বাজারে কিছু নিত্যপণ্যের দাম ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। আলুর দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। মঙ্গলবারও বিভিন্ন বাজারে আলু বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকা কেজি দরে। ফার্মের ডিমের ডজন ১৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। আর পেঁয়াজ কেজিপ্রতি দাম ৬৪-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও কোথাও সেই দামে পেঁয়াজ নেই। মঙ্গলবার কোনো কোনো বাজারে দেশি পেঁয়াজের দাম ১০০ টাকা ছুঁয়েছে আর আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজারে প্রায় প্রতিটি সবজির দামই বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত।
আলু ও পেঁয়াজের মৌসুম শেষ। ধারণা করা হচ্ছে, মাসখানেকের মধ্যে বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করবে। মাস দুয়েকের মধ্যে আগাম জাতের আলুও বাজারে আসবে। প্রতিবছরই এই সময়ে এসব পণ্যের দাম কিছুটা বাড়ে।
বাজারসংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সংস্থাগুলো একটু আগেভাগে যদি বাজারে সরবরাহ ঠিক রাখতে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিত, তাহলে বাজারের এমন হাল হতো না। কিন্তু বরাবরের মতোই বাজার যখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণহীন, তখন নানা ধরনের উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে। বাজারে অভিযান চালিয়ে কিছু দোকানদারকে জরিমানা করা হচ্ছে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হচ্ছে না।
এটা ঠিক, আমাদের বাজারে নিয়মনীতি বা নৈতিকতার বালাই নেই। ব্যবসায়ীরা চাইলেই তাঁদের ইচ্ছামতো দাম বাড়িয়ে দিতে পারেন।
আর এ জন্য তাঁদের অজুহাতেরও কোনো অভাব হয় না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শুরু করে অতিরিক্ত বৃষ্টিÑকিছুই বাদ যায় না অজুহাতের তালিকা থেকে। আর এটি নতুন কিছু নয়। এর মধ্যে কিভাবে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, সেই চেষ্টা করবে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি ও সংস্থাগুলো। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতা নজিরবিহীন। মৌসুমে যখন আলু ওঠে তখন কৃষকরা উপযুক্ত দাম পান না। কখনো কখনো আলুর কেজি ১০ টাকার নিচে নেমে যায়। এরপর সেগুলো চলে যায় মজুদকারী বা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে। মৌসুম শেষের লাভটা তাঁরাই নেন। সরকারকে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের চিন্তা করতে হবে। দুই সপ্তাহ আগে ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও বাজারে আমদানি করা ডিম আসেনি। ফলে বাজারে ডিমের সরবরাহ কম থাকার ফায়দা নিচ্ছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।
বাজারে সরকারের হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে। দাম নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পিত ও স্থায়ী সমাধানের কথা ভাবতে হবে। সেসব না করে সংকটের সময় মানুষকে দেখানোর জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়ে কোনো লাভ হবে না।