এলপিজি সিলিন্ডার এর মূল্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর হোন

7

 

বাসাবাড়িতে রান্নায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি)। চলতি মাসে ১২ কেজির সিলিন্ডারের দাম বেঁধে দেওয়া হয় ১ হাজার ২৮৪ টাকা। কিন্তু তা ১ হাজার ৬০০ টাকায় কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। প্রায় আড়াই বছর ধরে দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা কার্যকর করতে পারছে না জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। গত রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) মিরপুরে ১২ কেজির এলপিজি সিলিন্ডার বাসায় এনে দেওয়ার খরচসহ দাম ছিলো ১ হাজার ৬০০ টাকা। সরকার নির্ধারিত মূল্যতালিকা দেখানো হলেও কোনো লাভ হয়নি। প্রতি মাসেই বাড়তি দামে সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
দেশে ব্যবসায়ীরা যে আইন মানছেন না, তার প্রমাণ এলপিজি খাত। বাজার প্রতিযোগিতামূলক করতে নির্ধারিত দামে বিক্রি করায় আগ্রহী কোম্পানিকে নতুন করে লাইসেন্স দিতে পারে বিইআরসি। এলপিজি খাতের পরিবেশকদের বরাত দিয়ে পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছে পরিবেশকদের ৫০ টাকা ও খুচরা বিক্রেতার ৪৫ টাকা বাদ দিলে ১২ কেজি সিলিন্ডারের পাইকারি দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ১৮৯ টাকা। অথচ এখন কোম্পানিগুলো রাখছে ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা। এর সঙ্গে তাদের পরিবহন খরচ ও মুনাফা যুক্ত করে ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্যবসায়ীদের কথা হচ্ছে – নির্ধারিত দামে ভোক্তার কাছে এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রি করা সম্ভব নয়। কেননা সরকারের নির্ধারিত খুচরা দামের চেয়ে বেশি দামে কোম্পানির কাছ থেকে এই সিলিন্ডার কিনতে হয়। কোম্পানি ও পরিবেশকদের মধ্যে সমন্বয় করে দাম নির্ধারণ না করলে এ সংকটের নিরসন সম্ভব নয়। খুচরা ব্যবসায়ীদের কথা হচ্ছে, পাইকারি দামে কিনে পরিবহন খরচ মিটিয়ে দোকানে আনতে একেকটি সিলিন্ডারের দাম যা পড়ে যায় তাতে ২০০ টাকা বাড়তি না রাখলে চলে না। এলপিজি কোম্পানির দায়িত্বশীল কর্মকর্তারাও বাড়তি দামে সিলিন্ডার বিক্রির কথা স্বীকার করেছেন।
তাদের মতে, বিশ্ববাজারে এলপিজির দাম এখন সহনীয়। কিন্তু দেশে ঋণপত্র খুলতে এখন ডলার কিনতে হচ্ছে ১১৮ টাকায়। এরপরও অনেক সময় ডলার পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে আমদানি কমাতে হচ্ছে। প্রতি মাসে একবার এলপিজির মূল্য সমন্বয় করছে বিইআরসি। কিন্তু ডলারের দরের ওঠা-নামার কারণে পাইকারি পর্যায়ে এলপিজির দাম বদলে যাচ্ছে। দেশের শীর্ষ এলপিজি কোম্পানি বসুন্ধরা গ্রæপের বিভাগীয় প্রধানের (এলপি গ্যাস) বক্তব্য প্রকাশ হয়েছে গণমাধ্যমে।
তিনি বলেছেন, ঋণপত্র খুলতে না পারায় ৩০ শতাংশ আমদানি কমেছে। ডলারের দাম প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। তাই দাম ধরে রাখা কঠিন হচ্ছে। এ বিষয়ে বিইআরসির চেয়ারম্যান বলেন, ডলারের বাড়তি দামের অজুহাত ঠিক নয়। বাজারেও পর্যাপ্ত এলপিজি আছে। সুযোগসন্ধানী ব্যবসায়ীরা সংকটের কথা বলে বাড়তি মুনাফা করছেন। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে জরিমানা করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে সবখানে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এলপিজি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য হলো, একেকটি সিলিন্ডার পরিবেশকদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এই সংকটের নিরসন কিভাবে সম্ভব? কোনোভাবে বাজারের কোনো পণ্যের প্রতি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নিয়ন্ত্রণ নেই। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না হলে জনগণ চিড়েচ্যাপ্টা হয়ে যাবে। সুতরাং সংকট দ্রæত নিরসন করা জরুরি।