অন্তর্র্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা। ৫ আগস্ট গত সরকারের পতনের পর পুলিশ বাহিনী নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। এই নিষ্ক্রিয়তা এখনো কাটেনি। দেশের থানাগুলো কোনোরকমে সচল করা গেলেও পুলিশ কার্যত এখনো নিষ্ক্রিয়। বলা যায়, কোথাও পুলিশের টহল পরিলক্ষিত হচ্ছে না। আর এ সুযোগে বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে খুন, ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা ধরনের অপরাধ। ৫ আগস্টের পর থেকে শুধু রাজধানীতেই খুন হয়েছেন অন্তত ২০ জন। ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনাও প্রত্যক্ষ করা গেছে। খুনগুলোর বেশিরভাগই হয়েছে ছিনতাইকারীর হাতে। এসব ঘটনায় অপরাধী ধরা পড়ার উদাহরণও অনেক কম। ওদিকে রাজধানীর রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা নেই বলে বেড়েছে যানজট। এই যানজট কখনো কখনো অস্বাভাবিক হয়ে পড়ছে। পুলিশের টহল না থাকায় সন্ধ্যার পর থেকে অনিরাপদ হয়ে পড়ছে রাজধানীর রাস্তাঘাট।
এ অবস্থা বেশিদিন চলতে পারে না। এক মাসেরও বেশি সময় পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেন ভালো হচ্ছে না, এ প্রশ্ন করছেন এখন নাগরিকরা। এ কথা ঠিক, আন্দোলন দমন করতে গিয়ে পুলিশ যা করেছে এবং আন্দোলন সফল হওয়ার পর এ বাহিনীর সদস্যদের প্রতি যে আচরণ করা হয়েছে, তাতে পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়েছে। তাদের মনোবল ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে; কিন্তু এই চেষ্টা তেমন সফল হচ্ছে না। আমরা মনে করি, যে কোনো উপায়ে পুলিশের মনোবল ফিরিয়ে আনা দরকার। লক্ষ করার বিষয়, পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় পেশাদার অপরাধীরাও সক্রিয় হয়ে মাঠে নেমেছে। সবচেয়ে বড় বিপদ হলো, দেখা যাচ্ছে কখনো কখনো বিনা বাধায় কিছু সন্ত্রাসী উন্মত্ত হয়ে টার্গেটকে হত্যা করছে।
এক কথায়, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মানুষের জান ও মাল পড়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলার উন্নতি ঘটাতে না পারলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়বে। পুলিশের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র লুট হয়েছে, সেগুলোর সব উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করার বিষয়টিও তাই অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত। অন্তর্র্বর্তী সরকারকে আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার আহŸান জানাই আমরা। মনে রাখতে হবে, পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে না পারলে সরকার জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারবে না।