১২ দিন মাথায় গুলি নিয়ে ঘুরছিলেন বিশ্বনাথের সাংবাদিক মশাহিদ

1

বিশ্বনাথ সংবাদদাতা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে রাবার বুলেটে আহত হন বিশ্বনাথ মডেল প্রেস ক্লাবের প্রচার ও দপ্তর সম্পাদক মো. মশাহিদ আলী (২৫)। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার তাজমহরম গ্রামের মো. ফজর আলীর ছেলে। তিনি মাল্টিমিডিয়া নিউজপোর্টাল বার্তা২৪.কমের সিলেটের স্টাফ করেসপন্ডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
গত ২ আগস্ট বিকেল পৌনে ৪টার দিকে নগরীর আখালিয়া এলাকার মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে পুলিশের গুলিতে আহত হন সাংবাদিক মশাহিদ। ঘটনার ১২ দিন পর বুধবার (১৪ আগস্ট) রাতে মাথার গুলি বের করা হয়। এই ১২ দিন মাথায় গুলি নিয়ে ছিলেন মশাহিদ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গত ২ আগস্ট (শুক্রবার) বিকেল ৩টার দিকে একটি মিছিল সিলেট নগরীর সুরমা আবাসিক এলাকা থেকে শাবিপ্রবির প্রধান ফটকে গিয়ে আবার ফিরে যাওয়ার সময় পেছন থেকে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করে। পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে।
আত্মরক্ষার জন্য সাংবাদিক মশাহিদ আলী মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের আন্ডারগ্রাউন্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ভিডিও ধারণ করতে চাইছিলেন। এ সময় হাসপাতালের প্রধান ফটক থেকে পুলিশ গুলি ছোড়ে। এতে মাথায় ছররা গুলি লেগে আহত হন। পরে সহকর্মীরা সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
সাংবাদিক মশাহিদ আলী জানান, ঘটনার দিন আন্দোলনকারীরা শাবিপ্রবির গেটের সামনে অবস্থান নেয়; সেখান থেকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের সামনে আসামাত্র পেছন থেকে সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। আন্দোলনকারী ও পুলিশের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হওয়ায় মধ্যখানে পড়ে যাই; তাই নিজের আত্মরক্ষার জন্য হাসপাতালের আন্ডারগ্রাউন্ডের সামনে চলে যাই।
তিনি জানান, এ সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। কয়েকজন আন্দোলনকারী হাসপাতালের দিকে ছুটে গেলে পুলিশ তাদের বাইরে বের হওয়ার জন্য হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়ে বন্দুক তাক করে আমাদের দিকে। গুলি ছুড়ার আগ মুহ‚র্তেও আমিসহ আরও কয়েকজন নিজেদের সাংবাদিক বলে পরিচয়পত্র উঁচিয়ে দেখাই। কিন্তু তা না শুনেই গুলি চালায় পুলিশ। গুলি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্ডারগ্রাউন্ডে প্রবেশের চেষ্টা করি; তখন দুটি ছররাগুলির মধ্যে একটি মাথার পেছনে বাম পাশে লাগে। আর অল্পের জন্য গাল ঘেঁষে একটি গুলি চলে যায়।
তিনি আরও জানান, প্রথমে গুলি লেগেছে বলে বুঝতে পারিনি। মাথার পিছনে হালকা রক্ত বের হতে দেখি। গুলি মাথায় নিয়েই আমি চার ঘণ্টা সেখানে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছি। রাত ৮টার দিকে আমার কয়েকজন সহকর্মী হাসপাতালে নিয়ে যান এবং এক্সরে করে শনাক্ত হয় মাথায় একটি ছররা গুলি লেগেছে। কিন্তু তখনও আমার পরিবারের কেউই জানতেন না আমি গুলিবিদ্ধ। তাৎক্ষণিক গুলি বের করতে চাইলেও চিকিৎসকরা জানান নানা সমস্যা হবে তাই সেখানে চিকিৎসা নিয়ে পরদিন বাড়িতে চলে যাই। যেহেতু মাথায় গুলি তাই আমার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন সবাই অনেক চিন্তায় ছিলেন।
মশাহিদ আলী জানান, হাসপাতাল থেকে আসার পর অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করি তাদের কথামতো বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছিলাম। কিন্তু কেউই গুলি বের করার পক্ষে ছিলেন না। তখন আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না। ঘাড়ে প্রচÐ ব্যথা অনুভব করতাম। কোনো কোনো সময় এমন হয়েছে গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠে বসে থাকতাম। প্রায় ১২ দিন গুলি মাথায় নিয়ে ঘুরতে ঘুরতে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম ঢাকায় চিকিৎসার জন্য যাব। তার আগেও আমার দুই সহকর্মীর পরামর্শে ডা. জাবের আহমদ ভাইয়ের কাছে যাই। তিনি এক্সরে দেখে গুলি বের করে দিতে সম্মতি দেন; তার তত্ত¡াবধানে ডা. আফজাল ভাই ছররা গুলি বের করে দেন। এই ১২ দিন বলা যায় খুবই কষ্টে কেটেছে।