নির্বাচন সামনে রেখে ছোট-বড় রাজনৈতিক দলগুলো সভা করবে, কর্মসূচি দেবে- এটাই স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক চর্চা। জমে উঠবে কথামালার রাজনীতি। কিন্তু এ সময়ে উল্টোচিত্র দেখতে হয় আমাদের। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে, রাজনৈতিক উত্তেজনা ততই বৃদ্ধি পায়। চলতি অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহ কিংবা নভেম্বরের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এ অবস্থায় বিএনপি চাচ্ছে তফসিল ঘোষণার আগেই আন্দোলনের মাধ্যমে সাফল্য পেতে। আর আওয়ামী লীগ চাচ্ছে যে কোনোভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রেখে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে। তাই রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকা ক্ষমতাসীন দল ও বিএনপিসহ সমমনা বিরোধী জোট অক্টোবর মাসকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ অবস্থায় সামনের দিনগুলোতে সংঘাত-সংঘর্ষের আশঙ্কা নিয়েও সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা হচ্ছে। তফসিল ঘোষণার আগমুহ‚র্তে রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হয়, তা নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও আছে। দেশে রাজনৈতিক সংকটের মূলে আছে নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে আস্থাহীনতা। সেটা জাতীয় নির্বাচনই হোক আর স্থানীয় নির্বাচন। নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে কিংবা কার অধীনে হবে- এ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে না। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন প্রত্যাশা করে সাধারণ মানুষ। নির্বাচনব্যবস্থা নিয়ে আন্দোলন এমনকি সংঘাতেও রূপ নেয়। এর আগে আমরা দেখেছি, রাজধানীতে বড় দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনমনে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীতে মহাসমাবেশ করেছে। অন্যদিকে বিএনপিকে প্রতিহত করে ঢাকার রাজপথে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে মরিয়া ক্ষমতাসীনরা। তারাও সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করছে। বিএনপিকে কোনোভাবেই ছাড় দিতে নারাজ। ২০০৮ সালের নির্বাচনে ভরাডুবি, ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় পড়ে বিএনপি। তাই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ডান, বাম ও মধ্যপন্থি প্রায় তিন ডজন রাজনৈতিক দলকে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করতে দীর্ঘদিন আগে থেকেই চেষ্টা শুরু করে বিএনপি। সমমনা দলগুলোকে নিয়ে গত ৮ মাসে ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপি যুগপৎভাবে শতাধিক কর্মসূচি পালন করে। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি বিপরীতমুখী অবস্থানে। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে- এমন সিদ্ধান্ত থেকে এক চুলও নড়বে না ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। সরকারের পদত্যাগে এক দফা ঘোষণা করেছে দলটি। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল কার্যত বিপরীত মেরুতে অবস্থান করে। এমনকি সংঘাতে গড়ায়। দেশে রাজনৈতিক সভায় গ্রেনেড হামলার দৃষ্টান্তও রয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মিডিয়ায় বাংলাদেশের আগামীর রাজনীতি গভীর সংকট নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। যদি নির্বাচন নিয়ে কোনো ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে ওই নির্বাচনের ব্যর্থতার দায়ভার নির্বাচন কমিশন, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদের ওপরই বর্তায়। বর্তমান নির্বাচন কমিশন গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে পারবে কিনা, সেটিই দেখার বিষয়। আমরা চাই না, আগামী জাতীয় নির্বাচন কোনোভাবেই প্রশ্নবিদ্ধ হোক। আমরা মনে করি, সংঘাত পরিহার ও শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহাবস্থান নিশ্চিত করতে সরকার, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলকেই সহিষ্ণুতা ও সদিচ্ছায় অগ্রণী ভ‚মিকা রাখতে হবে।