ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করা সময়ের দাবি

12

স্টাফ রিপোর্টার

শুধু নামেই নয় ওসমানী বিমানবন্দর প্রকৃত অর্থে আন্তর্জাতিক হলে এ অঞ্চলে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হতে পারে। সিলেটবাসীর প্রাণের দাবি অবিলম্বে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে সত্যিকারের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পরিণত করে বৃহত্তর এ অঞ্চলের মানুষের প্রত্যাশা পূরণে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান বৃটেনের প্রথিতযশা আইনজ্ঞ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ, সমাজ চিন্তক ব্যারিস্টার নজির আহমদ।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর নামে আন্তর্জাতিক হলেও সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বলতে যা বুঝায় সামগ্রিক বিবেচনায় তা মনে হয় না। সত্যিকার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে এখানে বহুজাতিক এয়ারলাইনগুলোর ফ্লাইটসমুহ (যেমন: কাতার এয়ারওয়েজ, তার্কিশ এয়ারলাইন্স, ইত্তেহাদ এয়ারলাইন্স, এমিরাত এয়ারলাইন্স, জেট এয়ারওয়েজ, সৌদি এয়ারলাইন্স ইত্যাদি) সিলেট থেকে সরারসরি আসা যাওয়া করতো বা সেখানে অবতরণ করার সুযোগ থাকতো। শুধুমাত্র বিমানের কয়েকটি ফ্লাইট যুক্তরাজ্য ও মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়া আসা ছাড়া এখানে আর কোন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের সুযোগ নেই।
সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার নাজির বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমরা শুনে আসছি এখানকার রানওয়ে আরও সম্প্রসারণ হবে, এখানে রিফুয়েলিং ব্যবস্থা চালু হবে, কিন্তু এ ব্যাপারে বিগত সরকারের পক্ষ থেকে কোন সদিচ্ছা পরিলক্ষিত হয়নি। তিনি বলেন, সাইপ্রাসের লারনাকা বিমানবন্দর, ইতালির রিমিনি শহরের রিমিনি বিমানবন্দর, আফ্রিকার দরিদ্র দেশ উগান্ডার এন্টেবে বিমানবন্দর – এগুলোর কোনোটাই তেমন বড় নয়। নিজ চোখে দেখেছি- অনেকটা সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দর থেকেও আয়তনে ছোট, কিন্তু ওখানে সব ধরনের বহুজাতিক এ আন্তর্জাতিক এয়ারক্রাফট নামতে পারলে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দরে পারবে না কেন?
সংবাদ সম্মেলন তিনি আরও উল্লেখ করেন, ২০২২ সালের অক্টোবরে ঘুর্নিঝড় সিত্রাং এর সময় প্রমাণ হয় যে সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চাইলে বিদেশি যে কোন এয়ারলাইন্স নামতে ও উঠতে পারে ও পারবে। কেননা এ সময় ঢাকা থেকে ডাইভার্টেড হয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ৮টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সিলেটে উঠা-নামা করেছে। এতে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে বহুজাতিক বা আন্তর্জাতিক যেকোন ফ্লাইট সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করতে সক্ষম।
কিছু সিলেট বিদ্বেষী দুর্নীতিবাজ মহলের কারণে সিলেট এমএজি ওসমানী বিমানবন্দর সত্যিকার অর্থে ও পূর্নাঙ্গভাবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে উঠছে না। এর ফলে বহির্বিশ্বে থাকা সিলেটের যাত্রীরা অযথা বৈষম্য ও ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বৃটেন থেকে যাত্রীদের বাধ্য হয়ে চড়া দামে শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিমানের টিকেট কিনে সিলেট যেতে হচ্ছে। কাতার বা তার্কিশ এয়ারলাইন্সে যেখানে ৫০০ বা ৬০০ পাউন্ডে লন্ডন থেকে ঢাকা যাতায়াত করা যায় সেখানে বিমানে লন্ডন থেকে সিলেটে ডাইরেক্ট ফ্লাইটে যেতে গুনতে হয় ১০০০ পাউন্ড থেকে ১৪০০ পাউন্ড। অর্থাৎ দ্বিগুন বা দ্বিগুনের কাছাকাছি! আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ইংল্যান্ড থেকে বিমান প্রথমে সিলেটে যায়। এরপর যায় ঢাকা। এখানেও ঢাকা থেকে সিলেটের ভাড়া ২০০ থেকে ৩০০ পাউন্ড বেশি। এর কারণ রহস্যজনক। এটা সিলেটের প্রতি কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক ও বিমাতাশুলভ আচরণ। তিনি বলেন, পূর্ণাঙ্গ ও সত্যিকার অর্থে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর করত: বিভিন্ন দেশের বিমান বা এয়ারলাইন্সকে অরতরণের জন্য উন্মোক্ত করে দিলে সার্ভিসের মান ও ভাড়ার ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা হতো যা তুলনা ও যাচাই করে যাত্রীরা অপেক্ষাকৃত ভালোটা বেছে নিতে পারতেন। বিভিন্ন দেশের এয়ারলাইন্স উঠানামা করলে এভিয়েশন ফি, ল্যান্ডিং চার্জ, ফুয়েল কস্ট ও পার্কিং চার্জসহ বিভিন্ন খাত থেকে বিপুল পরিমান অর্থ বাংলাদেশ আয় করতে পারতো। অথচ আমাদের সিলেটে এই সুযোগটি হাতছাড়া হচ্ছে।