স্বাধীনতা অর্জনের ৫০ বছরে বাংলাদেশের সামষ্টিক ও ব্যাস্টিক অর্থনীতির বিস্ময়কর রূপান্তর ঘটেছে। এর জন্য ইতোমধ্যে মিলেছে বিশ্ব স্বীকৃতিও। হংকং-সাংহাই ব্যাংকিং কর্পোরেশনের গবেষণা সেল এইচএসবিসি গ্লোবাল রিসার্চের পূর্বাভাস অনুযায়ী মোট দেশজ উৎপাদনের নিরিখে (জিডিপি) ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের ২৬তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে বাংলাদেশ। সংস্থাটির বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কিত পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী ১২ বছরের মধ্যে ১৬ ধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। মনে রাখতে হবে যে, ১৯৭২ সালে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অভিযাত্রা শুরু হয়েছিল একেবারে শূন্য থেকে। সে সময় বৈদেশিক সাহায্য ও অনুদান নিয়ে গড়ে উঠেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ। প্রায় শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৪৬ বিলিয়ন ডলারে। বিস্ময়কর এই উত্থান ও উন্নয়নের পেছনে প্রায় ম্যাজিকের মতো কাজ করেছে বর্তমানে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাদুকরী ও মেধাবী প্রতিভা। যে কারণে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে অভিহিত বহির্বিশ্বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. আতিউর রহমানের মতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর সামষ্টিক অর্থনীতিতে বিস্ময়কর সব রূপান্তর ঘটেছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরণের তিনটি শর্ত পূরণ করেছে। ২০২৪ সাল নাগাদ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিকভাবে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করার কথা রয়েছে, যা কার্যকর হবে ২০২৬ সাল থেকে। পদ্মা সেতুর মতো সুবৃহৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্রসহ ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাবে কয়েক ধাপ।
নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ নানা সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি মডেল। এমনকি প্রতিবেশী দেশ ভারত, নেপাল, পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করে এডিপি বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের হার প্রায় ৯৪ শতাংশ। রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। পোশাক রফতানি আয় বৃদ্ধিসহ প্রবাসী আয়ও বেড়েছে সন্তোষজনক হারে। ব্যাংক সুদের হার এক ডিজিটে নেমে আসায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানও বাড়ছে। তবে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে যে কোন মূল্যে গণতন্ত্রকে আরও সংহত ও শক্তিশালী করতে হবে। আশার কথা এই যে, বাংলাদেশে উন্নয়ন ও গণতন্ত্র হাত ধরাধরি করে চলছে। সর্বস্তরের মানুষের জন্য নাগরিক অধিকার, বাকস্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সর্বোপরি স্বাধীন নির্বাচন কমিশনসহ ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে, যা গণতন্ত্রকে করেছে টেকসই এবং উন্নয়নকে নিশ্চিত করেছে।