কাজির বাজার ডেস্ক
হামাসের শক্তিমত্তা দেখে অবাক হয়েছে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ফলে গাজা থেকে হামাসকে নির্মূলের যে আশা ইসরায়েল করছে, তা বাস্তবায়িত না-ও হতে পারে। হলেও সময় লেগে যেতে পারে দীর্ঘ কয়েক মাস। ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ইয়োদিথ আরোনাথে লিখিত এক নিবন্ধে দেশটির সমর বিশ্লেষক ইয়োভ জিতুন এই মন্তব্য করেছেন।
ইয়োভ জিতুন লিখেছেন, যদিও ইসরায়েল ২০০৭ সাল থেকে গাজা শাসন করা হামাসকে উৎখাত করতে চেয়েছে, কিন্তু মাঠের লড়াইয়ে ইসরায়েলি বাহিনী প্রতিদিনই হামাসের সক্ষমতা দেখে অবাক হয়েছে। তারা (হামাস) একটি সত্যিকারের সেনাবাহিনী; যা কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে তেল আবিব থেকে মাত্র ৫০ মিনিটের পথের দূরত্বে।
ওই নিবন্ধে জিতুন আরও লিখেছেন, হামাসের সক্ষমতায় প্রমাণ করে তারা কয়েক বছর ধরে কীভাবে ফিলিস্তিনি ভ‚খÐে ইসরায়েল দখলদারত্ব ঠেকিয়ে দিয়েছে। তিনি আরও লিখেন, যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে চলতি ডিসেম্বরের শেষ কিংবা জানুয়ারির শুরুতেই যুদ্ধ শেষ করার ডেডলাইন বেঁধে দিয়েছে। তবে ওয়াশিংটন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মোকাবিলায় হামাসের সক্ষমতার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে জিতুন বলেন, ‘তাদের কাছে বিভিন্ন ধরনের আরপিজি শেলসহ লক্ষাধিক অস্ত্র রয়েছে। যেগুলো তাদের প্রধান অস্ত্র হিসেবে বিবেচিত হয়। তাদের কাছে উন্নত রকেট লঞ্চার, বিস্ফোরকবাহী ড্রোন ও আক্রমণকারী ড্রোন রয়েছে। যেগুলো মূলত গত দশকে গাজা উপত্যকায় বিধ্বস্ত হওয়া ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর স্কাই রাইডার ড্রোনের অনুলিপি হিসেবে তৈরি করা হয়েছে।
জিতুনের মতে, উল্লিখিত অস্ত্রগুলোর বাইরে হামাস যোদ্ধাদের কাছে মেশিনগান, কালাশনিকভ রাইফেল, ড্রাগনভ স্নাইপার রাইফেল, উন্নত যোগাযোগ যন্ত্র, বিভিন্ন মান ও আকারের বিস্ফোরক ডিভাইস এবং অগণিত পরিমাণ অস্ত্র ও সামরিক সক্ষমতা রয়েছে। জিতুন বিশ্বাস করেন, বাইত হানুন হামাসের শক্ত ঘাঁটি না হওয়ার পরও যে ভয়ংকর যুদ্ধ হয়েছে তা ইঙ্গিত দেয় যে হামাসের হাত থেকে গাজা মুক্ত করতে দীর্ঘ কয়েক মাস সময় লাগবে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর অভিজাত গোলান ব্রিগেডের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বলেছেন, হামাস গাজা শহরের সুজাইয়ায় তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটালিয়ন স্থাপন করেছে। সেই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘সেই এলাকায় যোদ্ধারা জন্মেছে, বেড়ে উঠেছে, তারা সেই জায়গার সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা কখনোই সেখান থেকে পালিয়ে যাবে না। বাস্তবিক দৃষ্টিকোণ থেকে, সুজাইয়াকে সম্পূর্ণরূপে শত্রæমুক্ত করতে আমাদের প্রায় ছয় মাস সময় লাগবে।’
উল্লেখ্য, হামাস চলতি বছরের গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি সীমান্ত ভেঙে ভেতরে ঢুকে হামলা চালায়। সেই হামলায় ইসরায়েলি সৈন্যসহ প্রায় ১২ শতাধিক মানুষ প্রাণ হারায়। প্রতিক্রিয়ায় সেদিন থেকেই গাজায় নির্বিচারে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। সেই হামলায় গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৮ হাজারে। যার অর্ধেকেরও বেশি নারী ও শিশু। আহতের সংখ্যাও প্রায় অর্ধলাখ।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা জানিয়েছেন, অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভ‚খÐ গাজায় গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৯৯৭-এ। স্থানীয় সময় গতকাল রোববার সন্ধ্যায় হতাহতের এই সংখ্যা জানান আশরাফ আল-কুদরা। এ সময় তিনি জানান, ৬৩ দিন ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসনে আহত হয়েছে আরও অন্তত ৪৯ হাজার ২২৯ জন।