বন্যা মোকাবিলায় প্রস্তুতি রাখা জরুরি

8

 

বাংলাদেশে প্রায় প্রতি বছরই বন্যা হয়। এবারো বন্যার আশঙ্কা করছেন পানি, নদী ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এবার বড় আকারের বন্যা হওয়ার আশঙ্কা আছে। এরই মধ্যে সিলেটে বন্যা দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৮২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ২২৮ সেন্টিমিটার, ধরলা নদীর পানি সদর পয়েন্টে বিপদসীমার ২৯১ সেন্টিমিটার ও দুধকুমার নদীর পানি পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খবরে প্রকাশ, বাংলাদেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকের ভারতের রাজ্যগুলোতে এবার বর্ষায় ভারি বর্ষণের পূর্বাভাস ছিল আগে থেকেই। মেঘালয় ও আসামে সপ্তাহখানেক আগে থেকে ভারি বর্ষণ শুরুও হয়েছে। ইতোমধ্যে আসামের ১১ জেলায় দেখা দিয়েছে বন্যা। উজানের এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়তে পারে বাংলাদেশের ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, বরাক ও সুরমা অববাহিকায়। তিস্তা ও সুরমা নদীর পানি বেড়ে ইতোমধ্যে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রও বলেছে, এ মাসেই দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকের কিছু এলাকা প্লাবিত হতে পারে। দেশের সর্বত্র প্রতিদিন কম-বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এদিকে পানি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুরু হয়েছে নদীভাঙন। হঠাৎ নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় তা নদীর ক‚ল উপচে চরাঞ্চলের নিম্নাঞ্চলে প্রবেশ করছে। এতে ফসলি জমি তলিয়ে যাচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী পাড়ের মানুষের মধ্যে শঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। সেখানকার ঘরবাড়ি পানির নিচে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট। ডায়রিয়াসহ পানিবাহিত রোগের লক্ষণ এখনো দেখা না গেলেও অচিরেই আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নদী খনন ও শুষ্ক মৌসুমে পরিকল্পিতভাবে সংস্কার কাজ না করাসহ ওয়াপদা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির জন্য তাদের এমন অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভোগ বলে মনে করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। বছর বছর ভেঙে যাওয়া নদীতীর রক্ষা বাঁধগুলোর সংস্কার করা কিংবা স্থায়ীভাবে বাঁধের কাজ না করায় তাদের এই চরম খেসারত দিতে হচ্ছে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নদনদীর পানি উপচে বন্যার পদধ্বনি কেবল নয়, এমন পরিস্থিতি আমাদের জন্য দুর্ভাবনার। সামনে ভয়াবহ বন্যার যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা আমলে নিয়েই সরকারের এখন থেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এড়ানো আমাদের সাধ্যাধীন নয়। তবে যথাযথ প্রস্তুতি নিলে মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষয়ক্ষতি নিশ্চয় নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। নদী ভরাট হওয়ার কারণে যেমন বেড়েছে ভাঙন, তেমনি সামান্য ঢলে দুক‚ল উপচে আকস্মিক বন্যা ঘটায়। নদনদীর নাব্য রক্ষা করে একদিকে যেমন বন্যার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তেমনি সম্ভব ভাঙন ঠেকানো। আশা করছি, বন্যার্তদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তা দেয়ার সংস্থান করবে সরকার। বিশুদ্ধ পানি, ওষুধপত্র এবং চিকিৎসাসেবাও প্রস্তুত রাখা দরকার। সরকার ও প্রশাসন এ বিষয়ে সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।