বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারি সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা

11

 

মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জন্য একটি বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারে জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া। মানুষের আয় বাড়ছে না, কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না।
তেলের দাম বেড়েছে। চিনির দাম সরকার ঠিক করে দিলেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না। আমদানির কোনো প্রভাব পড়েনি পেঁয়াজের দামে। মাছ-মাংসের দামও তো অনেক বেশি।
গরিবের পুষ্টি ডিমও এখন গরিবের আয়ত্তের বাইরে। অতি সম্প্রতি কাঁচা মরিচের দাম অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল। এখানেও আমদানি করতে হলো। এখন কোনো কারণ ছাড়াই বাজারে আলুর দাম বেড়ে গেছে।
বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে অনেকে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবের কথা বলেন। ডলারের বিপরীতে টাকার রেকর্ড দরপতনের বিষয়টিও উল্লেখ করা হয়। কিন্তু যেসব পণ্য আমদানি করতে হয় না, সেসব পণ্যের দাম কেন বাড়ে? প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরায় আলুর দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এই একই আলু গত সপ্তাহে প্রতি কেজি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেড় মাস আগে প্রতি কেজি আলু ছিল ৩০ টাকা।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি না থাকলেও বাড়তি লাভের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ীরা আলুর দাম বাড়িয়েছেন।
এটাই হচ্ছে মূল সমস্যা। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। অনেক অসাধু ব্যবসায়ী চাহিদা সামনে রেখে কম দামে কিনে কয়েক গুণ বেশি দামে বিক্রি করেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন। ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাধ্য হয়েই ভোক্তাকে এসব পণ্য কয়েক গুণ বেশি দামে কিনতে হয়।
সাধারণত চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কমে গেলে বাজারে যেকোনো জিনিসের দাম বাড়বেÑএটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মুক্তবাজারে যখন যেকোনো পণ্য সহজেই আমদানি করা যায়, তখন দাম বাড়ার কথা নয়। বাংলাদেশের বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীদের একটি গোপন জোট বা সিন্ডিকেটের কথা বরাবরই আলোচিত হয়। এখন একেক সময় একেকটি পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। কাঁচা মরিচের পর এবার যেমন বেড়েছে আলুর দাম।
বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারের করণীয় আছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আছে। আছে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন। এসব সংস্থা কি কার্যকর কোনো ভ‚মিকা রাখতে পারছে?
কঠোরভাবে বাজার নজরদারি করা হলে এই কারসাজি রোধ করা সম্ভব বলে মনে করেন বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বাজারের নিয়ন্ত্রণ সরকার নিতে না পারলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হবে না। কাজেই সরকারকে মূল ভ‚মিকা নিতে হবে।