সিন্টু রঞ্জন চন্দ :
সিলেটের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবনের নির্মাণ কাছ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শীঘ্রই এটি উদ্বোধন হতে যাচ্ছে। ইতিপূর্বে ভবনের রং শেষ হয়েছে। পুরো দমে টাইলস্’র কাজ চালিয়ে যাচ্ছে শ্রমিকরা। ৫ বছর পর এ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের আলোর মুখ দেখতে পাবেন সিলেটবাসী। প্রায় ২২ কোটি টাকারও অধিক টাকা ব্যয়ে এ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেক কোর্ট এখন দাঁডিয়ে রয়েছে। অপেক্ষায় আছে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের। আর এটা সম্ভব হয়েছে আওয়ামীলীগ সরকারের আমলেই।
সিলেট গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই ভবনের সম্পন্ন কাজ শেষ হবে। তবেই ২০১৫ সালের জানুয়ারী মাসের শেষ দিকে এ ভবনটির অনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করা সম্ভব হতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সিলেট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবনের আয়তন ১৭ হাজার ৩শ’ ১৪ বর্গফুট। নীচতলা এবং দ্বিতীয় তলা থেকে ৫ম তলা পর্যন্ত প্রতিটি তলায় ১৬ হাজার ৫শ’ ৭৯ বর্গফুট করে আয়তনে এ ভবনের নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ১০তলা ভীতে ভবনের ৫ম তলা পর্যন্ত এ প্রকল্পে ২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। কিন্তু প্রকল্পের দাবী এ ব্যয়ের টাকার চেয়ে আরো প্রায় ৩ কোটি টাকা বেশী লেগেছে। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধানে দেশ উন্নয়ন লিমিটেড এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ করে যাচ্ছে। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবনের প্রথম তলায় হাজতখানা পুরুষ ও মহিলা, রেকর্ড রুম, মালখানা, নেজারত, জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থার অফিস, পিপি ও এপিপি রুম, দ্বিতীয় তলায় কনফারেন্স রুম, লাইব্রেরী ও দুটি এজলাস, তৃতীয় তলায় ৪টি এজলাস, ৪র্থ তলায় ৪টি এজলাস, ৫ম তলায় ৩টি এজলাসসহ মোট ১৩টি এজলাস রয়েছে। এছাড়া এ ভবনের উত্তর-দক্ষিণের কোনায় দু’টি লিফট থাকবে। তবে এখন একটি লিফট চালু থাকবে। জেনারেটর, সাব স্টেশন, অগ্নি বির্বাপক ব্যবস্থা, গভীর নলকূপও বসানো হয়েছে এ ভবনে। সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ জেলায়ও এ ধরনের ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিলেট আদালতে বিচার কার্যক্রমে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এজলাস সংকটে ভোগে আসছিল। এছাড়া সিলেটের মহানগর দায়রা জজ ও মেট্রোপলিটন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম নতুনভাবে চালু হওয়ায় এজলাস সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করে। ফলে নতুন এ বিচারকগণ সিলেটে পোষ্টিং হলেও এজলাস সংকটে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি অনেকেই। একই এজলাসে ডাবল শিফটে বিচার কার্যক্রম পারিচালনা করে ভোগান্তি পুয়াতে হয়েছে বিচারক সংশ্লিষ্টদের। সিলেট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের ভবন নির্মাণ হওয়ায় এ দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে।
সিলেট গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এমপি সিলেট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবনের নির্মাণ কাজের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন। প্রথমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে সিলেট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬৪টি জেলায় চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে সিলেট এ ভবনের কাজ গ্রহণ করা হয়। কিন্তু জমি ও মাটি ভরাটের কাজে কিছুটা দেরী হওয়াতে কাজে কিছুটা সময় লেগে যায়। ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। শেষ হওয়ার কথা ছিল চলতি বছরের ১৪ এপ্রিলে। কিন্তু সঠিকভাবে বরাদ্দ না পাওয়ায়তে দীর্ঘসূত্রিতা দেখা দেয়।
সিলেট গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ আবু নাসের জানান, এ ৫ম তলা চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবনের ১৩টি এজলাস রয়েছে। প্রথমে ২১ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এ ভবনের কাজ শুরু হয়। পরে উন্নত মানের জিনিস লাগাতে গিয়ে এ ভবনের কাজ শেষ করতে প্রায় ২৬ কোটি টাকা ও সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। বরাদ্দকৃত টাকা ছাড়া লেগে যাওয়া বাকী টাকার জন্য আমরা কাগজপত্রাদি ঢাকায় পাঠিয়েছি। তিনি আরো জানান, সিলেট চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন তৈরী করতে উন্নত মানের মালামাল ব্যবহার করা হয়েছে। কাজে যাতে কোন ক্রটি না থাকে সেজন্য সব সময় তদারকি করা হচ্ছে। কাজে আমরা কোন গাফিলতিও করিনি। এখন ভবনের রং শেষ হয়েছে। পুরো দমে টাইলস্’র কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। খুব শীঘ্রই এ কাজও শেষ হবে। আশা করি আগামী ২০১৫ সালের জানুয়ারীর শেষের দিকে এ ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা সম্ভব হবে। তাছাড়া এ প্রকল্পের আওয়াধীন জেলা পর্যায়ের কাজ শেষ হতে আগামী ২০১৭ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে বলে জানান তিনি।