কাজিরবাজার ডেস্ক :
পবিত্র মাহে রমজানের আজ ১৪তম দিবস। মুমিন মুসলমানদের মর্যাদা বৃদ্ধি, পাপীতাপীদের পাপপঙ্কিলতা থেকে মুক্তির বাণী নিয়ে পবিত্র মাস রমজানের আগমন। যতবড় অপরাধপ্রবণ মানুষই হোক এ মাসে আল্লাহপাকের দরবারে সবিনয় আত্মসমর্পণ ও পূর্ব অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা এবং ভবিষ্যতে একই অপরাধে লিপ্ত না হবার দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কেউ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি এ মাসে সহজেই অপরাধ মার্জনা করেন। এ জন্য প্রয়োজন তওবার। তওবা মানে আল্লাহতায়ালার কাছে অতীতের গুনাহসমূহের ব্যাপারে অনুতপ্ত পূর্বক পাপপঙ্কিলতা মুক্ত থাকার কৃতসংকল্প হওয়া। জেনে-শুনে তওবা করার পর আবার গুনাহে লিপ্ত হওয়া কোন মুমিনের শান নয়। একইভাবে গুনাহ করার পর তওবা বিলম্ব করাও উচিত নয়। কারণ মানুষের মৃত্যুর কোন গ্যারান্টি নেই। যে কোন সময় মৃত্যু এসে আমাদের গ্রাস করতে পারে। তাই মৃত্যুর জন্য তৈরি থাকা এবং সেভাবে সতর্ক জীবন পরিচালনা করা নবীজী হযরত মুহম্মাদ (স.) এঁর সুন্নত। তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি কায়মনোবাক্যে তাওবা করে তার কোন গুনাহ অবশিষ্ট থাকে না। মাহে রমজান সে সুযোগ এনে দিয়েছে পাপতাপ সম্পর্কে অনুতপ্ত হওয়ার এবং গোটা অখ- সময়কে ইবাদতে মশগুল রাখার।
মহানবী (স.) বলেছেন : এ মাসের প্রথম দশ দিন রহমত, ২য় দশ দিন মাগফিরাত এবং ৩য় দশ দিন ইতকুন মিনাননার অর্থাৎ দোজখ থেকে মুক্তির।’ – (মিশকাত) । এখন আমরা মাগফিরাতের বা তওবার দশকের মাঝামাঝি। তাই পরম আত্ম সমালোচনায় সিজদাবনত হতে হবে করুণাময়ের কাছে। একবার হুজুর (স.) মসজিদে দাঁড়িয়ে সাহাবাদের উদ্দেশ করে বললেন, তোমরা মিম্বরের নিকট্ এসো। অতপর তিনি প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে বললেন ‘আমিন’ । এভাবে ২য় , ৩য় সিঁড়িতে পা রেখেও‘ আমিন’ বললেন। ভাষণ শেষে এর কারণ জিজ্ঞেস করা হলে নূর নবী হযরত (স.) ইরশাদ করলেন এই মাত্র জিব্রাইল (আ) এসেছিলেন। আমি যখন ১ম সিঁড়িতে পা রাখি তখন জিব্রাইল (আ) বললেন , ঐ ব্যক্তির ওপর অভিশাপ যে রমজান মাস পেয়েও নিজের গুনাহ মাফ করে নিতে পারেনি। আমি বললাম ‘ধামিন’। অর্থাৎ তাই হোক। ২য় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিব্রাইল বললেন- অভিশাপ ঐ ব্যক্তির ওপর যার সামনে আপনার নাম উচ্চারিত হওয়া সত্ত্বেও সে দরুদ পড়েনি। আমি বললাম ‘আমিন’। তারপর ৩য় সিঁড়িতে পা রাখতেই জিব্রাইল (আ) বললেন, অভিশাপ ঐ ব্যক্তির ওপর যার সামনে মাতা-পিতা উভয় অথবা দু’জনের একজন বার্ধক্যে পৌঁছেছেন কিন্তু সে তার সেবা করে নিজেকে বেহেস্তের যোগ্য করতে পারেনি। উত্তরে আমি বললাম ‘আমিন’। অর্থাৎ তাই যেন হয়…।
উল্লেখ্য, জিব্রাইলের (আ) বদদোয়াই কারো প্রতি আল্লাহর লানত পড়ার জন্য যথেষ্ট। যেখানে আবার মহানবী (স্.) এঁর ‘ আমিন আমিন ’ সম্মতিযুক্ত হয়। তার পরিণতি যে কি হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। সুতরাং, চলুন এই মাসের সদ্ব্যবহার করে আমাদের জীবনকে রাঙ্গিয়ে তুলি। করি সিয়াম সাধনা, কিয়াম সাধনা, তিলাওয়াত-তাহলিল, আরাধনা। এ মাসে বেশি বেশি করে নবী করীম (স.) এর পাক চরণে দরুদ ও সালাম প্রেরণ করব এবং পিতামাতার সেবায় আত্মনিয়োগ করব। আর যাদের পিতামাতা ইন্তেকাল করেছেনÑ এ মাসে মরহুমদের জন্য বেশি বেশি করে মাগফিরাত কামনা করব। বলব, রাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বায়ানি সাগীরা…।