কাজির বাজার ডেস্ক
অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, পিলখানায় সংঘটিত নির্মম হত্যাকাÐের সুবিচার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ দায়বদ্ধ। প্রথমবারের মত দেশে জাতীয় শহীদ সেনা দিবস পালনের অংশ হিসেবে মঙ্গলবার এক বাণীতে এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালের এই দিনে পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাÐের শহীদদের স্মরণে এখন থেকে প্রতিবছর দিনটি জাতীয় শহীদ সেনা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্র্বর্তীকালীন সরকার। পিলখানার শহীদ সেনা কর্মকর্তাদের ‘গভীর শ্রদ্ধা ও বেদনার সঙ্গে’ স্মরণ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এত বছর পরও শহীদ পরিবারের সদস্যরা স্বজন হত্যার বিচার পেতে অপেক্ষা করে আছেন। “পিলখানায় বীর সেনা সদস্যদের নির্মম হত্যাকাÐের পর অনেকগুলো বছর ধরে জাতি হিসেবে আমাদের নানা বিভ্রান্তিতে রাখা হয়েছে। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এই নির্মমতার সুবিচার নিশ্চিত করতে দায়বদ্ধ। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। সমব্যথী হয়ে দেশ ও জনগণ শহীদ পরিবার ও সকল নিপীড়িতের পাশে দাঁড়াবে সেই আশাবাদ রাখছি একই সঙ্গে।” ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রæয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়। নিহত হন সব মিলিয়ে ৭৪ জন। দেশের গÐি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা। বিডিআরের দরবার হল থেকে সূচনা হওয়া ওই বিদ্রোহের ইতি ঘটে নানা ঘটন-অঘটনের মধ্য দিয়ে পরদিন। পিলখানায় বিদ্রোহের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন স্থানে জওয়ানরাও বিদ্রোহ করে।
সেই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি। বিদ্রোহ ও হত্যা মামলার বিচার হলেও ক্ষমতার পালাবদলের পর পুনরায় তদন্তের দাবি ওঠে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে গত ডিসেম্বরের সাত সদস্যের স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্র্বর্তী সরকার।
পিলখানা হত্যাকাÐের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।
গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক পরিপত্রে প্রতিবছর ২৫ ফেব্রæয়ারি ‘জাতীয় শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘’এখন থেকে এই দিনটি আমাদের চেতনা ও অনুভ‚তির একটি নিয়ামক হয়ে দেশের জন্য যুদ্ধ করার ব্রত নিয়ে পথচলা একদল সাহসী মানুষের অনাকাক্সিক্ষত নির্মম মৃত্যুর কথা মনে করিয়ে দেবে। তাদের এই আত্মত্যাগের স্মরণে আমরা জাতি হিসেবে যেন নিজেদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সংকল্পবদ্ধ হই।
“দুঃশাসন, ষড়যন্ত্র ও আত্মঅহংকারে আর যেন কোনো প্রাণ না হারায়। মানুষ যেন আত্মসম্মান ও মানবিক অধিকার নিয়ে নিজের যোগ্যতা ও মেধায় তার প্রাপ্য অবস্থানে পৌঁছাতে পারে এই প্রত্যাশা করি।’’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বেকারত্বমুক্ত পৃথিবী গড়ার পথে বাংলাদেশই যেন হয় আদর্শিক মাপকাঠি।”
শহীদ সেনাদের স্মরণে প্রধান উপদেষ্টা সবাইকে একটি ‘স্বনির্ভর ও সুসভ্য’ বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নেওয়ার আহŸান জানান।