স্পোর্টস ডেস্ক :
‘ছেড়ে দে মা, কেঁদে বাঁচি’-অবস্থা থেকে মুক্তি পেল জিম্বাবুয়ে। তবে তার আগে বরণ করতে হল আরেকটি ‘বাংলাওয়াশ’। শেষ ওয়ানডে তে তারা হেরেছে ৫ উইকেটে।
বাংলাদেশে জিম্বাবুয়ে এর আগে বেশ কয়েকবার এসেছে। খারাপ দিন এদেশে তাদের গেছে ঠিকই, তবে এমনটা কখনো হয়নি। তিন ম্যাচ টেস্টের মতো, পাঁচ ম্যাচ ওয়ানডেতেও সবকটিতে হার। হারের রকম-সকমও সেইরকম। একদম যাচ্ছেতাই। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ায় যে, টানা হারে ক্লান্ত জিম্বাবুয়ে বাংলাদেশের সমর্থকদের কাছে আকুতি জানায়- দয়া করে আমাদের নিয়ে উপহাস করো না!
এখন এমনিতে শীতকাল। চায়ের কাপে ঠোঁট রাখার দিন। তাই এমনদিনে বঙ্গদেশের অলিতে গলিতে জিম্বাবুয়ের এই হারের বিষয়টা একটু বেশি ঝড় তুলেছে বলে মনে হয়। উপহাসের বিষয়টি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ না পেলেও, চুপিসারে বেশ হয়েছে তা হলফ করে বলা যায়। অনেকে আশা করেছিলেন শেষ ম্যাচে হয়তো একটু লড়াই করবে সফরকারীরা। কিন্তু কোথায় কী। প্রথম রঙিন জার্সিতে খেলতে নামা তাইজুলের ঘূর্ণিতেই পাগল হল তারা। একদিনের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম বারের মতো অভিষেক ম্যাচে হ্যাট্রিকসহ চার উইকেট নিয়েছেন তাইজুল ইসলাম।
এদিন ২৭তম ওভারের শেষ বলে পানিয়াঙ্গারাকে বোল্ড করেন তিনি। এরপর ২৯তম ওভারের প্রথম বলে ফেরান নায়ুম্বু আর দ্বিতীয় বলে সাতারাকে ফিরিয়ে হ্যাট্রিক পূরণ করেন তিনি। ওডিআইয়ের ইতিহাসে এটি ৩৬তম হ্যাট্রিক। বাংলাদেশের চতুর্থ।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভালোই শুরু করেছিল জিম্বাবুয়ে। দ্রুত এক উইকেট হারালেও মাসাকাদজা দলের রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করছিলেন। অর্ধশতকও তুলে নেন তিনি। সাকিবের বলে বোল্ড হয়ে মাসাকাদজা ফিরে গেলে তাসের ঘরে পরিণত হয় সফরকারীদের ইনিংস।
৯৫ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর, তৃতীয় উইকেট যায় ১০৮ রানে। আরেক রান যোগ করতেই চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরেন সিবান্দা। ১১২ রানের মাথায় ৫ উইকেট। ১২০ রানের মাথায় বোকা বনে যান ষষ্ট ব্যাটসম্যান। সপ্তম উইকেট আউট হন আর কোনো রান যোগ না করেই। ১২৪ রানে কাটা পড়েন দুইজন। আর ১২৮ রানে শেষ উইকেট হিসেবে দায় সারেন কামুনগোজি।
তাইজুলের চার উইকেটের পাশাপাশি তিন উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান, জুবায়ের ২টি আর মাশরাফি নিয়েছেন একটি।
১২৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১৮ রানের মাথায় আউট হন তামিম। এরপর ১০ যোগ করতেই ফিরে যান আনামুল। তামিম-আনামুলের বিদায়ে পর দারুণ খেলতে থাকেন অভিষিক্ত সৌম্য সরকার। তাকে সঙ্গ দিতে থাকেন রিয়াদ। কিন্তু অভিষেকের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি তরুণ সৌম্য। ব্যক্তিগত ২০ রানের মাথায় শর্ট ফাইন লেগে তালুবন্দী হন তিনি। সৌম্য চার মারেন চারটি। এরপর ব্যাট হাতে ব্যর্থ হন সাকিব আল হাসানও। তখন ৫৮ রানে চার উইকেট ছিল বাংলাদেশের।
বাকী পথটুকু অবশ্য ভালোভাবেই পার করেছেন টাইগাররা। মাঠ থেকে ফিরেছেন আরেকটি ‘বাংলাওয়াশ’ নিয়ে। মাহমুদুল্লাহর অপরাজিত ৫১ রানের সুবাদে ৫ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করেছে মাশরাফিরা।
সোমবার প্রধানমন্ত্রীর আগমনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়াম মেতেছিল নতুন এক উৎসবে। প্রধানমন্ত্রী এদিন নিজ হাতেই পুরস্কার তুলে দেন মুশফিক ও মাশরাফিদের হাতে।
এদিন আন্তর্জাতিক একদিনের ম্যাচে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করে ম্যাচ সেরার পুরস্কার পান তাইজুল ইসলাম। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় মুশফিকুর রহিমের হাতে। আর এখানেই ডটকম মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতেই টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি তুলে দেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফির হাতে।