কাজিরবাজার ডেস্ক :
যুক্তরাষ্ট্রে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে একদিনে ৬০ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যের ২৬ জন জনপ্রতিনিধি রয়েছেন। করোনার হটস্পট হয়ে ওঠা ভারতে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৫ হাজার আক্রান্ত হয়েছেন। আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। কাতারে আক্রান্তের সংখ্যা লাখ ছাড়ালেও সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৯৬ হাজারের বেশি। ইরানে একের পর এক মৃত্যুর রেকর্ড গড়ছে। এছাড়া ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গান্টজ কোয়ারেন্টাইনে গেছেন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের মতে, চীনের উহান থেকে মহামারী আকারে ছড়ানোর ৭ মাসের মাথায় বিশ্বজুড়ে শনাক্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ২১ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ জন হয়েছে। মারা গেছেন ৫ লাখ ৫২ হাজার ৭৮৬ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৭০ লাখ ৯৫ হাজার ৭২৬ জন। চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৪৫ লাখ ৫০ হাজার ১৬৫ জন। যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছেন ৫৮ হাজার ২৯৯ জন। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ ড্যাশবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের মোট সংখ্যা এক কোটি ২০ লাখ ৬৬ হাজার ৪৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মারা গেছেন ৫ লাখ ৫০ হাজার ১৩৫ জন। সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৬৬ লাখ ৯ হাজার ৪৬২ জন। বাতাসের মাধ্যমেও করোনা ছড়ানোর প্রমাণ বাড়তে থাকার মধ্যেই শনাক্ত রোগীর সংখ্যা এ মাইলফলক ছাড়াল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে শনাক্ত কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা বিশ্বব্যাপী বার্ষিক মারাত্মক ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত রোগীর তিনগুণ হয়ে গেছে।
করোনা সংক্রমণে মারাত্মভাবে আক্রান্ত অনেক দেশই ভাইরাসটির বিস্তার রোধে লকডাউন আরোপ করেছিল। পরে তারা লকডাউন শিথিল করেছে। তবে চীন ও অস্ট্রেলিয়ার মতো কয়েকটি দেশে সংক্রমণ ফের বাড়তে থাকায় আবার লকডাউন আরোপ করে। জানুয়ারির প্রথমদিকে চীনে প্রথম করোনা আক্রান্তের তথ্য নথিবদ্ধ হয়। এরপর ১৪৯ দিনের মধ্যে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৬০ লাখে দাঁড়িয়েছিল। ওই সংখ্যা দ্বিগুণ হতে লাগল মাত্র ৩৯ দিন। রোগটিতে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল ১০ জানুয়ারি। চীনের উহানে। এরপর ইউরোপে সংক্রমণ ও মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। সে ধারার বিস্তার ঘটে যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্রে একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা আবারও আগের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নতুন শনাক্ত হয়েছে ৬০ হাজার ২০৯ জন। আক্রান্তের এ সংখ্যা আগের দৈনিক সংক্রমণের সর্বোচ্চ রেকর্ডও ভেঙ্গে দিয়েছে। এর আগে একদিনে সর্বোচ্চ ৫৫ হাজার ২২০ জনের ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল গত ২ জুলাই।
মিসিসিপির ২৬ এমপি আক্রান্ত : যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলের অঙ্গরাজ্য মিসিসিপির ১৭৪ এমপির মধ্যে ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়াও অঙ্গরাজ্যের পার্লামেন্ট ‘ক্যাপিটল ইন জ্যাকসন’র আরও ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। স্থানীয় সময় বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে মিসিসিপির গভর্ণর টেট রিভস অঙ্গরাজ্যবাসীকে অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, সম্প্রতি কেউ যদি আমাদের কোন এমপির সংস্পর্শে এসে থাকেন, যত দ্রুত সম্ভব তিনি বা তারা যেন করোনা পরীক্ষা করান। সম্ভবত আমাদের আবারও কঠোরভাবে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা ও বাইরে মাস্ক পরে চলাচলের বিধিনিষেধ চালু করতে হবে।
ভারতে একদিনে ২৫ হাজার আক্রান্ত : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২৫ হাজার ৫২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ৮৭৯ জন। মোট ৭ লাখ ৬৭ হাজার ২৯৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। ইতোমধ্যেই চার লাখ ৭৭ হাজার ৬৮৫ করোনা রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ২১ হাজার ১৭৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মারা গেছেন ৪৮৭ জন।
আক্রান্ত বাড়ছে ওমানে : প্রথমদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা কম থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে। ওমানে এর মধ্যেই করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৫১ হাজার ৭২৫ জন হয়েছে। ওমানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ২১০ জন। মারা গেছেন ৯ জন। মিডেল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ওমানে আক্রান্তের সংখ্যা ৫০ হাজার ২০৭। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৩৩ জন। এক সপ্তাহ আগেই সংক্রমণ বেড়ে যাবার বিষয়ে লোকজনকে সতর্ক করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
কাতারে আক্রান্ত এক লাখ : কাতারে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১ হাজার ৫৫৩ জন। সুস্থ হয়েছেন ৯৬ হাজার ১০৭ জন। এখন আক্রান্ত অসুস্থ রোগীর সংখ্যা মাত্র ৫ হাজারের বেশি। কাতারের পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হতে থাকায় স্বস্তি ফিরেছে নাগরিকদের মাঝে। সারা বিশ্বের মতো কাতারেও তাণ্ডব চালিয়েছে মহামারী করোনা। ২৮ লাখ জনসংখ্যার দেশটি প্রতি ১০ লাখে আক্রান্তের হিসাবে শীর্ষে রয়েছে।
কোয়ারেন্টাইনে ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী : করোনা আক্রান্ত হবার সম্ভাব্য ঝুঁকির কারণে সেলফ-কোয়ারেন্টাইনে গিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিকল্প প্রধানমন্ত্রী বেনি গান্টজ। মন্ত্রীর পক্ষে তার অফিস থেকে এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গত রবিবার এক করোনা রোগীর সঙ্গে সাক্ষাত হয়েছে বলে সন্দেহ করছেন গান্টজ। সে কারণে চিকিৎসকদের পরামর্শ নিয়ে বুধবার থেকে সেলফ-কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন তিনি। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী এখনও সুস্থ এবং তিনি করোনা টেস্টের ফলাফলের অপেক্ষায় রয়েছেন।
ইরানে একের পর এক মৃত্যুও রেকর্ড : ইরানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে পুরো দেশ। নতুন করে করোনায় মৃত্যুর দিক দিয়ে নিজেই রেকর্ড ভাঙছে ইরান। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। আগের দিন মারা যান ১৫৩ জন। দুদিন আগে মারা গেছেন দুইশ’ জন মানুষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সীমা সাদাত লারি দেশটির রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনকে বলেন, ইরানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৮৮ জন।