ছাতকে ব্যবসায়ী নুরুল হক হত্যা মামলায় ৪ জনের যাবজ্জীবন ও ৩ আসামী খালাস

13

 

স্টাফ রিপোর্টার

সুনামগঞ্জের ছাতক এলাকার ব্যবসায়ী নুরুল হক হত্যা মামলায় ৪ জনকে যাবজ্জীবন কারাদন্ড ও ৩ আসামীকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি দÐপ্রাপ্ত আসামীদেরকে অর্থদÐও দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালে সিলেটের দ্রæত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) মোঃ শাহাদৎ হোসেন প্রামানিক এ রায় ঘোষনা করেন। রায় ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারী মোঃ জয়নাল আবেদীন।
দÐপ্রাপ্ত আসামীরা হচ্ছেন, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার কাকুরা গ্রামের মৃত মনু মিয়ার ছেলে আব্দুর রজাক (৪০), একই থানার সেওতারপাড়ার মৃত মনফর আলীর ছেলে মোঃ আব্দুল তাহিদ (৪২), বড়সৈদেরগাঁও গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে আব্দুল আজিজ (৪০) ও মুসলিমকোনা গ্রামের মৃত কণ্টাই মিয়ার ছেলে নুরুল মোত্তাকিন ভেরাই (৪৫) এবং খালাসপ্রাপ্তরা হচ্ছেন- সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার কাকুরা গ্রামের মৃত মমশ্বরে ছেলে জিয়া (২৬), একই থানার আলমপুর গ্রামের মৃত আয়াজ আলীর ছেলে মকদ্দুছ আলী (৬৫) ও খিদ্রাকাপন গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে জাহানুর (৩৫)। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী আব্দুর রজাক ও নুরুল মোত্তাকিন ভেরাই বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার হুলিয়ারগাঁও প্রকাশ সেওতরপাড়ার হাজী জমসিদ আলীর ছেলে নুরুল হক (৩৩) এর সাথে আসামীদের মধ্যে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক চলে আসছিলো। ঘটনার আগের দিন আসামীগণ নুরুল হকের সহিত ধান বিক্রির কথাবার্তা সাব্যস্ত করে তার নিকট হতে ধান মূল্য বাবত অগ্রিম ১৫ হাজার টাকা আসামী আব্দুর রজাক সমজিয়া নেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের সূত্র ধরে ২০১২ সালের ২১ মে রাত ৮ টার দিকে নুরুল হককে তার বাড়ি হতে আসামী আব্দুল তাহিদ ডেকে বাহিরে নিয়ে যান। পরবর্তীতে নুরুল হক বাড়িতে ফিরে না আসায় তার স্ত্রী মতিয়া বেগম মোবইলফোনে স্বামীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, নুরুল মোত্তাকিন ভেরাইর বাড়িতে আছেন এবং আসামীদের সাথে ব্যবসায়ী কথাবার্তা শেষ করে কিছুক্ষণের মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসবেন বলে জানান। কিছুক্ষণ পর নুরুল হক বাড়িতে না আসায় আবার স্ত্রী মতিয়া বেগম তার ফোনে কল দিলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে নুরুলের পরিবার ও স্বজনরা সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে তাকে খোঁজাখুজি করে না পেয়ে নুরুল হকের ছোট ভাই মোঃ এনামুল হক সুমন ছাতক থানায় ৯২০ (২২-০৫-২০১২) নং একটি জিডি এন্ট্রি করেন।
সূত্র আরো জানায়, আসামীরা ঘটনারদিন রাতে নুরুল হককে ছাতক থানার সেওতারপাড়া গ্রামের বাড়েরা হাওড়ে নিয়ে যান এবং সেখানে তারা নুরুল হকের উপর চড়াও হয়ে এ সময় আসামীরা নুরুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তাকে খুন করে এবং হত্যাকান্ডের দায় হতে আসামীরা নিজেদের বাঁচাতে ধারালো অস্ত্র দ্বারা নুরুল হকের পেট কেটে হাওড়ের পানিতে ডুবিয়ে রেখে আলামত গোপন করার চেষ্টা করেন। এর ৪দিন পর ২৫ মে দুপুর ১২ টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ নিহত নুরুল হকের লাশ বাড়েরা হাওর থেকে উদ্ধার করে। পরে পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশ সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে। এ ঘটনায় নিহত নুরুল হকের ছোট ভাই মোঃ এনামুল হক সুমন ৪ জনের নাম উল্লেখ করে ছাতক থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং- ২৫ (২৫-০৫-২০১২)।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারী ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মুস্তাফিজুর রহমান ৭ আসামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে সর্ম্পূরক চার্জশিট (অভিযোগপত্র নং-১১) দাখিল করেন এবং ২০২০ সালের ১১ মার্চ থেকে আদালত এ মামলার বিচারকার্য্য শুরু করেন। দীর্ঘ শুনানী ও ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার আদালত আসামী আব্দুর রজাক, মোঃ আব্দুল তাহিদ, আব্দুল আজিজ ও নুরুল মোত্তাকিন ভেরাইকে পেনাল কোড এর ৩০২/২০১/৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে তাদের প্রত্যেককে পেনাল কোড এর ৩০২ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদÐ ২০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদÐ এবং পেনাল কোডের ২০১ ধারায় প্রত্যেককে ৩ বছরের সশ্রম কারাদÐ ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরো ৩ মাসের বিনাশ্রমে কারাদন্ডে দন্ডিত করেন। আসামীগণের উভয় ধারার সাজা একত্রে চলবে।
রাষ্ট্রপক্ষে স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সরওয়ার আহমদ চৌধুরী আবদাল ও আসামীপক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুল খালিক, অ্যাডভোকেট হাসান মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, অ্যাডভোকেট মাসুম আহমদ, অ্যাডভোকেট সিদ্দিকুর রহমান ও পলাতক আসামীদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স অ্যাডভোকেট গোলাম রব্বানী তালুকদার মামলাটি পরিচালনা করেন।