শেষ মুহ‚র্তে জমে উঠেছে কাজিরবাজার পশুর হাট

23

সিন্টু রঞ্জন চন্দ
আর মাত্র একদিন পরই উদযাপিত হবে মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব ঈদুল আজহা। আর এই ঈদের প্রধান অনুর্ষগ হচ্ছে কুরবানি। শেষ মুহ‚র্তে জমে উঠেছে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী কাজিরবাজার পশুর হাট। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ছোট-বড় দেশী-বিদেশী পশু নিয়ে পাইকাররা সিলেট নগরীর অন্যতম স্থায়ী পশুর হাট কাজিরবাজারে নিয়ে এসেছেন। অনেক ক্রেতা এই হাটে এসে ঘুরছেন দরদাম করছেন আবার কেউ কেউ পছন্দ মতো তাদের কুরবানির পশুটি কিনে নিয়েও যাচ্ছেন। সিলেটের অন্যতম প্রাচীন পশু বিক্রির হাট কাজিরবাজারে গরুর সংখ্যা চাহিদা অনুযায়ী অনেক বেশী রয়েছে।
ক্রেতাদের দাবি, এবার গরুর দাম আকাশচুম্বী। এমন দামে গরু কেনা অনেক কষ্টসাধ্য হবে শেষ পর্যন্ত। এদিকে বিক্রেতারা বলছেন, পশুর খাদ্যের দাম বেশী হওয়ায় উৎপাদন খরচ অনেক বেশি। তাই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
জানা গেছে, কাজিরবাজারে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে পুলিশের ১৪টি মোবাইল টিম রয়েছে পুরো বাজারজুড়ে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি এই হাটের নিরাপত্তায় রয়েছেন মালিকপক্ষের লোকজনও। কাজিরবাজার হাটে জাল টাকা পরীক্ষার বুথও রয়েছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ভুষি, খৈল, পালিশ, ভুট্টা ও গরুর বিভিন্ন ওষুধের প্রচুর দাম। এখন এমন অবস্থা, গত বারের থেকে ১০-২০ হাজার টাকা বেশি দামে গরু বিক্রি করতে না পারলে ক্ষতি হয়ে যাবে।
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার আক্তাপাড়ার আজিজুর রহমান তার ৩ বছরের ঘরের পালিত কালো রংয়ের ৭০০ কেজি ওজনের ৮ফুট লম্বা ও ৫ফুট ৩ ইঞ্চি চওড়া কাজিরবাজার হাটে একটি গরু নিয়ে এসেছেন। তিনি গরুটির দাম হাঁকছেন ৬ লাখ টাকা। গরুটি ক্রেতারা দেখছেন, করছেন দরদামও তবে তিনি জানিয়েছেন, সাড়ে ৪ লাখ টাকা পেলে গরুটি বিক্রি করবেন।
সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার শাল্লার শহিদ মিয়া ঘরের গাভীর পালিত ১১ মন ওজনের আড়াই বছর বয়সী একটি ষাড় গরু এ হাটে নিয়ে এসেছেন। সেটির দাম হাঁকছেন ৪ লাখ টাকা। তিনি জানান, যদি শেষ পর্যন্ত এত টাকা না পাই তাহলে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি করে দেবেন।
বার্মার শাহিওয়ানের ৯ থেকে ১০ মন ওজনের ৩টি গরু নিয়ে এসেছেন বালাগঞ্জের নুরপুর গ্রামের চম্পা ডেইরী ফার্মের আব্দুল মনির শফিক। একেকটি গরুর দাম হাঁকছেন তিনি সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
সবচেয়ে আর্কষণীয় ১৮টি গরু ও ২টি মহিষ নিয়ে কাজিরবাজার পশুর হাটে এসেছেন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আদমপুরের আরএম ডেইরী ফার্ম এন্ড এগো ফিশারিজ এর মালিক মো. হানিফুর রহমান বেলাল। তিনি জানান, একেকটি গরুর ওজন ২৬ থেকে ২৭ মন। তিনি প্রতিটি গরু ও প্রতিটি মহিষের দাম হাঁকছেন সাড়ে ৬ লাখ থেকে ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে গতকাল একটি মহিষ ও ২টি গরু ২২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন।
কাজিরবাজার হাটের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেন লোলন বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও ঐতিহ্যবাহী এ হাটে শতভাগ নিরাপত্তার সাথে ক্রেতা-বিক্রেতারা পশু তেনাবেচা করছেন। তিনি আরো বলেন, হাটে পর্যাপ্ত পশু রয়েছে। ঈদের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত কুরবানির পশু আসতে থাকবে। লোলন বলেন শেষ মুহূর্তে হাট আরো জমে উঠবে।
সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সিলেটে এবার কুরবানির ঈদে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ২৫১ পশুর চাহিদা রয়েছে। তবে বিভাগজুড়ে জবাইয়ের জন্য ৪ লাখ ৩০ হাজার ৩৯৭টি গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে। উদ্বৃত্ত আছে ৩৬ হাজার ১৪৬ পশু।