কাজির বাজার ডেস্ক
দীর্ঘদিন ধরে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে দেশের খাদ্যপণ্যের বাজারে। ডলার সংকট, এলসি জটিলতা, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি, পরিবহণ সংকটসহ বৈরী আবহাওয়ার মতো নানা অজুহাতে হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে ভোক্তার অর্থ। পণ্য বিক্রির প্রতিটা ধাপে ব্যবসায়ীদের এই বাড়তি মুনাফা ভোগের ভার বহন করতে হচ্ছে ভোক্তাকেই। চলতি মাসে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের সপ্তম সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।
প্রতিবেদনে, আমদানি ও খুচরা বাজার মূল্যের মধ্যে অস্বাভাবিক ব্যবধান, বাজার সিন্ডিকেট, ব্যবসায়ীদের আইন না মানা, নানা অজুহাতে পদে পদে বাড়তি মুনাফা আদায় করাসহ ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রির প্রভাব তুলে ধরেন সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ। সেখানে বলা হয়, ভোজ্যতেল, আটা-ময়দা ও পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক পণ্যের আমদানি ব্যয় তুলনায় খুচরা বাজারে দাম অনেক বেশি। এমনকি আন্তর্জাতিক বাজারে এসব পণ্যের দাম ধারাবাহিকভাবে কমলেও দেশে তা বেড়েই চলছে। অন্যদিকে কৃষি পণ্যের উৎপাদন মূল্যের তুলনায় খুচরা মূল্যের পার্থক্য অত্যধিকসহ টিসিবির ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির প্রভাব বাজারে অতি নগণ্য উল্লেখ করে বেশ কিছু সুপারিশও করা হয় এই প্রতিবেদনে।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্য বিপণন পরিবেশক নিয়োগ আদেশ প্রতিপালন না হওয়ায় দেশের ভোজ্যতেল ও চিনির মূল্যবৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মসুর ডাল ও রসুনের আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যের সঙ্গে স্থানীয় বাজার মূল্যের সম্পর্ক ইতিবাচক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এদিকে গত কোরবানির ঈদের আগে চাহিদা সম্পন্ন বেশিরভাগ পণ্যের দাম লাগামহীন। সরবরাহ নেই এমন অজুহাত দেখানো হলেও চাহিদার প্রায় দ্বিগুণ আমদানি হয়েছে। রেকর্ড পরিমাণ আদা ও জিরা আমদানি হলেও ভোক্তাকে কিনতে হয়েছে ৪ গুণ বেশি দামে। ভোজ্যতেলের দাম ঈদের আগে এবং পরে একাধিকবার কমানো হলেও বাজারে তা কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বাজারে চিনির দাম নির্ধারণ করেন ব্যবসায়ীরা। বাজারে সে দামই কার্যকর রয়েছে। যা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পর্যালোচনার হিসাবে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি। এ ছাড়া ব্যাপক পেঁয়াজ আমদানি ও আলুর মজুত সত্তে¡ও দ্বিগুণ দামে কিনতে হয় ভোক্তাকে।
কেবল আমদানি মূল্যের থেকে বেশি নয়, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ১৬০ টাকা দামে বিক্রি হওয়া আদা রাজধানীর বাজারে বিক্রি হয় ৪শ’ টাকায়। একইভাবে কারওয়ান বাজারের পাইকারি আড়তে ৩০ টাকা দরে কেনা বেগুন খুচরা বাজারে বিক্রি হয় ৮০ টাকায়। অথচ কৃষক তার উৎপাদন মূল্য পেতেই হিমশিম খায়। তাই এই সভায় পণ্যের সাপ্লাই চেইনের কোন ধাপে বেশি মুনাফা হচ্ছে, তা বের করার জন্য সমীক্ষা পরিচালনা এবং অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের পরিবহণ ব্যয় কমাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
সুপারিশ: দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ বাজার চাহিদার ৮৫ শতাংশ, আদা ৬৫ শতাংশ ও রসুন ৮০ শতাংশ মেটাতে পারে। তাই তা সংরক্ষণে সুপারিশ করা হয়েছে। অন্যদিকে বাজারে এসব পণ্যের সরবরাহ বজায় রাখতে আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা না এনে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় মৌসুমি শুল্কারোপের সুপারিশসহ ভোগ্যপণ্যে আমদানি এলসি সহজ করার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বাজার নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর বাজার মনিটরিংয়ের দক্ষতা দেখালেও জনবল ঘাটতি থাকার কারণে তা কার্যকর হচ্ছে না, তাই জনবল বাড়ানোর কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।