সুনামগঞ্জ থেকে সংবাদদাতা :
সুনামগঞ্জে এক ফসলী বোরো ধান উৎপাদন সমৃদ্ধ হাওর গুলো রক্ষায় ২০১৭ইং কাবিটা নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ বাধ্যতামূলক শুরু করার কথা। আর ২৮ ফেব্র“য়ারি বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের ২৬দিন পার হলেও এখনও বাঁধ রক্ষার কাজ শুরুই হয় নি।
প্রকল্প অনুমোদন, পিআইসি গঠন ও মাঠের কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের সহায়তা না পাওয়াসহ নানান কারন রয়েছে বলে জানান জেলার বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ। অনেক উপজেলার হাওরে পানি না কমায় এখনও বাঁধ নির্মাণ শুরু হয় করা হয় নি। ফলে এ নিয়ে লাখ লাখ কৃষক উৎবেগ, উৎকণ্ঠা আর আতংকের মধ্যে সময় পার করছে।
জানা যায়, জেলার তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, বিশ্বম্ভরপুর, দিরাই, শাল্লা, ছাতক, দোয়ারা বাজার উপজেলাসহ ১১টি উপজেলার ছোট বড় ১৫৪টি হাওরের বাঁধ রক্ষায় পিআইসি অনুমোদন হয়েছে-৮৬৫টি। এবার পিআইসি গঠনের দায়িত্ব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নেতৃতাধীন কমিটির। নতুন নীতিমালা নদী, খাল পুন:খননের জন্য স্কিম প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ইং অনুযায়ী ২০১৭-২০১৮ইং থেকে এই পরিবর্তিত নীতিমালায় কাজ হবে। সে অনুযায়ী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পিআইসি গঠনের নির্দেশনা ছিল।
নতুন নীতিমালা অনুযায়ী ১৫ ডিসেম্বর থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ বাধ্যতামূলক শুরু করার কথা। আর ২৮ ফেব্র“য়ারী বাঁধ নির্মাণের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও গত শনিবার অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান নলুয়ার হাওরের বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেন। এছাড়া আর কোথাও এখনও বাঁধ রক্ষার কাজ শুরুই হয় নি। নির্ধারিত সময়ের এক মাস পর পিআইসি গঠন করে অনুমোদন হলেও জেলার বিভিন্ন উপজেলার পিআইসি অনুমোদনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।
পাউবো সূত্রে আরো জানা যায়, হাওর রক্ষা বাঁধের কাজের গতি আনার জন্য দুটি বিভাগে বিভক্ত করা হয়। পাউবোর সুনামগঞ্জ (পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ) বিভাগ-১এর অধীনে সুনামগঞ্জ ১এর অধীনে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা ৪৮টি, বিশ্বম্ভরপুর ৩৫টি, তাহিরপুর ৬০টি, জামালগঞ্জ ৬৯টি ও ধর্মপাশা-১৭৯টি। ১ এর অধিনে মোট পিআইসি ৩১৯টি গঠন করে পিআইসিদের কে ১২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা ও বিভাগ-২এর অধীনে দিরাই-১১৩টি, শাল্লায়-১৪১টি, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-৬০টি, জগন্নাথপুর-১০৮টি, ছাতক-১১টি, দোয়ারা বাজার-৪১টি পিআইসি গঠন করা মোট ৪৭৪টি গঠন করে পিআইসিদের কে ১৬ কোটি ৪৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। হাওর রক্ষার বাঁধ নির্মাণের চাহিদা রয়েছে ১ হাজার ৪৫০ কিলোমিটার হলেও রাজস্ব খাতে ৩৬টি হাওরে কাজ হবে ৫৭৯ কিলোমিটার। ৯১ কোটি টাকার চাহিদা থাকলেও অনুমোদন হয়েছে ২৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। গত বছর সুনামগঞ্জের হাওরের বাঁধ রক্ষায় ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে ঠিকাদারদের ৪৮ কোটি ও পিআইসিদের ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দওয়া হয়। কিন্তু কাজের ক্ষেত্রে হয়েছিল পুকুর চুরি যার জন্য অকাল বন্যায় বাঁধ ভেঙ্গে সকল হাওর পানিতে তলিয়ে যায়। এতে করে জেলার ৩ লাখ ২৫ হাজার ৯৯০টি কৃষক পরিবার চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলার সর্বমোট আবাদী জমির পরিমাণ ৩,৭৯,২১৬ হেক্টর। গত বছর প্রায় ২লাখ ১৫ হাজারের অধিক হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছিল। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। যার মূল্য ১৫শ কোটি টাকার বেশী। চলতি বছরে ২ লাখ ২২ হাজার ৫৫২হেক্টর লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে।
তাহিরপুরের কৃষকরা বলেন, বাঁধ নির্মাণের কাজ এখনও শুরু হয়নি এবারও এবারও মনে হচ্ছে দুঃখের শেষ থাকবে না।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূনেন্দ্র দেব জানান, আমার উপজেলায় পিআইসি গঠন করা শেষ ও অনুমোদন হয়েছে। এছাড়া সকল কাজ সমাধানে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (ডিভিশন-১) আবু বক্কর সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, নতুন নীতি মালা অনুযায়ী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে সকল পিআইসি গঠন করার কথা ছিল কিন্তু নানান কারণে দেরি হয়েছে। ৬ জানুয়ারী অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান নলুয়ার হাওরের বাঁধের কাজের উদ্বোধন করেছেন। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করব যাতে করে ২৮ ফেব্র“য়ারীর মধ্যেই জেলার সকল বাঁধের কাজ শেষ হয়ে যায়।