের শান্তির মার দোকানের পাশ থেকে ভারতীয় ফেনসিডিলসহ মদ ধরা পড়ে। বিজিবি সেগুলো আটক করে নিয়ে যায়।
কুলাউড়া থানা অফিসার ইনচার্জ অমল কুমার ধর জানান, দয়াল অলমিক অস্ত্রসহ আটকের ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। তবে রেলওয়ে তেজগাঁও থানা পুলিশ কিছুদিন আগে কুলাউড়ার এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য চেয়েছে কুলাউড়া রেলওয়ে থানা পুলিশের কাছে। তবে রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে তিনি জানান। তবে এ ব্যাপারে রেলওয়ে তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।