শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে এবং অগ্নিকাÐের খবর জানিয়ে সারা দেশ থেকে জাতীয় জরুরি সেবায় ফোন করে অভিযোগ জানিয়েছেন ৯৭১ জন নাগরিক। সেটা একই দিনে। সেই দিনটি ছিল নতুন বছরকে বরণ করার। ‘দিন’ না বলে ‘রাত’ বলা ভালো। কারণ খ্রিষ্টীয় নববর্ষকে স্বাগত জানাতে ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ পালন করা হয়। এই রাতে উচ্চ স্বরে গান এবং আকাশে আতশবাজি ও ফানুসের খেলা এত বেশি চলে যে শব্দদূষণ ও অগ্নিকাÐলাই পেয়ে যায়!
প্রকাশিত এক খবরের তথ্যমতে, থার্টি ফার্স্ট নাইট উদ্যাপন শুরু হওয়ার পর থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শব্দদূষণ ও অগ্নিদুর্ঘটনার মোট ৯৭১টি অভিযোগ আসে জরুরি সেবার হটলাইন নাম্বারে। অন্যান্য বছরের তুলনায় অভিযোগের এই সংখ্যাটা ছোটÑএ তথ্য জেনে খুশি হওয়ার কোনো কারণ নেই। অভিযোগ না আসাটা বরং খুশির কারণ হতো। অথচ মন খারাপ করে দেয় সেই রাতের কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, রাজধানীর ধানমন্ডি ও জামালপুর সদরের শহীদ হারুন সড়কে অগ্নিকাÐের ঘটনা; দোকান ও বাড়ি পুড়ে যাওয়ার ঘটনা; তিন কিশোরের দগ্ধ হওয়ার ঘটনা; এমনকি মেট্রোরেলের বৈদ্যুতিক তারে ৩৮টি ফানুস আটকে পড়ার ঘটনা।
প্রতিবছরের মতো এবারও ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’ উদ্যাপনে রাজধানীর রাজপথে ছিল কড়া নিরাপত্তা। শহরের বেশ কিছু জায়গায় উৎসব নির্বিঘœ করতে রাত ১২টার পর যান এবং সাধারণ নাগরিকদের চলাচলে কড়াকড়ি ও নিষেধাজ্ঞা জারি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তবে এ নিয়ে ওই সব পথে নিয়মিত চলাচলকারীদের অভিযোগও পাওয়া গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অর্পিত দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করেছে। তাদের ধন্যবাদ। কিন্তু আমরা কী করেছি? নিজেরা আনন্দ করতে গিয়ে ভাবিনি কতশত প্রাণী শব্দদূষণে আঁতকে ওঠে, আগুনে মারা পড়ে। পশু-পাখিরা যদি জরুরি সেবায় অভিযোগ জানাতে পারত তাহলে দুর্ঘটনার সংখ্যা হয়তো এতটাই বাড়ত যে সেই হিসাব করাটা মুশকিল হতো! আমরা তো এ-ও ভুলে গেছি, ২০২২-কে স্বাগত জানাতে গিয়ে যে শব্দদূষণ হয়েছিল তাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিল বারবার কেঁপে ওঠা ৪ মাস ১৯ দিন বয়সী শিশু উমায়ের।
‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’ সিনেমার পরিচালক মোস্তফা সরয়ার ফারুকী দেখিয়েছেন নিজের জীবনের টুকরো প্রতিচ্ছবি। এমনই এক ‘থার্টি ফার্স্ট নাইট’-এ কেঁপে কেঁপে উঠেছিল তাঁর নবজাতক সন্তান। এভাবে অনেক শিশু সেই রাতে কেঁপে ওঠে আতঙ্কে। অথচ এসব জেনে আমরা কাঁপি না। আমাদের বিবেক কাঁপে না, সে বলে নাÑশুধু খোলা জায়গায়, বিশেষ করে জলাশয় কিংবা সমুদ্রের পাড়েই করতে হয় আতশবাজি আর ফানুসের উৎসব, ঘনবসতির বাড়ির ছাদে নয়। ব্যবসায়ীদের বিবেক কাঁপে না বলেই তাঁরা আতশবাজি, পটকা, ফানুস বিক্রি বন্ধ করেন না। যারা কেনে, তাদের বিবেকও কাঁপে না। এসব বেচাকেনা বন্ধে আইন এবং তার প্রয়োগ করা জরুরি। আইনপ্রণেতারা কাঁপবেন কবে?