কাজিরবাজার ডেস্ক :
মতবিরোধ আর রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে উগ্রপন্থীদের হাতে হত্যাকান্ডের মামলার জট খুলছে না; ধরা পড়ছে না কিলাররা। হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে পরিবর্তন করা হচ্ছে তদন্ত কর্মকর্তা আর তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু মামলার তদন্ত ঘুরপাক খাচ্ছে সন্দেহের বেড়াজালে। বেসরকারি টেলিভিশনের ইসলামী অনুষ্ঠানের উপস্থাপক মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যাকান্ডের সাড়ে ৪ মাস কেটে গেলেও খুনিরা গ্রেফতার হয়নি। এক বছর পেরিয়ে গেলেও গোপীবাগের কথিত পীর লুৎফর রহমানসহ একই দিনে ছয়জন হত্যাকান্ডের জট খুলছে না। উগ্রবাদীদের হাতে হত্যাকান্ডের তদন্ত শুধু সন্দেহজনক আসামীদের গ্রেফতারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
তদন্ত কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, হত্যাকান্ডগুলোর ধরণ একই রকম। খুনের ধরণ এবং গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছে, এসব হত্যাকান্ড ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা করেছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় উগ্রপন্থী সংগঠন এবং হত্যাকান্ডে জড়িতদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। তবে পুলিশ তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় গ্রেফতার করতে পারছে না। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ডিসি (পূর্ব) জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা এসব হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে। হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।
মাওলানা ফারুকী হত্যাকান্ড : ২৭ আগষ্ট রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের নিজ বাসায় গলা কেটে হত্যা করা হয় মাওলানা ফারুকীকে। তিনি ইসলামী ফ্রন্টের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, শরিয়ত ও সুফিবাদে বিশ্বাসী বলে ফারুকীকে বিভিন্ন সময় প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হতো। মতাদর্শবিরোধীরাই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। এদিকে মাওলানা ফারুকী হত্যাকান্ডে পারিবারিক, সম্পত্তি বা আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধ এবং ধর্মীয় মতাদর্শথ এ তিনটি বিষয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। তদন্তে পুলিশ নিশ্চিত হয়, ধর্মীয় মতাদর্শের কারণেই ফারুকীকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত হত্যাকান্ডে জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। কয়েক জঙ্গি ও উগ্রপন্থীকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও তারা হত্যাকান্ডের দায় স্বীকার করেনি।
হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৪ সেপ্টেম্বর ছাত্রসেনার ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার ছয় টিভি উপস্থাপকের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন। ওই মামলার বিষয়ে তদন্ত করেও হত্যাকান্ডের রহস্যভেদ করতে পারেনি পুলিশ। ছাত্রসেনা নেতা ইমরান হোসেন তুষার বলেন, হত্যাকান্ডের বিচারে সরকার উদাসীন। বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার জন্য সরকারের লোকজন টালবাহানা করছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক জুলহাস হোসেন বলেন, পুলিশের ধারণা, উগ্রপন্থীরা ফারুকীকে হত্যা করেছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় এক নারীসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এর মধ্যে মহসিন ও রুবেল নামে দুইজন জেলে আছে; বাকিরা জামিনে। তবে কারা তাকে হত্যা করেছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গোপীবাগের ছয় খুন : ২০১৩ সালের ২১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ৬৪/৬ আরকে মিশন রোডের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ছয়জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় খুন হন কথিত পীর লুৎফর রহমান, তার বড় ছেলে সরোয়ার ইসলাম, পীরের মুরিদ শাহীন, মজিবুর, মঞ্জুরুল আলম ও রাসেল ভূঁইয়া। খুনের তালিকায় কথিত পীরের আরেক ছেলে আবদুল্লাহ ফারুকের নাম থাকলেও হত্যাকান্ডের সময় বাসায় না থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ঘটনার সময় বাসায় থাকা অন্য পুরুষ ও নারীদের হত্যা করা হয়নি। লুট হয়নি কোনো মালামালও।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, গোপীবাগে ছয় খুনের ঘটনায় পুলিশের সন্দেহের তীর জঙ্গিদের দিকে। মামলায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে জেএমবির ৪ সদস্যও রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেনি। হত্যাকান্ডের এক বছর পেরিয়ে গেলেও খুনির ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। নিহত লুৎফর রহমানের ছেলে আবদুল্লাহ ফারুক জানান, মামলার কোনো আসামী গ্রেফতার না হওয়ায় তারা আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। ডিবির ডিসি জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর বলেন, হত্যাকান্ডের আসামীদের শনাক্ত করা হয়েছে; গ্রেফতারের চেষ্টা করছে পুলিশ।