খাদ্য মজুত সংক্রান্ত বিল পাস : কার্যকর উদ্যোগ জরুরি

10

খাদ্য উৎপাদন যেমন আবশ্যক, তেমনি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, নানা সময়ে খাদ্য মজুত করে দাম বৃদ্ধি, সংকট তৈরিসহ বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ সামনে আসে, যা উদ্বেগজনক বলেই প্রতীয়মান হয়। সঙ্গত কারণেই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও যথাযথ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা গেল, নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য কেউ মজুত করলে তাকে শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। এ অপরাধের শাস্তি যাবজ্জীবন বা সর্বোচ্চ ১৪ বছরের সশ্রম কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড হবে। এমন বিধান রেখে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল-২০২৩ পাস হয়েছে। লক্ষণীয় যে, পাস হওয়া বিলে বিভিন্ন ধরনের বিষয় বলা হয়েছে। তার মধ্যে এটাও বলা হয়েছে, এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণে সারা দেশে প্রয়োজনীয়সংখ্যক আদালত থাকবে। এ আদালত খাদ্যদ্রব্য বিশেষ আদালত নামে অভিহিত হবে। এ আইনের অধীনে কিছু অপরাধের বিচার মোবাইল কোর্টেও করা যাবে। আর খাদ্যদ্রব্য বলতে যেকোনো প্রকার দানাদার খাদ্যদ্রব্য যথা- চাল, ধান, গম, আটা, ভুট্টা ইত্যাদিকে বোঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা দরকার, পাস হওয়া এ আইনটি কার্যকর হলে পলিশিং ও কাটিংয়ের মাধ্যমে তৈরি করা মিনিকেট চাল বিক্রি ও সরবরাহ আইনগত অবৈধ হবে। তথ্য মতে, বুধবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করেন খাদ্যমন্ত্রী। এ ছাড়া এর আগে বিরোধী দলের সদস্যদের আনা জনমত যাচাই ও বাছাই কমিটিতে পাঠানোর প্রস্তাব এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়। মূলত ১৯৫৬ সালের ফুড (স্পেশাল কোর্ট) অ্যাক্ট এবং ১৯৭৯ সালের ফুডগ্রেইনস সাপস্নাই (প্রিভেনশন অব প্রিজুডিশিয়াল অ্যাক্টিভিটি) অর্ডিন্যান্স বাতিল করে নতুন এ আইনটি করা হলো। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না, নানাভাবে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ ছাড়া ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না কৃষক- এমন খবরও বিভিন্ন্ন সময়েই সামনে আসে। ফলে খাদ্য মজুত সংক্রান্ত কারণে খাদ্য সংকট তৈরি কিংবা খাদ্য নিরাপত্তা শঙ্কার মুখে পড়লে তা রোধ করার বিকল্প নেই। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনটি পাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনি এটাও জানিয়েছেন, আইনটি কার্যকর হলে খাদ্যদ্রব্য মজুতের সুযোগ থাকবে না। বরং খাদ্য ও খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। আমরা মনে করি, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নে উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে। এ ছাড়া কৃষকরা যেন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকটি আমলে নিতে হবে। কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে, তারা যেন ন্যায্যমূল্য পান সেটিও নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, খাদ্য উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে সরকার প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিয়েছে। ফলে সব পদক্ষেপের সুষ্ঠু বাস্তবায়নও নিশ্চিত করতে হবে। প্রসঙ্গত, খাদ্য সংকট কতটা ভয়াবহ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এর আগে বৈশ্বিক দ্ব›দ্ব, জলবায়ু পরিবর্তন, করোনাভাইরাসের প্রভাব ও ইউক্রেনের যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকটের সৃষ্টি হয়েছিল। সোমালিয়া, আফগানিস্তান, বুরকিনা ফাসো, হাইতি, নাইজেরিয়া, দক্ষিণ সুদান ও ইয়েমেনের মানুষ সবচেয়ে অনাহার এবং মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিল। এ ছাড়া খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশকে। ফলে খাদ্যের নিরাপত্তার বিষয়টি কতটা জরুরি সেটা আমলে নিতে হবে। ব্যবসায়ীরা যদি খাদ্য মজুত করে সংকট তৈরি করে বা খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়ে এমন কিছু করে- সেটা রোধ করতে হবে। সর্বোপরি আমরা বলতে চাই, খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, মজুত, স্থানান্তর, পরিবহণ, সরবরাহ, বিতরণ ও বিপণন (ক্ষতিকর কার্যক্রম প্রতিরোধ) বিল-২০২৩ পাস হয়েছে- এটিকে সামনে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্টদেরই। এ ছাড়া কৃষকের স্বার্থ সংরক্ষণসহ উৎপাদন বৃদ্ধি এবং সামগ্রিকভাবে খাদ্য সংক্রান্ত যে কোনো ধরনের অনিয়ম রোধেও উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।