রোজা শুরু আজ

6

কাজির বাজার ডেস্ক

বাংলাদেশের আকাশে গতকাল শনিবার (১ মার্চ) সন্ধ্যায় পবিত্র রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। ফলে আজ রোববার (২ মার্চ) থেকে পবিত্র রমজান মাস শুরু হয়েছে। জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গতকাল শনিবার এশার নামাজের সঙ্গে তারাবির নামাজ পড়েন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। শেষ রাতে রোজা রাখার উদ্দেশে সেহরি খান তারা। শুক্রবার (২৮ ফেব্রæয়ারি) সৌদি আরবে হিজরি ১৪৪৬ সনের রমজান মাসের চাঁদ দেখা গেছে। শনিবার (১ মার্চ) দেশটিতে শুরু হয় পবিত্র ও মহিমান্বিত এ মাস। এ ছাড়া সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিশ্বের বেশ কিছু দেশেও শুক্রবার রমজানের চাঁদের দেখা গেছে।
এদিকে, পবিত্র রমজান মাসে খতমে তারাবিহ আদায়ের সময় দেশের সব মসজিদে একই পদ্ধতি অনুসরণের আহŸান জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রæয়ারি) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহŸান জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাসে দেশের প্রায় সব মসজিদে খতমে তারাবিহ নামাজে পবিত্র কুরআনের নির্দিষ্ট পরিমাণ পারা তিলাওয়াত করার রেওয়াজ চালু আছে। তবে কোনো কোনো মসজিদে এর ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। এতে করে বিভিন্ন স্থানে যাতায়াতকারী কর্মজীবী ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে পবিত্র কোরআন খতমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
এতে আরও বলা হয়, ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের মধ্যে একটি অতৃপ্তি ও মানসিক চাপ অনুভ‚ত হয়। পবিত্র কোরআন খতমের পূর্ণ সওয়াব থেকেও তারা বঞ্চিত হন। এ পরিস্থিতি নিরসনকল্পে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ৬ দিনে দেড় পারা করে ৯ পারা এবং বাকি ২১ দিনে ১ পারা করে ২১ পারা তিলাওয়াত করলে ২৭ রমজান রাতে অর্থাৎ পবিত্র শবেকদরে পবিত্র কোরআন খতম করা সম্ভব হবে। দেশের সব মসজিদে খতমে তারাবি নামাজে প্রথম ৬ দিনে দেড় পারা করে ও পরবর্তী ২১ দিনে এক পারা করে তিলাওয়াতের মাধ্যমে পবিত্র শবেকদরে কোরআন খতমের জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে সারা দেশের সব মসজিদের সম্মানিত খতিব, ইমাম, মসজিদ কমিটি, মুসল্লি এবং সংশ্লিষ্ট সবার কাছে বিনীত অনুরোধ জানানো হয়েছে।
পবিত্র রমজানে রোজা রাখাকে ফরজ নির্ধারণ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছে তোমাদের আগের লোকদের ওপর, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা: ১৮৩) সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, পাঁচটি স্তম্ভের উপর ইসলামের ভিত্তি স্থাপিত। ১) এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (স.) তাঁর বান্দা ও রাসুল ২) নামাজ কায়েম করা ৩) জাকাত দেওয়া ৪) রমজান মাসের রোজা রাখা ৫) হজ পালন করা।
কোরআন নাজিলের মাস : রমজানের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, এ মাসে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘রমজান মাস, এতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের দিশারি এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী।’ (সুরা বাকারা: ১৮৫)
রমজানে জান্নাত, জাহান্নাম ও শয়তানের অবস্থার পরিবর্তন : রমজান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলো। শয়তানদের শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। অন্য বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘শয়তানদের শিকল পরানো হয়।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৪৭)
শবে কদর রমজান মাস : শবেকদর রমজানের বিশেষ বৈশিষ্ট্য। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। সে রাতে ফেরেশতাগণ ও রুহ অবতীর্ণ হয় প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। শান্তিই শান্তি, সে রজনী ঊষার আবির্ভাব পর্যন্ত’ (সুরা আল-কদর: ৩-৫)। ‘যে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে সমূহ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো।’ (নাসায়ি: ২১০৫)
দোয়া কবুলের মাস : পবিত্র রমজান হলো দোয়া কবুলের মাস। হাদিসে এসেছে, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়। (মাজমুউ মুআল্লাফাতিল আলবানি: হাদিস নং- ১০০২) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তাআলা রমজান মাসের প্রতি দিবস ও রাতে অসংখ্য ব্যক্তিকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এবং প্রত্যেক মুমিন বান্দার একটি করে দোয়া কবুল করেন।’ (মুসনাদে আহমদ: ৭৪৫০; মুসনাদে বাজ্জার: ৯৬২)
ক্ষমা লাভের মাস : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় রমজানের রোজা পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হয়।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৮৭)
যে ব্যক্তি রমজান মাস পেয়েও তার পাপগুলো ক্ষমা করানো থেকে বঞ্চিত হলো, মহানবী (স.) তাকে ধিক্কার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘ওই ব্যক্তির নাক ধুলায় ধূসরিত হোক, যার কাছে রমজান মাস এসে চলে গেল অথচ তার পাপগুলো ক্ষমা করা হয়নি।’ (জামেউল উসুল: ১৪১০)
রোজাদারকে স্বয়ং আল্লাহ প্রতিদান দেবেন : রোজার সওয়াব সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন- (তরজমা) ‘নিশ্চয়ই রোজা আমার জন্য, আর এর প্রতিদান স্বয়ং আমিই দিব।’ (মুসলিম: ১১৫১/১৬৫)